English

37 C
Dhaka
বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪
- Advertisement -

চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মসজিদ-মন্দিরে এক সঙ্গেই চলে প্রার্থনা

- Advertisements -
Advertisements
Advertisements

মসজিদ-মন্দিরে সম্প্রীতির বন্ধন হাটহাজারী মাদ্রাসাতে এক সঙ্গেই প্রার্থনা চলে হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা এবং শ্রী শ্রী সীতাকালী মন্দিরে ঘড়ির কাঁটা সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা ছুঁই ছুঁই। মাদ্রাসা মসজিদে চলছিল মুয়াজ্জিনের আজানের প্রস্তুতি। ঠিক একই সময় এর লাগোয়া মন্দিরের পুরোহিতও ব্যস্ত ছিলেন পূজার প্রস্তুতি নিয়ে। মুয়াজ্জিন-পুরোহিত একই জায়গায় একই সময় ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের আরাধনার প্রস্তুতি নিলেও কেউ কারও প্রার্থনার ব্যাঘাত ঘটান না কখনো। দুই তরফ থেকেই সচেতন দৃষ্টি রাখা হয়-যেন অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রার্থনায় কোনো ব্যাঘাত না ঘটে। এ কারণে হাটহাজারী সদরে অবস্থিত কওমিদের শীর্ষ মাদ্রাসা ‘দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা’ এবং ‘শ্রী শ্রী সীতাকালী মন্দির’ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যা যুগ যুগ ধরে দেখে আসছেন স্থানীয় লোকজন। হাটহাজারী মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী নিরাপদ নিউজকে বলেন, হাটহাজারী মাদ্রাসা অন্য ধর্মের অনুসারীদের সব সময় সম্মান করে। শত বছরের অধিক সময় ধরে ভিন্ন ধর্মের দুটি প্রতিষ্ঠান পাশাপাশি থেকে যার যার মতো করে ধর্মীয় রীতি পালন করছে। এটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অসাধারণ একটি উদারহরণ।
শ্রী শ্রী সীতাকালী মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক উদয় সেন নিরাপদ নিউজকে বলেন, হাটহাজারী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সব সময় মন্দিরের ব্যাপারে আন্তরিক। তারা কখনো আমাদের ধর্মের কাজে ডিস্টার্ব করেন না। আমরাও চেষ্টা করি, যাতে আমাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তাদের কোনো ক্ষতি না হয়। শত বছর ধরে হিন্দু-মুসলিম যার যার অবস্থানে থেকে শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন।

হাটহাজারী সদর বাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ মাদ্রাসা। এর ক্যাম্পাসে রয়েছে একাধিক মসজিদ ও দেশের আলোচিত সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। শত বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এ মাদ্রাসার সীমানা দেয়ালের সঙ্গে গড়ে উঠেছে সনাতন ধর্মের কালীমন্দির। একশ বছরেরও আগে কয়েকজন জমিদার শ্রী শ্রী সীতাকালী নামে এ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে দুই ধর্মের অনুসারীরা সহঅবস্থানে থেকে যার যার মতো করে ধর্মীর আচার-অনুষ্ঠান পালন করছেন। দীর্ঘ এ সময়ের মধ্যে এ নিয়ে কারও মধ্যে কোনো বৈরী অবস্থা তৈরি হয়নি। বাবরি মসজিদ ভাঙা, কিংবা গুজরাটের দাঙার রেশ, কিংবা হালে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলেও এখানে ছিল ব্যতিক্রমী চিত্র। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময়ও একে-অপরের ওপর হামলা তো দূরে থাক, উল্টো মাদ্রাসা ছাত্ররা পাহারা দিয়ে মন্দিরকে রক্ষা করেছেন। এসব কারণেই হাটহাজারী মাদ্রাসা এবং মন্দিরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন সচেতন সবাই। প্রায় দুই যুগ ধরে সীতাকালী মন্দিরে পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করছেন ভানু প্রসাদ ভট্টাচার্য। তিনি প্রতিবেশী অন্য ধর্মের অনুসারীদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। হাটহাজারী মাদ্রাসা ও সীতাকালী মন্দিরের পাশাপাশি অবস্থানের বিষয়ে নিরাপদ নিউজকে তিনি বলেন, প্রায় এক যুগ ধরে এ মন্দিরের সেবা করছি। কখনো হাটহাজারী মাদ্রাসার কেউ কিংবা আশপাশের কোনো মুসলমান আমাদের প্রার্থনার সময় ডিস্টার্ব করেননি। বরং তারা সব সময় আমাদের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বসুলভ আচরণ করেছেন। মন্দির ও মাদ্রাসা পাশাপাশি অবস্থান করাটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তিন যুগের অধিক সময় ধরে হাটহাজারীতে সাংবাদিকতা করছেন কেশব কুমার বড়ুয়া। তিনি নিরাপদ নিউজকে বলেন, হাটহাজারী মাদ্রাসা ও মন্দিরের অবস্থান পাশাপাশি হলেও কখনো হামলা কিংবা ঢিল ছোড়া-ছুড়ির মতো ঘটনাও ঘটেনি। বরং সব সময় তাদের মধ্যে সহযোগিতামূলক আচরণ দেখেছি। যা এক কথায়- অনন্য।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব ও হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী নিরাপদ নিউজকে বলেন, কওমি আলেমরা অন্য ধর্মের প্রতি সহানুভূতিশীল- তার জ্বলন্ত উদাহরণ হাটহাজারী মাদ্রাসা ও মন্দিরের পাশাপাশি অবস্থান। দারুল উলুম হাটহাজারী মাদ্রাসার মুখপত্র মাসিক মঈনুল ইসলাম পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা মুনির আহমদ নিরাপদ নিউজকে বলেন, এশিয়ার সর্ববৃহৎ ও প্রাচীন ইসলাম শিক্ষাকেন্দ্র হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রধান জামে মসজিদের মাত্র ৫ গজের মধ্যেই হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্রী শ্রী সীতাকালী মায়ের মন্দির। মসজিদ-মন্দিরের পাশাপাশি এই প্রতিচ্ছবিটিই বলে দেয়- বাংলাদেশের মুসলমানরা কতটা সুন্দর সহনশীল জাতি এবং কত বেশি উদার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে চলেন। হাটহাজারী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ১১৭ বছরে হিন্দু সম্প্রদায় ও জামিয়ার ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার ইতিহাস নেই। মন্দিরকে ঘিরে হিন্দুদের অনেক দোকানপাট আছে। মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা সেসব দোকানপাট থেকেই নিত্য বাজার-সদাই করে থাকেন।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন