English

40 C
Dhaka
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
- Advertisement -

এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সম্মাননা পাচ্ছেন সোহেল রানা ও সুচন্দা

- Advertisements -

চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য কয়েক বছর ধরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে। প্রতি বছরই দুজনকে এই সম্মান জানানো হয়। সেই ধারাবাহিকতায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৯ এ দুজন নন্দিত ব্যক্তিকে বেছে নিয়েছে সরকার।
এবার আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন অভিনেতা-প্রযোজক ও পরিচালক মাসুদ পারভেজ। পর্দায় যিনি সোহেল রানা নামে খ্যাত। তার সঙ্গে সম্মাননা দেয়া হবে অভিনেত্রী-প্রযোজক ও পরিচালক কোহিনুর আক্তার সুচন্দাকে।
দীর্ঘদিন ধরে সিনেমার উন্নয়ন, প্রসার ও প্রচারে বিশেষভাবে অবদান রাখার জন্য তাদের এ স্বীকৃতি দিতে চলেছে সরকার। শিগগিরই জমকালো আয়োজনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দুই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের হাতে সম্মাননা তুলে দেবেন।
একনজরে সোহেল রানা
সোহেল রানা ঢাকার মিডফোর্ট হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। তার পারিবারিক নাম মাসুদ পারভেজ। বাবা মরহুম আব্দুল মালিক আর মা মরহুমা দেলওয়ারা বেগম। তার বাবা ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার। প্রতি বছরই বিভিন্ন জেলায় তার পোস্টিং হতো। ১০ বছরে প্রায় ১২-১৪টি স্কুলে পড়েছেন তিনি। অষ্টম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর হাইস্কুলে। এখান থেকেই মেট্রিক পাস করেন। পরে ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে পড়েন। আনন্দমোহন কলেজে ১৯৬১ সালে হয় তার রাজনীতির হাতেখড়ি। ১৯৬৩ সালে আনন্দমোহন কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হন। ১৯৬৫ সালে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি হন। ১৯৬৬ সালে ময়মনসিংহের রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের এজিএস হন। সেই সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল এই নায়কের। তার পরামর্শেই সিনেমায় নিয়মিত হন সোহেল রানা।
তিনি চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সোহেল রানা নাম ধারণ করে। ১৯৭২ সালে মাসুদ পারভেজ নামে চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন। বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ওরা ১১ জন ছবির প্রযোজক হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। এটি পরিচালনা করেন চাষী নজরুল ইসলাম। ১৯৭৩ সালে সোহেল রানা নাম ধারণ করে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিখ্যাত কাল্পনিক চরিত্র ‘মাসুদ রানা’র একটি গল্প অবলম্বনে ১৯৭৪ সালে ‘মাসুদ রানা’ ছবির নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং একই ছবির মাধ্যমে তিনি মাসুদ পারভেজ নামে পরিচালক হিসেবেও যাত্রা শুরু করেন। এখানে তার বিপরীতে ছিলেন মিষ্টি মেয়ে কবরী। এরপর অসংখ্য ছবি তিনি উপহার দিয়েছেন অভিনয়ের মুগ্ধতা ছড়িয়ে। কাজ করলেন ‘এপার ওপার’, ‘দস্যু বনহুর’, ‘জীবন নৌকা’- এভাবে একের পর এক তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে।
তার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। পারভেজ ফিল্মস নামের প্রতিষ্ঠানটির ব্যানারে ৩০টির অধিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এগুলো হলো- ওরা ১১ জন, মাসুদ রানা, দস্যু বনহুর, গুনাহগার, জবাব, যাদুনগর, জীবন নৌকা, যুবরাজ, নাগ পূর্ণিমা, বিদ্রোহী, রক্তের বন্দী, লড়াকু, মাড়কশা, বজ্রমুষ্ঠি, ঘেরাও, চোখের পানি, ঘরের শত্রু, গৃহযুদ্ধ, মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা, শত্রু সাবধান, খাইছি তোরে, ভালোবাসার মূল্য কত, অন্ধকারে চিতা, ভয়ংকর রাজা, ডালভাত, চারিদিকে অন্ধকার, রিটার্ন টিকিট ও মায়ের জন্য পাগল। গুণী এই নায়কের ছেলেও এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকেই নির্মাণ করেন ‘অদৃশ্য শত্রু’ নামের চলচ্চিত্র।
দীর্ঘ চলচ্চিত্র জীবনে সোহেল রানা তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ব্যক্তিজীবনে সোহেল রানা ১৯৯০ সালে বিয়ে করেন ডা. জিনাত পারভেজকে। তাদের সুখের দাম্পত্যে একমাত্র সন্তান মাশরুর পারভেজ জিবরান।
একনজরে সুচন্দা
যশোরে জন্ম নেয়া বাংলাদেশি চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সুচন্দা। ষাটের দশকে তিনি অভিনয় জীবন শুরু করেন। তার ছোট বোন ববিতা ও চম্পা ঢালিউডের দুই অভিনেত্রী। অভিনেতা রিয়াজ তার চাচাত ভাই। তিনি প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের স্ত্রী।
সুচন্দা ১৯৬৫ সালে অভিনয় জীবন শুরু করেন প্রখ্যাত অভিনেতা কাজী খালেকের একটা প্রামাণ্যচিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘কাগজের নৌকা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ১৯৬৬ সালে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। পরবর্তীকালে ১৯৬৭ সালে হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি নিয়ে চলচ্চিত্র ‘বেহুলা’য় অভিনয় করেন রাজ্জাকের বিপরীতে। সে ছবি তাকে দারুণ জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
তবে তার ক্যারিয়ারে উল্লেখযোগ্য সিনেমা ‘জীবন থেকে নেয়া’। এখানেও তিনি রাজ্জাকের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন।
এছাড়া ষাটের দশকের শেষ দিকে গোলাম মুস্তফার বিপরীতে ‘চাওয়া পাওয়া’, আজিমের বিপরীতে ‘নয়নতারা’, রাজ্জাকের বিপরীতে ‘সুয়োরানী দুয়োরানী’ এবং ৭০ এর দশকে ‘যে আগুনে পুড়ি’, ‘কাচের স্বর্গ’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’ ইত্যাদি কালজয়ী সিনেমায় অভিনয় করে নিজেকে কিংবদন্তিতে পরিণত করেছেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন সুচন্দা। জহির রায়হানের জীবদ্দশায় ‘টাকা আনা পাই’ ও ‘প্রতিশোধ’ চলচ্চিত্র দুটি প্রযোজনা করেন তিনি। এছাড়াও ‘তিনকন্যা’, ‘বেহুলা লখীন্দর’, ‘বাসনা’ ও ‘প্রেমপ্রীতি’ তার প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে।
পরিচালনায় এসেও দারুণ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন সুচন্দা। তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘সবুজ কোট কালো চশমা’। ২০০৫ সালে স্বামী জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসের আলোকে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন এবং সেরা প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।
অনেক দিন অভিনয়ের বাইরে রয়েছেন। বেশিরভাগ সময় এখন তার আমেরিকায়ই কেটে যায় সন্তান-নাতিদের সঙ্গে। মাস দেড়েক আগে বাংলাদেশে ফিরেছেন।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন