English

26.6 C
Dhaka
মঙ্গলবার, জুলাই ১, ২০২৫
- Advertisement -

অবিলম্বে ক্রেতাদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিন: গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালি

- Advertisements -

সরকার বদলায়, সময় গড়িয়ে যায়, কিন্তু গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা ও খামখেয়ালি শেষ হয় না। ১৯৯৭ সালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ (সে সময়ে এর নাম ছিল গৃহসংস্থান অধিদপ্তর) মোহাম্মদপুরের এফ ব্লকে প্লট বিক্রির বিজ্ঞপ্তি দেয়। মোট জমির পরিমাণ ছিল সাত একর এবং এসব প্লটের আকার ছিল আড়াই কাঠা, দুই কাঠা ও পৌনে দুই কাঠা। এ বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ হাজার মানুষ প্লট কেনার জন্য আবেদন করেন। তারপর কর্তৃপক্ষ অধিক লোককে আবাসিক সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্লটের চিন্তা বাদ দিয়ে আবেদনকারীদের ফ্ল্যাট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং ৯০০ ফ্ল্যাট তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করে। তাদের এ সিদ্ধান্তে কোনো ভুল ছিল না।
কিন্তু গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ে বরাদ্দ প্রাপকদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে পারেনি, অথচ দফায় দফায় ফ্ল্যাটের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ২০০৬ সালে বলা হয়েছিল, ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের জন্য ১৬ লাখ ৩১ হাজার এবং ১ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটের জন্য ১৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকা দিতে হবে। ২০০৯ সালে দাম বাড়িয়ে করা হলো যথাক্রমে ২৯ লাখ ৮০ হাজার এবং ৩৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। তাতেও বরাদ্দপ্রাপ্তরা যথারীতি কিস্তির টাকা জমা দিয়েছেন। এরপর গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালে আরেক দফা দাম বাড়িয়ে দেয়। নতুন করে দাম ধার্য করা হয় ৮০০ বর্গফুট ফ্ল্যাটের জন্য ৫২ লাখ ৩৬ হাজার এবং ১ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটের জন্য ৬১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এভাবে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ দাতা-গ্রহীতার মধ্যকার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। ফ্ল্যাটমালিকেরা শর্ত লঙ্ঘন করেননি, করেছে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। তারপরও কেন ফ্ল্যাটমালিকদের কাফফারা দিতে হবে?
প্রকল্প হাতে নেওয়ার ২২ বছর পরও গ্রাহকদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে না দেওয়ার কী যুক্তি থাকতে পারে, তা বোধগম্য নয়। চুক্তি অনুযায়ী বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা মোট দামের অর্ধেক টাকা চার কিস্তিতে পরিশোধ করেছেন ফ্ল্যাটে ওঠার আগেই। অন্যদিকে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের ২০১৪ সালের মধ্যে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফ্ল্যাটমালিক সমিতির সভাপতি বলেছেন, তাঁরা কিস্তির অর্থ শোধ করেও ফ্ল্যাট বুঝে পাননি। কর্তৃপক্ষের দাবি, অবৈধ স্থাপনা থাকার কারণে তারা সময়মতো কাজ শেষ করতে পারেনি। এ ছাড়া ঠিকাদারদের গাফিলতিও ছিল।
গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ফ্ল্যাট বরাদ্দের ক্ষেত্রে একধরনের চাতুর্যের আশ্রয় নিয়েছে। যেসব গ্রাহক ফ্ল্যাট নিতে আগ্রহী, তাঁদের কাছ থেকে এই বলে মুচলেকা লিখিয়ে নিচ্ছে যে তাঁরা মামলা করবেন না। এটি এক অর্থে আদালত অবমাননাও। যদি আদালত গ্রাহকদের পক্ষে রায় দেন, তখন কি কর্তৃপক্ষ অর্থ ফেরত দেবে? যেখানে ফ্ল্যাটের মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা, সেখানে তাঁদের ওপর বাড়তি দাম চাপিয়ে দেওয়া শুধু অনৈতিক নয়, বেআইনিও বটে। গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের এ অন্যায় সিদ্ধান্ত মানতে ফ্ল্যাটমালিকেরা বাধ্য নন। তারপরও তাঁরা বলেছেন, আদালত বর্ধিত দাম দিতে বললে তাঁরা দেবেন।
গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ বলেছে, ৯০ শতাংশ ফ্ল্যাটের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজও কয়েক মাসের মধ্যে শেষ হবে। এখানে ক্রেতা বা ফ্ল্যাটমালিকদের কোনো ভুল নেই। অতএব, গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের উচিত যেসব ফ্ল্যাটের কাজ শেষ হয়েছে, তা অবিলম্বে ক্রেতাদের বুঝিয়ে দেওয়া এবং বাকি কাজ দ্রুত শেষ করে সব ক্রেতার ফ্ল্যাট পাওয়া নিশ্চিত করা।
তাতে ফ্ল্যাটমালিকদের ভোগান্তি যেমন কমবে, তেমনি গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অতীত ব্যর্থতা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/i7am
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন