English

38 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪
- Advertisement -

মালেকদের পেছনে কারা আছেন: স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি

- Advertisements -

স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি উদ্‌ঘাটনে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে গাড়িচালক আবদুল মালেকের নাম বেরিয়ে আসে। গত বছরের মার্চে তাঁর ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু হয়। মালেক ও তাঁর স্ত্রীর সম্পদের পুরো তথ্য জানা যায়নি। তবে এখন পর্যন্ত সাতটি প্লট ও দুটি সাততলা বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর আগে আফজাল নামে স্বাস্থ্য বিভাগের আরেক কর্মচারীও গ্রেপ্তার হন দুর্নীতির কারণে।
সরকারের নীতিনির্ধারকেরা স্বাস্থ্য খাতকে যতই সফল বলে দাবি করুন না কেন, এর পরতে পরতে দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা জেঁকে বসেছে। ১৯৮২ সালে চাকরিতে যোগদানকারী গাড়িচালক আবদুল মালেক এর একটি উদাহরণ মাত্র। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, স্বাস্থ্য খাতে তিন স্তরের সিন্ডিকেট আছে। উচ্চ, মাঝারি ও নিচু। মালেকসহ এখন যাঁরা ধরা পড়ছেন, তাঁরা হলেন নিচু স্তরের সিন্ডিকেট সদস্য। যাঁদের নামে মামলা হয়েছে এবং হচ্ছে তাঁরা হলেন মাঝারি স্তরের সিন্ডিকেট। আর ওপরের স্তরের সিন্ডিকেটের সদস্যরা সব সময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। এবারও ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি।
স্বাস্থ্য খাতে চাকরি করে একজন গাড়িচালক যখন কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হন, তখন এ খাতের হোমরা–চোমরারা কত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন, তা অনুমান করা কঠিন নয়। স্বাস্থ্য খাতে বড় দুর্নীতি হয় ঠিকাদারি এবং বদলি-পদায়নে। বদলি–পদায়নের সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতের উচ্চপদস্থ এবং নিজস্ব ব্যক্তিরাই জড়িত। বাইরের কেউ নন। কিন্তু ঠিকাদারি কিংবা রিজেন্ট হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিতে যে দুর্নীতি হয়, সেখানে চোরে চোরে মাসতুতো ভাইদের দেখা মেলে। স্বাস্থ্য বিভাগের প্রায় সব কাজ বাগিয়ে নেন কতিপয় চিহ্নিত ঠিকাদার। এ সিন্ডিকেট স্বাস্থ্য বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত করে গত পাঁচ বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে পত্রপত্রিকার খবরে বলা হচ্ছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেছেন, ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আসে। দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, বদলি ও বিভিন্ন উপায়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমন ৪৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক। কোভিড-১৯ পরীক্ষা কেলেঙ্কারির হোতা সাহেদ করিমের রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তির দায়ে দুদক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হলেও ছাড় দেওয়া হয়েছে চুক্তি সইকারী সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদকে। দুদকের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বেসিক ব্যাংকের ক্ষেত্রেও দুদক এ ধরনের যুক্তি খাড়া করেছিল। কিন্তু দেশের মানুষ জানে কোন ব্যক্তির অপকর্মের কারণে বেসিক ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছিল।
২০১৪ সালে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) জরিপে বেরিয়ে এসেছিল স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ, বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতিতে উৎকোচ নেওয়ার তথ্য। সর্বনিম্ন ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা। দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছিল বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন দেওয়া নিয়েও। গণমাধ্যম বা টিআইবির মতো কোনো প্রতিষ্ঠান সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান বা বিভাগের দুর্নীতির অভিযোগ তুললে ক্ষমতাসীনেরা তা অস্বীকার করার কৌশল নেন, কোনো ব্যবস্থা নেন না। সে সময় টিআইবির জরিপ আমলে নিলে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিবাজদের কিছুটা হলেও নিবৃত্ত করা যেত।
এখন মালেকদের বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু হয়েছে তাতে পরিস্থিতি বদলাবে না, যদি না পেছনের রাঘববোয়ালদের ধরা হয়। কারণ, মালেকের মতো একজন গাড়িচালকের পক্ষে শুধু দুর্নীতির মধ্যস্থতা করা সম্ভব, নিয়োগ বা পদোন্নতির কাজটি উচ্চপর্যায় থেকেই হয়। সেখানে দুর্নীতির মাত্রাটি কত, তা সহজেই অনুমেয়।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন