রাজশাহীতে তাপমাত্রার পারদ কেবল ওপরের দিকেই উঠছে! গত ২০ এপ্রিল রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি ছিল চলতি মৌসুমের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। কিন্তু আজও সেই একই তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে।
রবিবার বিকাল সাড়ে ৪টায় রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে তীব্র দাবদাহের দাপটে পুরোনো রেকর্ড কেবল ভাঙতে চাইছে। আর আকাশ থেকে যেন আগুন নামছে। যেই আগুনে পুড়ছে উত্তরের শহর রাজশাহী।
প্রতিদিন সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত একই মাত্রায় তাপ নামছে। প্রখর রোদে শুকনো মাটি ফেটে চৌঁচির হয়ে যাচ্ছে। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তির ছিটে ফোঁটা নেই। সূর্য পশ্চিমে হেললেই প্রকৃতি যেন তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়তে শুরু করে। দিনভর দাবদাহ আর রাতে গুমোট আবহাওয়ায় সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। ঘরে মাথার ওপর থাকা বৈদ্যুতিক পাখাটাও দিচ্ছে গরম বাতাস। ঘুম আসছে না চোখে।
আর দুপুর গড়াতেই খাঁ খাঁ করছে পথ-ঘাট। ভবনের ট্যাপ দিয়ে বের হচ্ছে গরম পানি। তেঁতে উঠেছে প্রতিটি আসবাবপত্রও। সব মিলিয়ে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিরাও গরমে হাঁসফাঁস করছে। হাফ ছেড়ে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য হাহাকার পড়ে গেছে।
রাজশাহীর ওপর দিয়ে গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় থেকে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল। এরপর মৃদু তাপপ্রবাহ রূপ নেয় মাঝারিতে। সর্বশেষ মাঝারি তাপপ্রবাহ তীব্র তাপপ্রবাহে পরিণত হয়। রাজশাহীর তাপমাত্রার পারদ ওঠে ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে!
গত ২১ এপ্রিল সন্ধ্যায় কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা মেলে। কিন্তু বৃষ্টির পরিমাণ ছিল খুবই কম। তাই অল্পবৃষ্টিতে তুষ্ট হতে পারেনি রাজশাহীর বৃষ্টি পিপাসু মানুষ ও বিবর্ণ হয়ে যাওয়া তামাটে প্রকৃতি। ওই দিন সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে বৃষ্টি শুরু হয়। রাত ৮টা পর্যন্ত রাজশাহীতে মাত্র ৫ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এরপর থেকে আবারও তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। বর্তমানে রাজশাহীর ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
ফলে অবর্ণনীয় গরমে জনজীবন ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা প্রচণ্ড গরমে কাহিল হয়ে পড়েছে। অব্যাহত তাপমাত্রায় ঘরে-ঘরে এই করোনার উচ্চ সংক্রমণের মধ্যে নতুন করে ডায়রিয়া, জ্বর, সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এসব রোগে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের দুর্ভোগ বেড়েছে এ তীব্র গরমে।
আগুনমুখো আবহাওয়ার কারণে দুপুরের পর কর্মজীবী মানুষ ছাড়া কেউই জরুরি কাজ ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না। একটু সুশীতল ছায়ার জন্য মহানগরবাসী যেন উন্মুখ হয়ে উঠেছে। কিন্তু কোথাও প্রশান্তি নেই। এবার চলতি মৌসুমের তাপ প্রবাহে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যাবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, রবিবার দুপুর ৩টায় রাজশাহী মহানগরীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর বিকাল সাড়ে ৪টায় সেই তাপমাত্রা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আজ-কালের মধ্যে ভারি বৃষ্টিপাত না হলে এ পরিস্থিতির উন্নতি বা তাপমাত্রা প্রশমিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও জানান এই আবহাওয়া কর্মকর্তা।
রাজশাহী আবহাওয়া অধিদফতরের ইনচার্জ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়া কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন বলেন, রাজশাহীর ওপর দিয়ে চলমান মাঝারি তাপপ্রবাহ আবারও তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। এ ধরনের তীব্র তাপদাহ আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে।