করোনা বিপর্যয় সামলাতে এবং অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। এক লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার এই প্রণোদনা কার্যক্রমের শুরু থেকেই অভিযোগ ছিল, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণ পাচ্ছেন না। এসব অভিযোগের বিষয় সরকারের কানেও পৌঁছেছে; তারা একটি উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। প্রান্তিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করতে চায় সরকার। সেটি নিশ্চিত করতে ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলোর (এমএফআই) মাধ্যমে ১০ হাজার কোটি টাকার নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ নেওয়া হচ্ছে।
নতুন প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ হাজার কোটি টাকার একটি ‘ঋণ সহায়তা তহবিল’ গঠন করবে। এই তহবিল থেকে ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তারা ৪ শতাংশ সুদে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। ঋণগ্রহীতারা শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল করে ঋণের আবেদন করতে পারবেন। নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন পেয়েছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
ক্ষুদ্র শিল্পকে বাঁচাতে এরই মধ্যে এক হাজার ৫০০ কোটি ও এক হাজার ২০০ কোটি টাকার নতুন দুটি প্রণোদনা প্যাকেজ আসছে। ফলে করোনা মহামারির মধ্যে সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩-এ। এসব প্যাকেজের সঙ্গে যোগ হচ্ছে নতুন এই প্রণোদনা প্যাকেজ। আশা করা হচ্ছে, এই উদ্যোগের ফলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সফলভাবে মোকাবেলা করতে পারবেন।
‘নভেল করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবেলায় কুটির, মাইক্রো ও ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তাদের দ্রুত ঋণ প্রদানে সহায়ক নীতিমালা ২০২১’ নামের একটি নীতিমালাও তৈরি করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিলটি বাংলাদেশ ব্যাংক নিজস্ব উৎস থেকে গঠন করবে। প্যাকেজে ঋণের বার্ষিক সুদ বা মুনাফা বা সার্ভিস চার্জের হার হবে সর্বোচ্চ সাড়ে ৯ শতাংশ। গ্রাহক দেবে ৪ শতাংশ, বাকিটা সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেবে। সরকার বাংলাদেশ ব্যাংককে ০.৫ শতাংশ, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ১ শতাংশ এবং সংশ্লিষ্ট ঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানকে (এমএফআই) ৪ শতাংশ ভর্তুকি হিসেবে দেবে। এ জন্য সরকারের ব্যয় হবে ৫৫০ কোটি টাকা।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তার উদ্যোগটি খুব জরুরি ছিল। আগে নানা জটিলতায় তাঁরা ঠিকমতো প্রণোদনা পাননি। আর্থিক লেনদেনের বিষয় যখন থাকে, তখন ব্যবস্থাপনা সুচারু হওয়া দরকার। এই তহবিল নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে ভালো বোঝাপড়া থাকা উচিত। ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারীদের দক্ষতা-সক্ষমতার দিকটিও বিবেচনায় নিতে হবে। নতুন প্রণোদনা প্যাকেজটি যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে।