অবশেষে পুরো মুখ ঢেকে বোরকা ও নিকাব নিষেধাজ্ঞার পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার নিজেদের মতামত জানিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে বোরকা ও নিকাব পরিধানে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে যাচ্ছে সুইজারল্যান্ড। গতকাল রবিবার (৭ মার্চ) দীর্ঘদিনের বিতর্কিত নিষেধাজ্ঞায় গণভোট সম্পন্ন হয়। এর ফলে মুসলিম নারীরা দেশটিতে প্রকাশ্যে বোরকা বা নিকাব পরিধান করতে পারবে না।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুষ্ঠিত গণভোটে সরকারি হিসেব মতে এ নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ৫১.২ ভাগ ভোট এবং বিপক্ষে ৪৮.৮ ভাগ ভোট পড়ে। নিষেধাজ্ঞার পক্ষে ১৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৯২ জন অংশগ্রহণ করেন এবং বিপক্ষে অংশগ্রহণ করেন ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৬২১ জন।
সুইস ডানপন্থী দল সুইস পিপলস পার্টি (এসভিপি) পুরো মুখ ঢাকায় নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব উত্থাপন করে ‘চরমপন্থা থামাও’ বলে দেশব্যাপী প্রচারণা চালায়। অবশ্য নারীরা কী পরবে তা নির্ধারণ করা সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না বলে এ নিষেধাজ্ঞার বিপক্ষে অবস্থানের কথা জানিয়েছে সুইস সরকার।
দেশটির মুসলিম সংগঠন দ্য সেন্ট্রাল কাউন্সিল অব মুসলিম দিনটিকে ‘মুসলিমদের জন্য কালো দিবস’ বলে জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে সুইস মুসলিম দলটি জানায়, আজকের রায় পুরোনো ক্ষতকে উম্মোচন করে। বিশেষত আইনি বৈষম্যকে আরো সম্প্রসারিত করে এবং সংখ্যালঘু মুসলিমদের বর্জনের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।
সুইস মুসলিম সংগঠনের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা আইনের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করার কথা জানানো হয় এবং জরিমানা করা নারীদের সহায়তায় একটি তহবিল সংগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
সুইজারল্যান্ডের দ্য ফেডারেশন অব ইসলামিক অর্গানাইজেশন এক বিবৃতিতে নিষেধাজ্ঞা আইনের নিন্দা করে বলে, ‘সংবিধানে পোষাক কোড নির্ধারণ করা নারীর মুক্তি সংগ্রামের মধ্যে পড়ে না। বরং তা একধাপ পিছিয়ে পড়ার প্রমাণ বহন করে। এর মাধ্যমে সুইসজারল্যান্ডের শান্তি, সম্প্রীতি ও উদারতার ভাবনা মুখ থুবড়ে পড়বে।’
জার্মানির লুসার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা মতে সুইজারল্যান্ডের শতকরা একজনও বোরকা পরিধান করেন না এবং আনুমানিক ৩০ জন নারী নিকাব পরিধান করেন। সুইজারল্যান্ডে ৮.৬ মিলিয়ন জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র ৫ ভাগ মুসলিম বসবাস করে। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ তুর্কি, বসোনিয়া ও কসোভোর বংশোদ্ভূত।
এ নিষেধাজ্ঞার ফলে পুরো মুখ ঢেকে প্রকাশ্যে দেশটির কোনো উম্মুক্ত স্থান বা মার্কেটে যেতে পারবে না। অবশ্য উপাসনার স্থান, চিকিৎসা, নিরাপত্তা, জলবায়ু বা স্থানীয় কোনো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পালন করা যাবে।
অবশ্য আগ থেকেই সুইজারল্যান্ডের সেন্ট গ্যালেন ও টিকিনো দুটি অঞ্চলে এ নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। ২০১৯ সাল থেকে মুখ ঢাকলে নারীদেরকে নির্দিষ্ট জরিমানা প্রদান করতে হয়। টিকিনো অঞ্চলে ২০১৬ সাল থেকে মুখ ঢাকায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
ইউরোপের ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, বেলিজিয়াম, বুলগেরিয়া, ডেনমার্কে বোরকা পরিধান পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা আছে। এ আইন লঙ্ঘন করলে নির্দিষ্ট জরিমানা আদায় করতে হয়। এছাড়া জার্মানি, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, ইতালি, সুইডেনের নির্দিষ্ট স্থানে বা নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের নিকাব বা বোরকা পরিধানে আংশিক নিষেধাজ্ঞা আছে।