English

30 C
Dhaka
বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪
- Advertisement -

সিরিয়া যুদ্ধ: আটক হওয়া লাখ লাখ বেসামরিক নাগরিক এখনো নিখোঁজ

- Advertisements -

জাতিসংঘের তদন্তকারীরা বলছেন সিরিয়ায় গত ১০ বছরের গৃহযুদ্ধের সময় আটক হওয়া লাখ লাখ বেসামরিক নাগরিক এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। আরো কয়েক হাজার ব্যক্তি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কিংবা নিরাপত্তা হেফাজতে থাকার সময় মারা গেছেন।

দেশটির গৃহযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ বিষয়ে নতুন এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

ভিকটিম ও ঘটনাগুলোর অনেক প্রত্যক্ষদর্শী পরিস্থিতিকে বর্ণনা করেছেন ‘কল্পনাতীত দুর্ভোগ’ হিসেবে, যার মধ্যে ছিলো মাত্র ১১ বছর বয়সী ছেলে ও মেয়েদের ধর্ষণের ঘটনাও।

ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিষয়টি এখন “ন্যাশনাল ট্রমা”য় পরিণত হয়েছে যার দিকে অবশ্যই দৃষ্টি দেওয়া দরকার। ২০১১ সালে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বিরোধী এক বিক্ষোভের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী ব্যবস্থার নেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশটিতে যে সংঘাতের সূচনা হয় সেটিই পরে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়, যা এখনো চলছে।

এক দশকের এক সংঘাতে কমপক্ষে তিন লাখ ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং দেশটির অর্ধেক জনগোষ্ঠীই বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে সিরিয়ার অন্তত ৬০ লাখ মানুষ।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের স্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিশনের সিরিয়া বিষয়ক এই তদন্ত রিপোর্টটি প্রণয়ন করা হয়েছে প্রায় দুই হাজার ছয়শ ৫০ সাক্ষ্য আর আটকের পর শতাধিক ঘটনার ওপর ভিত্তি করে।

Advertisements

এতে দেখা যায় সিরিয়ায় সক্রিয় সব পক্ষই মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে প্রতিপক্ষকে শাস্তি দেয়ার জন্য।

“সরকারি বাহিনী একতরফাভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও বিক্ষোভকারীদের আটক করেছে যে এই সংঘাতের মূল উৎস,” বলছিলেন কমিশনের চেয়ারম্যান পাওলো পিনহেইরো।

“সশস্ত্র গ্রুপগুলো এবং জাতিসংঘ কর্তৃক চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো (হায়াৎ তাহরির আল শাম ও ইসলামিক স্টেট গ্রুপ) এরপর মানুষের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া ও একই ধরনের জঘন্য ঘটনা ঘটাতে শুরু করে”।

আগে আটক ছিলেন এমন কয়েকজন জানিয়েছেন, তারা মাসের পর মাস দিনের আলো দেখেননি, নোংরা পানি পানে বাধ্য হয়েছেন, খেয়েছেন বাসি খাবার এবং ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত সেলে তাদের রাখা হয়েছিলো। এসব সেলে টয়লেট সুবিধা যেমন ছিল না, তেমনি ছিল না কোনো চিকিৎসা সুবিধা।

কারাগারগুলোতে যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য অন্তত ২০টি উপায়ে সেখানে নির্যাতন করা হতো।

এর মধ্যে ছিলো ইলেকট্রিক শক দেওয়া, শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়িয়ে দেওয়া, নখ ও দাঁত উপড়ে ফেলা এবং দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলিয়ে রাখা।

“প্রথমে আমাকে নির্যাতন করলো। তারপর বললো আমরা তোমাকে  এখনি মেরে ফেলতে পারি, কেউ জানতেই পারবে না,” হোমস শহরে আটক হওয়া এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময়কার স্মৃতিচারণ করেন এভাবেই।

নির্যাতনের শিকার হয়েও ফিরে আসা ব্যক্তিরা বর্ণনা দিয়েছেন কিভাবে তাদের শরীর জুড়ে ব্যথার সাথে এখনো লড়াই করছেন তারা যা পরে মানসিক ট্রমায় রূপ নিয়েছে।

“আমি ডায়াপার ছাড়া থাকতে পারি না। পুরো শরীরে মারাত্মক ব্যথা। আমার আসলে আর কোনো আশাই নেই। জীবনটা পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে”, বলছিলেন একজন নারী, যিনি হোমস ও দামেস্কে সামরিক হেফাজতে নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।

Advertisements

তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, হায়াৎ তাহরির আল শাম পরিচালিত কেন্দ্রগুলোতে যাদের আটক রাখা হয়েছিলো তাদেরকেও অত্যাচার করা হতো।

বহু পুরুষ জানিয়েছেন যে, তাদের নগ্ন করে পুরুষাঙ্গে ইলেকট্রিক শক দেওয়া, এমনকি ধর্ষণও করা হয়েছিলো।

নারী বন্দিরা জানিয়েছেন, তাদের ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হতো এবং হামা চেকপয়েন্টে একজন নারীকে ধর্ষণও করা হয়েছিলো।

তদন্তকারীদের জানানো হয়েছে যে, বিচার ছাড়াই বা কমিশনের মতে সামরিক আদালত বা বিকল্প আদালতে বিরোধী সশস্ত্র গ্রুপগুলোর প্রশ্নবিদ্ধ বিচারের নামে অনেক আটক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে।

রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে যে, আটক অবস্থায় কত মানুষ মারা গেছে তার কোনো হিসেব নেই। তবে ধারণা করা হচ্ছে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে সরকারি হেফাজতেই।

অনেক সূত্রগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নিহতদের বিভিন্ন গণকবরে দাফন করা হয়েছে, যার দুটি অন্তত দামেস্কের শহরতলীতেই।

তবে সরকার ও হায়াৎ তাহরির আল শাম বন্দীদের নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন