English

31 C
Dhaka
শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
- Advertisement -

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রগ্রাহক, পরিচালক এম এ সামাদের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

- Advertisements -
Advertisements
Advertisements

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রগ্রাহক, চলচ্চিত্র শিক্ষক, পরিচালক-প্রযোজক, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব এম এ সামাদের-এর ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ । তিনি ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ অক্টোবর, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। প্রয়াত এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের প্রতি জানাই বিন্ম্র শ্রদ্ধা। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
এম এ সামাদ ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জুলাই, সিলেটের হবিগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে ব্যারিস্টার হবে, সেই মতে দেশে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে, ব্যারিস্টারী পড়ার জন্য ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে লন্ডনে যান তিনি। সেখানে গিয়ে ‘লিংকন্স ইন কলেজ’-এ ছয় মাস লেখাপড়া করার পর আইন শাস্ত্র পড়তে ভালো না লাগায়, তিনি ভর্তি হন চার্টার্ড একাউন্টেন্সিতে। এরপর তিনি ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের দ্য লন্ডন স্কুল অব ফিল্ম টেকনিক-এ ‘কোর্স অব ট্রেনিং ইন মোশন পিকচার্স প্রোডাকশন টেকনিক’ কোর্সে ভর্তি হন। এক বছর পড়ালেখার করার পর বার্ষিক চূড়ান্ত পরীক্ষায় ‘ডিষ্টিংশন গ্রেড লাভ’ করায় প্রিন্সিপাল রবার্ট ডানবার তাঁকে পরবর্তী তিন বছরের জন্য স্কলারশীপের ব্যবস্থা করে দেন।
ইনস্টিটিউটে প্রত্যক্ষভাবে ফিল্ম মেকিং সম্পর্কে জানার জন্য বাণিজ্যিক সফল ছবি ‘গানস অব নাভারুন’ এবং শৈল্পিক ছবি ‘সাটার ডে নাইট সানডে মর্নিং’-এ কাজ করার সুযোগ পান এম এ সামাদ।
বেসিক কোর্সে ডেষ্টিংশন গ্রেডসহ এক্সিলেন্ট প্রশংসা অর্জন করেন এবং রয়েল একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টস কোর্সে অভিনয় ও মেকাপের উপরও প্রশিক্ষণ নেন তিনি।
আর এভাবেই একজন এম এ সামাদ চলচ্চিত্রকে ভালোবেসে, ব্যারিস্টার না হয়ে, হয়ে যান চলচ্চিত্রগ্রাহক ও পরিচালক।
এম এ সামাদ ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে, বিবিসিতে ক্যামেরাম্যান হিসাবে যোগদান করেন। বাবা-মায়ের কথায়, বিবিসি’র চাকুরী ছেড়ে দিয়ে দেশে ফিরে আসেন। দেশে এসে প্রথমে তিনি, খ্যাতিমান চিত্রগ্রাহক সাধন রায়ের সাথে সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
তিনি একক চিত্রগ্রাহক হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন, এম এ হামিদ পরিচালিত ‘অপরাজেয়’ ছবির ক্যামেরাম্যান হিসাবে। কিন্তু চিত্রগ্রাহক হিসেবে মুক্তিপ্রাপ্ত তাঁর প্রথম ছবি, কাজী জহিরের ‘বন্ধন’, মুক্তিপায় ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে।
রূপবান, ১৩ নং ফেকুওস্তাগার লেন, অপরাজেয়, ইসধরতি পর, ইন্ধন, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, উলঝন, ঈশা খাঁ, আবির্ভাব, ভাগ্যচক্র, ওরা ১১ জন, সংগ্রাম, সূর্যগ্রহণ, সূর্যসংগ্রাম’সহ প্রায় ৪০/৫০টির মত চলচ্চিত্রে, চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন এম এ সামাদ ।
একসময় তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও পরিচালনায় হাত দেন। তাঁর প্রযোজিত ও পরিচালিত চলচ্চিত্র- সূর্যগ্রহণ, সূর্য সংগ্রাম ও শিরি ফরহাদ ।
তিনি, প্রসন্ন পানি- নামে একটি প্রামাণ্যচিত্রও নির্মান করেন। কাহিনী ও চিত্রনাট্যও রচনা করেছেন তিনি।
বাংলাদেশ ক্যামেরাম্যান এসোসিয়েশন-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন এম এ সামাদ। প্রশিক্ষিত চলচ্চিত্রকর্মী সৃষ্টি করতে এফডিসিতে প্রথম চলচ্চিত্র প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে, প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেন তিনি। স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম এন্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষক ও বিভাগীয় চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করে গেছেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
চলচ্চিত্রগ্রাহক, চলচ্চিত্র শিক্ষক, পরিচালক-প্রযোজক, কাহিনী-চিত্রনাট্যকার, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব এম এ সামাদ। ছিলেন একজন প্রতিভাবান, সৃজনশীল মেধাবী চলচ্চিত্রগ্রাহক। চলচ্চিত্র সম্পর্কে বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ ছিলেন তিনি। তিনি সৃজনশীল ও ব্যতিক্রমী কাজের স্বাক্ষর রেখে গেছেন তাঁর চিত্রায়িত চলচ্চিত্রে।
তাঁর ধ্রুপদী ক্যামেরার কাজের মাধ্যমে তিনি পেয়েছেন সেরা চিত্রগ্রাহকের সুনাম, অধিষ্ঠিত হয়েছেন খ্যাতির শীর্ষ আসনে।
চলচ্চিত্র নির্মাণ করেও তিনি ব্যাপক আলোচিত ও প্রসংশিত হয়েছেন। তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র- সূর্যগ্রহণ ও সূর্য সংগ্রাম, সে সময়ে চলচ্চিত্রদর্শক ও সমালোচক কর্তৃক সমাদৃত ও প্রসংশিত হয়েছে।
স্বাধীন ও মুক্ত চেতনার মানুষ, এম এ সামাদ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা । পাকিস্তানীদের শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে স্বক্রীয় অংশগ্রহণ করেছেন, সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলা সদস্য হিসেবে।
প্রগতিশীল, আধুনিক চিন্তা-চেতনার এক মহিরূহ চলচ্চিত্রব্যক্তিত্ব, এম এ সামাদ। চলচ্চিত্র সম্পর্কে তাঁর বিদেশে অর্জিত জ্ঞান ও শিক্ষা দিয়ে, নিজের দেশের চলচ্চিত্রশিল্পকে করে গেছেন সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্রশিল্পে তাঁর অবদান, অবশ্য অবশ্যই স্মরণযোগ্য।
(বিশেষ ধন্যবাদ-অনুপম হায়াৎ ও ফকরুল আলম সোহাগ)

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন