English

24 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪
- Advertisement -

ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড: আইনের সঠিক বাস্তবায়ন জরুরি

- Advertisements -

ধর্ষণ ও ধর্ষণজনিত অপরাধের বীভৎসতা যে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে তা নজিরবিহীন। বিবেকবান প্রত্যেক মানুষ এ নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। প্রতিবাদ জানাতে সারা দেশেই মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। এসব প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবি উঠেছে। এমন পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে এ সংক্রান্ত সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০২০-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনটি শিগগিরই অধ্যাদেশ আকারে জারি হতে পারে; কিন্তু তাতে কি বন্ধ হবে এই ন্যক্কারজনক অপরাধ? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু কঠোর আইন প্রণয়ন করলেই হবে না, আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
সম্প্রতি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে ঘরে ঢুকে স্বামীকে বেঁধে রেখে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের চেষ্টা, লক্ষ্মীপুরে ঘরে ঢুকে গৃহবধূকে ধর্ষণ, সিলেটের ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে ধর্ষণসহ অত্যন্ত ন্যক্কারজনক বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে এ রকম অনেক খবর আসছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছু ব্যবস্থা নিলেও তাতে অপরাধ থামছে না, বরং বেড়েই চলেছে। অনেকেই মনে করছেন, মৃত্যুদণ্ডের বিধান হওয়ায় দেশে এসিড-সন্ত্রাস কমে গেছে। তাই ধর্ষণের ক্ষেত্রেও মৃত্যুদণ্ডের বিধান করা হলে এ অপরাধ কমে যাবে। আবার অনেকের মতে, ধর্ষণজনিত হত্যার ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান এখনো আছে; কিন্তু তাতে ধর্ষণজনিত হত্যা কমেছে কি? তাদের মতে, এ ধরনের অপরাধ বেড়ে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে, সেই কারণগুলো দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে।
এসব কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, কিছু চিহ্নিত দুর্বৃত্ত সেই দলের নেতাকর্মী সেজে নানা ধরনের অপরাধ করে। ধর্ষণের ঘটনায়ও তাদেরই সম্পৃক্ততা বেশি। আছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতা। অভিযোগ আছে, অনেক ক্ষেত্রেই এসব দুর্বৃত্ত পুলিশের সহযোগিতা পেয়ে থাকে। তদন্তের দুর্বলতায় অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। ২০১৫ সালের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আগের এক দশকে ধর্ষণজনিত অপরাধে পাঁচ হাজার ১১৭টি মামলা হলেও বিচার হয়েছে মাত্র ৮৮১টির এবং শাস্তি হয়েছে মাত্র ১০১ জনের।
প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ, তথ্য-প্রমাণের অভাব, সাক্ষ্য প্রদানে অনীহাসহ আরো অনেক কারণেই অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। ফলে বিদ্যমান বিচারপ্রক্রিয়া অপরাধীদের মনে ভয় ধরানোর মতো দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারছে না। এসব কারণে হাইকোর্ট ধর্ষণ ও ধর্ষণজনিত হত্যা মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তা-ও ঠিকমতো মানা হচ্ছে না।
আমরা মনে করি, সংশোধন হতে চলা আইনের সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ ও ধর্ষণজনিত বীভৎসতার বিচার দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা প্রয়োজন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে দায়িত্ব পালনে আরো বেশি সততা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিতে হবে। পাশাপাশি অপরাধীরা যেন কোনোভাবেই প্রশ্রয় না পায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। সেই সঙ্গে শক্ত সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন