English

34 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
- Advertisement -

একজন ইলিয়াস কাঞ্চন: একটি মহতি উদ্যোগের পথিকৃৎ ও জন্মদিনের শুভেচ্ছা

- Advertisements -

এ কে আজাদ: চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি অতি পরিচিত নাম, সুপরিচিত মুখ। দেশের সর্বস্তরের মানুষ, এই তারকাখ্যাতি সম্পন্ন চিত্রনায়ককে চিনেন, জানেন। ১৯৭৭ সালে মুক্তিপায় খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্ত পরিচালিত বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘বসুন্ধরা’। এই চলচ্চিত্রে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রনায়িকা ববিতা’র বিপরীতে নায়ক হিসেবে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আসেন, আজকের সুবিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ইলিয়াস কাঞ্চন। চলচ্চিত্রে আসার আগে মঞ্চনাটকে অভিনয় করতেন তিনি।

প্রথম ছবি ‘বসুন্ধরা’ থেকে শুরু করে অসংখ্য রোমান্টিক, সামাজিক কিংবা একশ্যান ছবিতে, বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি । হয়েছেন সর্বাধিক জনপ্রিয় চিত্রনায়ক। ছুঁয়েছেন সাফল্যের শীর্ষ স্থান। চলচ্চিত্রশিল্পকে উপহার দিয়েছেন হিট-সুপারহিট সব সিনেমা। ভেসেছেন তুমূল জনপ্রিয়তার শ্রোতে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বাণিজ্যসফল চলচ্চিত্র ‘বেদের মেয়ে জোসনা’র সফল নায়ক তিনি। কোন রকম অশালীন বা বিতর্কিত ছবিতে তাঁকে অভিনয় করতে দেখা যায়নি। একজন ভালো অভিনেতা হিসেবে, সিনেমাদর্শকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছেন। তাঁর অভিনয় প্রতিভা দিয়ে, আমাদের চলচ্চিত্রশিল্পকে করেছেন সমৃদ্ধ।

চলচ্চিত্রে অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন দুইবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। প্রথমবার ১৯৮৬ সালে আলমগীর কবির পরিচালিত ‘পরিণীতা’ ছবিতে ও দ্বিতীয়বার ২০০৪ সালে চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘শাস্তি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য। এছাড়াও বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার’সহ বিভিন্ন সংঠনের পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন বহুবার।

তিনি একজন চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিচালকও। একাধিক ছবি প্রযোজনার পাশাপাশি দু’টি ছবি পরিচালানাও করেছেন।

“সামাজিক বা রাজনৈতিক ‘কমিটমেন্ট’ ছাড়া কোন শিল্পী বা শিল্প পূর্নাঙ্গ হতে পারে না”- এই নীতিকে অনুসরণ করে, সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে, বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে একমাত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনই, একটি সুনির্দিষ্ট সামাজিক প্রত্যয় নিয়ে নিরলস কাজ করে চলেছেন। চলচ্চিত্রজগতে তাঁর তারকা ইমেজ, আকাশস্পর্শী বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার- এসবকে তুচ্ছ করে, তিনি নেমে পড়েন সড়কে। ১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর, তাঁর স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। নিজের স্ত্রী’র জীবন যে অপঘাতে, সড়কের অনিয়মে নিভে গেল, সেই সড়কের মড়ক থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতেই, স্ত্রী বিয়োগের শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে, নেমে পড়লেন ‘নিরাপদ সড়কের’ আন্দোলনে।
নিছক দুুর্ঘটনা বা নিয়তি বলে যে মর্মান্তিক বিষয়টিকে আমরা কেউই ধর্তব্যের মধ্যেই নিতাম না! সেই বিষয়টিকে অত্যান্ত গুরুত্বসহকারে অনুধাবন করেছেন একমাত্র চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনই।


এ দেশের সড়ক পথে নিয়ম না মানার ব্যাধির বিরুদ্ধে, মানুষের সচেতনতা গড়ে তুলতে, সড়কের অপঘাত থেকে সাধারণ মানুষকে উদ্ধারের প্রচেষ্টায়, তিনি গঠন করেন “নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)” নামে একটি সেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন।

দীর্ঘ সময়ধরে এ আন্দোলনকে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার নিমিত্তে, নিজের উপার্জিত অর্থ, শ্রম, মেধা ও সময় ব্যয় করেছেন নিঃস্বার্থভাবে। দিনরাত এক করে নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়ে, হাজার হাজার মাইল চষে বেড়িয়েছেন প্রাণ রক্ষার একটি আন্দোলন নিয়ে- “নিরাপদ সড়ক চাই”। তাঁর উপার্জিত অর্থ, তাঁর ব্রত, তাঁর সুখ-দুখ, তাঁর স্বপ্ন-সাধনা, তাঁর ত্যাগ, তাঁর মেধা ও শ্রম সবই বিনিয়োগ করেছেন তিনি, বাংলাদেশের সড়কপথ নিরাপদ করতে। সারা বাংলাদেশের জেলা-উপজেলা, এমন কি ইউনিয়ন পর্যায়েও রয়েছে “নিরাপদ সড়ক চাই” সংগঠনটির শাখা। দীর্ঘ ২৯ বছরধরে, প্রায় ১২০ টি শাখাসংগঠনের মাধ্যমে তাঁর নেতৃত্বাধীন “নিরাপদ সড়ক চাই” সংগঠনটি সারা বাংলাদেশে জনমানুষের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।

চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন-এর মস্তিষ্কপ্রসূত “নিরাপদ সড়ক চাই” আন্দোলন বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে, আজ আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও একটি ঐতিহাসিক সামাজিক আন্দোলনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর যৌক্তিক দাবীর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে প্রতি বছর ২২ অক্টোবর সরকারিভাবে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ পালিত হচ্ছে।

চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, যিনি প্রায় চার দশক ধরে উজ্জ্বল করে রেখেছিলেন বাংলা সিনেমার রূপালী পর্দা। সিনেমা হলে যার অভিনয় দেখে শত-সহস্র করতালিতে মুখরিত হতো দর্শকবৃন্দ। যিনি ছিলেন জৌলুসময় আরামদায়ক জীবন-জাপনে অভ্যস্ত, বাস্তব জীবনে তিনিই- বছরের পর বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন নিরাপদ সড়কের জন্য, একজন সড়ক সারথী হয়ে, সড়কে শান্তির দূত হয়ে।

ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনারোধে ও দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ণে ভূমিকা রাখা এবং বেকারত্ব নিরসনে শিক্ষিত গাড়ি চালক তৈরি করে সামাজিক নিরাপত্তায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে, বাংলাদেশ সরকার দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘একুশে পদক’-এ ভূষিত করে নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনকে। চলচ্চিত্র তথা শিল্প-সংস্কৃতিব্যক্তিত্বদের মধ্যে সমাজ সেবায় ‘একুশে পদক’ প্রাপ্ত প্রথম ব্যক্তি তিনিই।

চলচ্চিত্রের রূপালী পর্দার সুপার স্টার নায়ক থেকে, হয়েছেন বাস্তবের নায়ক। কোটি মানুষের হৃদয়ের মহানায়ক। ইলিয়াস কাঞ্চন একটি নাম, একটি আন্দোলন, একটি প্রতিষ্ঠান, একটি ইতিহাস, তরুন প্রজন্মের “আইকন”।

ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত সত, ন্যায়পরায়ণ, ধার্মিক ও এক মহৎপ্রাণ মানুষ তিনি।

আজ ২৪ ডিসেম্বর, এই মহৎপ্রাণ মানুষটির জন্মদিন। আমাদের দেশের পারফর্মিং মিডিয়ার অত্যন্ত সফল ও গুণীমুখ, দেশবরেণ্য ও জননন্দিত সামাজিক দায়িত্তবোধসম্পন্ন তারকা-অভিনেতা, দেশবাসীর অন্যতম প্রাণের দাবী সড়ককে নিরাপদ করার সামাজিক আন্দোলনের পথিকৃত ব্যক্তিত্ব, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনের শুভ জন্মদিনে, তাঁকে অন্তহীন শুভেচ্ছা।

হ্যাপী বার্থ ডে টু ইউ। শুভ হোক ইলিয়াস কাঞ্চন আপনার জন্মদিন। জীবনের প্রতিটি দিন হোক- মহান বিজয়ের আনন্দের সমন্বয়ে আনন্দময় এবং সাফল্যময়।

সামাজিক দায়িত্তবোধসম্পন্ন তারকা-অভিনেতা ও সামাজিক আন্দোলনের নেতা হিসাবে এবং মানুষের কল্যাণে আপনার নিজের এই অবস্থান আগামীতেও অব্যাহত থাকবে- সেই বিশ্বাস আমরা রাখতে পারি। আপনার সৃজনী নৈপুণ্যের মাধ্যমে আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাবে আমাদের আগামী দিনের অভিনয় মাধ্যম তথা সামগ্রীকভাবে চলচ্চিত্রশিল্প ।

আগামীতে নতুন প্রজন্মকে সৃজনশীল সামাজিক দায়িত্তবোধসম্পন্ন তারকা-অভিনেতা ও সামাজিক আন্দোলনের নেতা-কর্মী হিসাবে গড়ে তুলতে ইলিয়াস কাঞ্চন হবেন নিরন্তর অনুপ্রেরণার উৎস।
আর এসবের জন্যই সামাজিক দায়িত্তবোধসম্পন্ন তারকা-অভিনেতা ও সামাজিক আন্দোলনের নেতা হিসাবে সুস্থশরীরে দীর্ঘজীবী হউন, শ্রদ্ধাভাজন সুপ্রিয়জন ইলিয়াস কাঞ্চন- আপনার জন্মদিনে আজ এই প্রার্থণা করছি।

-চলচ্চিত্রসংসদকর্মী, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন