English

33 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
- Advertisement -

চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ লিংক রোড টিকটক তারকাদের তীর্থ স্থানে পরিণত

- Advertisements -
Advertisements
Advertisements

টিকটক বলতেই ফুটে ওঠে তরুণদের চিরচেনা ভাবমূর্তি। এ টিকটকে আসক্ত হয়ে তরুণরা হয়ে ওঠছে নেশাগ্রস্ত। তরুণদের মনের এ তৃপ্তি মেটাতে তারা বেঁছে নিয়েছে নানা বিনোদন কেন্দ্র থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের অলৌকিক স্থানগুলোকে। তবে তরুণদের এমন নেশায় জীবনের ঝুঁকি রয়েছেন বলে মনে করেছেন সচেতন মহল।
এ দিকে তরুণরা তাদের টিকটক ভিডিও বানাতে বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত করেছে নগরীর বায়েজিদ লিংক রোডকে। এ বিনোদন কেন্দ্রে কেউ আসছেন পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়াতে কেউ বা বন্ধু মহল নিয়ে। তবে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটিয়ে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে অল্প বয়সী ছেলে-মেয়েরা বানাচ্ছে টিকটক ভিডিও। এতে জীবন নাশের আশঙ্কায় ভুগছেন পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা পর্যটকসহ স্থানীয়রা।
পাহাড়ঘেরা নগরীর বায়জিদ লিংক রোড চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার পর থেকে এটি পরিণত হয়েছে বিনোদন কেন্দ্রে। রাস্তার দু’পাশে খাড়া পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখতে নগরীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভীড় করছেন এ রাস্তায়।
অল্প বয়সী ছেলে-মেয়েরা হৈ-হুল্লোড় করে এ রাস্তায় শুয়ে বসে বানাচ্ছে টিকটিক ভিডিও। কেউ বা করছে ফটোগ্রাফি। অনেকে প্রাইভেট কার বা সিএনজি নিয়ে আসছেন স্ব-পরিবারে বেড়াতে। গাড়িগুলো পার্কিং করা হচ্ছে রাস্তা ঘেঁষে। এতে করে সাধারণ যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে।
দেখা যায়, রাস্তায় শুয়ে বসে অল্প বয়সী ছেলে-মেয়েরা করছে টিকটক ভিডিও। এ যেন এক সিনেমা পাড়ার দৃশ্য। রাস্তায় চলছে বাস ট্রাক সহ ভারি যানবাহন। যেকোন মুহুর্তে যে কেউ পিষ্ট হতে পারে এ সকল ভারি যানবাহনে। ভ্রুক্ষেপহীনভাবে অশ্লীল ভঙ্গিমাতে তারা তাদের ভিডিও বানানোর কাজ করে চলেছে।
তরুণ বাইকাররা বেপরোয়া গতিতে মোটরবাইক নিয়ে ছুটাছুটি করছে। বাইকগুলো চলছে সাপের মত করে, কখনও বামে আবার কাখনও ডানে। নির্মাণাধীন রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ছোট ছোট নুড়ি পাথর ও বালিতে যেকোন মুহুর্তে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
এমন বিপদজনক রাস্তায় বেড়াতে আসছেন অনেকে স্ব-পরিবার নিয়ে। রাস্তার পাশে সারিসারি গাড়ি রাখা আছে, যা বড় যানবাহনের চলাচলে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরতে আসা ছেলে-মেয়েদের বেপরোয়া আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় যুবক মনসুর আলী বলেন, টিকটিক করতে আসা ছেলে-মেয়েদের অঙ্গ-ভঙ্গিমা খুব অশ্লিল। আমাদের ছোট ভাই বোনেরা তাদের এসব অঙ্গ-ভঙ্গিমাগুলো দেখে ঘরে চর্চা করছে। মাঝে মাঝে আমাদের ফসলি জমিতে ও টিকটক করতে নেমে পড়ে। যার কারণে নষ্ট হচ্ছে ফসল। কিছু বলতে গেলে হেডাম দেখিয়ে মারতে আসে। রাস্তায় মাঝে মাঝে গাড়ি থেমে থাকে তাদের শুটিংয়ের জন্য। তাদের এমন বেপরোয়া চলাফেরায় যে কোন মুহুর্তে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
ওই সড়কে চলাচলকারী পণ্যবাহী ট্রাক ড্রাইভার রফিক বলেন, সপ্তাহে ২/৩ বার এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করি। এ রাস্তায় সবসময় এমন মানুষের ভীড়ের কারণে গাড়ি চালাতে কষ্ট হয়ে যায়। ছেলে-মেয়েরা তো রাস্তায় গড়াগড়ি করে মোবাইলে কি যেন করে, তাদের জন্য বেশি ভয় হয়। গাড়ির গতি বেশি থাকলে গাড়ি দাঁড় করিয়ে গালিগালাজ করে। শিক্ষিত ঘরের ছেলে-মেয়েদের থেকে এমন ব্যবহার আসা করা যায় না।

টিকটক করতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, টিকটক করি মনের শান্তির জন্য। এইটা একটা প্রতিভা যা সবার মধ্যে নেই। টিকটক ও লাইকি তে আমার প্রায় ষাট হাজার ফলোয়ার আছে। তাদের বিনোদনের জন্য আমি এসব করি। টিকটক করে অল্প কিছু টাকা ও ইনকাম হয়।
রাস্তায় গড়াগড়ি করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পপুলারিটি পাওয়া অত সহজ বিষয় না। পপুলারিটি পেতে গেলে পুকুরে ও ঝাঁপ দিতে হবে। গাড়ি কম আসে তাই রাস্তায় শুয়ে বসে ভিডিও বানাচ্ছি।
সিডিএ জানায়, ফৌজদারহাট থেকে রড ও স্টিল আনা নেয়ার জন্য প্রতিদিন অসংখ্য লরি নগরীর ভেতর দিয়ে নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায় যাতায়াত করে। রডবাহী বিশাল বিশাল গাড়িগুলো জাকির হোসেন রোডে যে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি করে তা পুরো এলাকার যানবাহন চলাচলে প্রভাব পড়ে। এ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে পারে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বাইপাস সড়ক। এছাড়াও ব্যক্তিগত যানবাহনের পাশাপাশি বাড়ছে বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, কন্টেনার মোভারসহ বিভিন্ন ধরনের গাড়ি চলাচল করে এ সড়ক দিয়ে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো খোলে দেওয়া হয়নি এ লিংক রোডটি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফৌজদারহাট থেকে বায়েজিদ পর্যন্ত সড়কটি নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। ৩৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই সময় গৃহীত প্রকল্পটি ১৯৯৯ সালে একনেকে পাশ হয়। এরপর ২০০৪ সালে ৫৫ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ফৌজদার হাট থেকে কাজ শুরু হয়। নির্মিত হয় ব্রিজসহ নানা স্থাপনা। ১৭২ কোটি ৪৯ লাখ ৩২ হাজার টাকায় নির্ধারণ করা হয়। আগের কাজগুলো পরিত্যক্ত হয়। প্রকল্প ব্যয় উন্নীত হয় ৩২০ কোটি টাকায়।
৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তার জন্য ৯১৯.৭৮ কাঠা জমি অধিগ্রহণ করা হয়। একটি রেলওয়ে ওভার ব্রিজ নির্মাণসহ ৬টি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। কয়েকটি কালভার্টও রয়েছে। পাহাড়ের ভেতর দিয়ে পাহাড়ের ক্ষতি না করেই রাস্তাটি নির্মাণ করা হচ্ছে। পাহাড়ে যাতে পানি জমে সড়কের ক্ষতি কিংবা পাহাড় ধসের মতো অঘটন না ঘটে সেজন্য পর্যাপ্ত প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। যদিও বেশ কিছু জাগায় পাহাড় কাটায় পরিবেশ অধিদপ্তর সিডিএকে বিপুল অঙ্কের জরিমানাও করেছিল।
এ ব্যাপারে সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক নির্বাহী প্রকৌশলী রাজীব দাস বলেন, এমন উশৃংখল চলাফেরার কারণে বড় দুর্ঘটনা হতে পারে। যারা এসকল কর্মকাণ্ড করতে চাই, তাদের বাধা দেওয়ার জন্য আমরা সিকিউরিটি নিয়োগ দিয়েছি। আমাদের প্রকল্প কাজ এখনও চলমান আছে। আমরা সতর্কতামূলক সাইনবোর্ডের ব্যবস্থা করেছি।
এসড়কটি চট্টগ্রাম মহানগরীর বায়েজিদ ও আকবর শাহ থানার পাশাপাশি জেলার সীতাকুণ্ড থানায়ও পড়েছে। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, বিষয়টি দেখছি। যদি সেখানে কেউ জনসাধারণের সমস্যা সৃষ্টি করে তাহলে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন মোল্লা বলেন, কোথায় টিকটক হয় তা আমার জানা নেই। আইন বহির্ভূত কোন কাজ হলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিব।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন