দেশে শিল্পায়ন ক্রমেই গতি পাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে শিল্পাঞ্চলভিত্তিক কলকারখানা যেমন গড়ে উঠছে, তেমনি ব্যক্তি উদ্যোগেও সারা দেশে যত্রতত্র বা বিচ্ছিন্নভাবে শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে। বেশির ভাগ কলকারখানায়ই বর্জ্য শোধনের ব্যবস্থা নেই। আবার যেগুলোতে পরিশোধনাগার আছে, সেগুলোও খরচ কমানোর জন্য তা বন্ধ রাখে।
ফলে কলকারখানার বর্জ্য মানুষ, প্রাণী, প্রকৃতি ও চাষাবাদের ক্ষতি করে। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কুমিল্লা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত তরল বর্জ্যের কারণে আশপাশের ৭১টি গ্রামের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। খাল-বিল, পুকুর-ডোবা ও নদীর পানিতেও গিয়ে মিশছে এই তরল বর্জ্য। ফলে খাল-বিলে মাছ প্রায় নেই বললেই চলে। কৃষকরা আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা প্রশাসনের কাছে এর প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন।
কলকারখানার পরিবেশদূষণ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত খবর থাকছে। বিভিন্ন এলাকায় গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হচ্ছে এই দূষণ। পরিবেশ ছাড়পত্র পাওয়ার জন্য কিছু শিল্পাঞ্চল বা বড় কারখানায় বর্জ্য পরিশোধন ব্যবস্থা বা ইটিপি স্থাপন করা হলেও খরচ বাঁচাতে সেগুলো চালানো হয় না। এসব কারখানার তরল বর্জ্য নদী, খাল-বিল বা নিচু জমিতে ছড়িয়ে পড়ে। পরিবেশ অধিদপ্তর বিশেষ কারণে সেসব দেখতে পায় না। অভিযোগ আছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন পরিদর্শনে যাওয়ার আগেই কারখানাগুলো জেনে যায় এবং তখনই শুধু ইটিপিগুলো চালু হয়। জানা যায়, কুমিল্লার ইপিজেডেও কেন্দ্রীয়ভাবে বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা রয়েছে। কুমিল্লা ইপিজেডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জানিয়েছেন, টেকনিক্যাল কারণে মাঝেমধ্যে শোধনাগারে ঝামেলা হয়। তা না হলে ২৪ ঘণ্টাই শোধনাগার চালু থাকে। কিন্তু আলামত বলে, শিল্পাঞ্চল থেকে অপরিশোধিত বর্জ্যই প্রকৃতিতে গিয়ে মিশছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, দূষণের কারণে ওই এলাকার খাল-বিল থেকে মাছ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের কুমিল্লা জোনের উপপরিচালক জানান, ইপিজেডের তরল বর্জ্যের কারণে খালের পানিতে গন্ধ পাওয়া গেছে। পরীক্ষা করেও এর সত্যতা মিলেছে।
‘কুমিল্লা জেলা কৃষক সমবায়ী ঐক্য পরিষদের’ নেতারা ইপিজেডের তরল বর্জ্যে তাঁদের কৃষিজমি, খাল-বিল দূষিত হওয়ার প্রতিবাদে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কৃষক নেতারা ছাড়াও বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা), পরিবেশ অধিদপ্তর, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সংগঠনটির নেতারা দাবি করেন, দূষিত তরল বর্জ্যের কারণে ৭১টি গ্রামের কৃষকদের অন্তত ৫৯০ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তাঁরা এ জন্য ইপিজেড কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
কুমিল্লা ইপিজেডের পরিবেশদূষণ দ্রুত বন্ধ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি কৃষকদের ক্ষতিপূরণের দাবি বিবেচনা করতে হবে। একইভাবে সারা দেশে কলকারখানার পরিবেশদূষণ রোধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।