English

24 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
- Advertisement -

শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম পুরোধাব্যক্তিত্ব আলী মনসুর-এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -

আজাদ আবুল কাশেম: আলী মনসুর অভিনেতা, কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার, গীতিকার, আবৃত্তিকার, প্রযোজক ও পরিচালক। এদেশের প্রথম সবাক বাংলা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর অভিনেতা। আমাদের দেশের নাট্যাঙ্গন-চলচ্চিত্র তথা শিল্প-সংস্কৃতিতে রেখে গেছেন বিশেষ অবদান। দেশের শিল্প-সংস্কৃতির অন্যতম পুরোধাব্যক্তিত্ব আলী মনসুর-এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০০২ সালের ৪ নভেম্বর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। প্রয়াত এই গুণিজনের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

আলী মনসুর ১৯২৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলায়, জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম মোঃ খোরশেদ আলী, তাঁর মায়ের নাম আঞ্জুমান আরা বেগম। চার ভাই, তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তাঁর ছোট ভাই আলী কওসার একজন অভিনেতা ও চিত্রপরিচালক। তাঁর স্ত্রী রাফিয়া মনসুর ছিলেন বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী ও নৃত্যপরিচালক।

আলী মনসুর ১৯৪২ সালে, কলকাতা সিটি কলেজ থেকে বি.কম পাস করেন। কলকাতা আশুতোষ কলেজে পড়ার সময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। ১৯৪৩ সালে তাঁর লেখা নাটক ‘পোড়োবাড়ী’, প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক কে ডি বাবু’র পরিচালনায় ‘রঙমহলে’ মঞ্চস্থ হয়। এই নাটকের গানে কন্ঠ দিয়ে ছিলেন হেমন্ত মুখার্জী।

আলী মনসুর দেশ বিভাগের পর ঢাকায় চলে আসেন। এখানে এসে তিনি ঢাকা বেতারের নাট্য শিল্পী, অনুষ্ঠান ঘোষক এবং সংবাদ পাঠক হিসেবে যোগ দেন। পাশাপাশি তিনি মঞ্চনাটকের সাথে জড়িত থাকেন। ঢাকায় তিনি ‘কৃষ্টি সংঘ’ নামে একটি নাট্যসংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন । এই নাট্য সংগঠনে তখনকার অনেক নামি-দামি অভিনেতারা ছিলেন। তাদের মধ্যে- কাজী খালেক, ফতেহ লোহানী, ভবেস মুখার্জী, মালিক মনসুর ও আলী কওসার অন্যতম।

আলী মনসুর, নাটক রচনা-পরিচালনা ও নাটকে অভিনয়ও করতেন। সেই সময়ে তিনি, নাট্যকার-অভিনেতা ও নাট্যপরিচালক হিসেবে সূধীসমাজে সুপরিচিত ও খ্যাতিমান ছিলেন। তাঁর রচিত নাটক গুলোর মধ্যে- পোড়োবাড়ী, কাশ্মীরী জাফরান, আমীর আকরাম, বোবা মানুষ, শেষ রাতের তারা, দুর্নিবার, হায়দার আলী, রাজদ্রোহী, ফিরে চল আপন ঘরে, কালো দিঘীর গাঁ এবং নিশি হলো ভোর, অন্যতম।

আলী মনসুর, বাংলাদেশের প্রথম সবাক বাংলা পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ অভিনয় করেন। আবদুল জব্বার খান পরিচালিত, ১৯৫৬ সালের ৩ আগস্ট মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মুখ ও মুখোশ’ ছবিতে তিনি একজন পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় অভিনয় করেন। গাজী কালু চম্পাবতী, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, রাজাসন্যাসী, ভাই বোন, অনেক প্রেম অনেক জ্বালা, ভুল যখন ভাঙ্গলো’সহ তিনি আরো প্রায় অর্ধশতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন আলী মনসুর। ‘মহুয়া’ ও ‘জানাজানি’ নামের এই ছবি দুটি প্রযোজনা ও পরিচালনা করেন তিনি।
তিনি যেসব ছবির কাহিনী, সংলাপ এবং চিত্রনাট্য রচনা করেছেন সেগুলো হলো- আমির সওদাগর ও ভেলুয়াসুন্দরী, মহুয়া, জানাজানি, বধু মাতা কন্যা, ভাইবোন, রাজাসন্যাসী, গাঁয়ের বধূ, প্রভৃতি।

দেশের শিল্প-সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে, আলী মনসুর পুরস্কৃতও হয়েছেন। তদানীন্তন পাকিস্তান আমলে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকার হিসেবে নিগার অ্যাওয়ার্ড, নাট্যকার হিসেবে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং একুশে পদক লাভ করেছেন তিনি।

চলচ্চিত্র-নাট্যাঙ্গন তথা এদেশের শিল্প-সংস্কৃতির একজন পুরোধাব্যক্তিত্ব ছিলেন আলী মনসুর। বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি তথা চলচ্চিত্র ইতিহাসে গুণি এই মানুষটি, অবশ্য-অবশ্যই স্মরণযোগ্য।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন