English

30 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
- Advertisement -

পরিকল্পনায় ভাঙনের পূর্বাভাস গুরুত্বপূর্ণ: প্লাবন ও নদীর ভাঙন

- Advertisements -

নদীসন্নিহিত স্কুল-কলেজের মতো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামতে প্রচলিত ধ্যানধারণা আমূল পাল্টে দেওয়ার সময় এসেছে।
বন্যা ও নদীভাঙনের কারণে প্রায় প্রতিবছরই বিপুল পরিমাণ সম্পদের ক্ষতি হয়। সাম্প্রতিক বন্যায় পাঁচ বিভাগের প্রায় চার হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত এবং অন্তত ৫০টি স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার খবর মিলেছে। নদী বা চরাঞ্চলের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ অপেক্ষাকৃত দরিদ্র বা অনগ্রসর বিবেচিত হয়। এসব অঞ্চলের কোনো স্কুল নদীতে তলিয়ে যাওয়ার অর্থ বহু ক্ষেত্রে শিশুদের পড়াশোনা একপ্রকার বন্ধ হয়ে যাওয়া। পরিবার, সমাজ ও জাতীয় জীবনে এর অভিঘাত গুরুতর। কিন্তু দুঃখের বিষয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকারি উন্নয়নকৌশলে এ-সংক্রান্ত সংবেদনশীলতার কোনো স্বীকৃতি নেই।
সড়ক ও নৌপথের অধিকাংশ দুর্ঘটনা অলৌকিক নয়। কিন্তু সরকারি কর্তৃপক্ষ তার ব্যর্থতা ঢাকতে সতর্ক। তাই সেভাবেই সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরছে। একইভাবে নদীগর্ভে স্কুল-কলেজ বিলীন হওয়াকে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের স্বাভাবিক পরিণতি’ হিসেবে চিত্রিত করে চলেছেন। এর ফলে তাঁদের জবাবদিহি করতে হয় না। গাফিলতি বা রীতিনীতি গ্রাহ্য না করে স্থান নির্ধারণেও যে দুর্নীতি হতে পারে, সেই সত্য চাপা পড়ে থাকছে।
সংবাদমাধ্যমে যথারীতি বড় করে সচিত্র খবর আসছে যে বন্যায় কত শত স্কুল তলিয়ে গেল। কিন্তু সরকারি মহলের কোথাও যেন কোনো উদ্বেগ নেই। কোনো প্রশ্ন নেই। যেন প্রতিটি স্কুল বিলীন হওয়াটাই নিয়তিনির্দিষ্ট ছিল। প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বশীলদের কারও কিছু করণীয় ছিল না। এখন যেন একমাত্র কাজ হলো যথাসাধ্য আরও বেশি ব্যয় বাড়িয়ে নতুন করে দালানকোঠা তৈরি করা।
চাঁদপুরে পদ্মার ভাঙনে রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের নবনির্মিত ওমর আলী স্কুল ও সাইক্লোন শেল্টারটি বিলীন হয়ে গেছে। তদন্ত হলে হয়তো দেখা যাবে, অবকাঠামোটি তৈরির জন্য স্থান নির্ধারণেই ত্রুটিই ছিল। প্রচলিত নিয়ম হলো ভাঙন ধেয়ে এলে অবকাঠামো নিলাম করে হলেও কিছু অর্থ বাঁচানো। কিন্তু সেই নিলামের নিয়মও যথাসময়ে পালন করা হচ্ছে না। সুতরাং সবচেয়ে ভালো বিকল্প হলো সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামো তৈরিতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনাপত্তিপত্র সংগ্রহ করা।
দেশে নদীভাঙনের পূর্বাভাস অনেক আগেই বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পেয়ে গেছে। সরকারের একটি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠান (সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস—সিইজিআইএস) দেড় দশকের বেশি সময় ধরে প্রায় নিখুঁতভাবে বড় নদীগুলোর ভাঙনের পূর্বাভাস দিয়ে আসছে। এ কাজে বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানকেও (স্পারসো) কাজে লাগানো যেতে পারে। নদীভাঙনপ্রবণ এলাকায় সরকারের যেকোনো দীর্ঘমেয়াদি নির্মাণ পরিকল্পনায় স্পারসো এবং সিইজিআইএস প্রদত্ত পূর্বাভাস বিশ্লেষণকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। এটা কার্যকর করতে চাইলে সম্ভবত পরিপত্র যথেষ্ট হবে না। নীতিনির্ধারকেরা বিষয়টি প্রয়োজনে সরকারি ক্রয়নীতিতে আনতে পারেন।
এ বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে যুক্ত করা যেতে পারে। ২০১৩ সালের জাতীয় নদী রক্ষা আইনে বলা আছে, নদীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কার্যাবলির মধ্যে সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে সরকারকে সুপারিশ করা নদী কমিশনের কাজ।
আমরা মনে করি, নদীসন্নিহিত এলাকায় স্থায়ী অবকাঠামো তৈরি করা নদী সুশাসনের মধ্যে পড়ে। আমরা বিষয়টি নিয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি মনে করেন, আপিল বিভাগের সর্বশেষ রায় অনুযায়ী নদীসন্নিহিত এলাকায় স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়টি নদী কমিশনের ম্যান্ডেটের মধ্যে পড়ে।
আমরা আশা করব, আধুনিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অধীনে নদীভাঙনের পূর্বাভাসকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিয়ে স্কুলের মতো প্রতিষ্ঠানকে সুরক্ষা দিতে সব রকমের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন