English

24 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪
- Advertisement -

আজ মরমী বাউল কবি আব্দুস সাত্তার মোহন্ত’র ৮ম মৃত্যুদিবস

- Advertisements -

আমি তো মরেই যাব চলেই যাব, রেখে যাব সবই, আছিস নি কেউ সঙ্গের সাথী, সঙ্গে নি কেউ যাবি আমি মরে যাব!!

আজ (৩১ মার্চ)মরমী বাউল কবি আব্দুস সাত্তার মোহন্ত’র ৮ম ওফাৎ দিবস উপলক্ষে ঢাকার কেরানীগঞ্জ নতুন জেলখানা সংলগ্ন কদমপুরের “মঞ্জিল-এ-মোহন্তে” ২দিন ব্যাপী শুরু হচ্ছে “মোহন্ত উৎসব”। প্রতি বছর মত এবার ও করোনা সতর্কতা মেনে ৩০ ও ৩১শে মার্চ তারিখে মোহন্ত উৎসব পালন করা হবে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মোহন্ত’র জীবন ভিত্তিক আলোচনা, দোয়া, তোবারক বিতরণ এবং রাত ১০টা থেকে সারারাত মোহন্ত’র লেখা গান পরিবেশন করবেন বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত বাউল শিল্পীরা।

দ্বার খুলে দাও দয়াল আমি তোমার
দয়ার ভিখারি
তাড়াইয়া দিও না দয়াল কাতরে বিনয় করি!!

এমন অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রষ্টা মরমী বাউলকবি আব্দুস সাত্তার মোহন্ত। গানকে তিনি জীবনের চেয়ে ও বেশি ভালবাসতেন। তাই বৃদ্ধ বয়সে এসে ও সপ্তাহে কমপক্ষে ৩/৫ রাত তাকে গান করতে হত। তিনি গান লিখেছেন, সুর করেছেন আবার নিজেই গেয়েছেন। এমন বহুমাত্রিক প্রতিভা খুঁজে পাওয়া দুস্কর। মোহন্ত’রা সবসময় জন্মে না। যুগে যুগে দু’একজনের সন্ধান মেলে।

তিনি ছিলেন সংগীত স্রষ্টা। আমাদের বাউল গানের ভান্ডার যাদের হাতে সমৃদ্ধ হয়েছে- আব্দুস সাত্তার মোহন্ত তাদের মধ্যে অন্যতম। গুরুপ্রেম, ঐশীপ্রেম, প্রার্থনা, মুর্শেদী, দেহতত্ত্ব, আধ্যাতিকসহ তিনি প্রায় ৯ শতাধিক গান রচনা করেছেন। তার রচিত বিভিন্ন জনপ্রিয় গান বিশেষ করে তার অমর সৃষ্টি “আমি তো মরে যাবো চলেই যাবো” গানের জন্য তিনি দেশ বিদেশে পরিচিত । এছাড়াও তার বহু গান জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার বেশ কিছু গান চলচ্চিত্রেও ব্যবহার করা হয়েছে।

যৌতুক প্রথা বন্ধ কর ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ো
যৌতুক চাইলে তারেই ধর
জন্মেরই মতন রে!!

আব্দুস সাত্তার মোহন্ত ১৯৪২ সালে মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার কুড়িগাঁও গ্রামে একটি সংস্কৃতিমনা পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম গোলাম আলী বেপারী এবং মাতা মরহুমা সবুরুন নেছা।

আব্দুস সাত্তার মোহন্ত ১৯৭৮ সালে
“যে ব্যথা দিয়েছরে বন্ধু আমার অন্তরে
আমার মন জানে আর আমি জানি
অন্যে কি বুঝিতে পারে?”
এই গানের মাধ্যমে প্রথম রেডিও বাংলাদেশে গান করার সুযোগ লাভ করেন। তিনি ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিল্পী হন। এছাড়াও তিনি নিয়মিত বিভিন্ন বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলে গান পরিবেশন করেছেন।

১৯৮৯ সালে তার প্রথম অডিও অ্যালবাম “হুশিয়ার তোমরা হুশিয়ার” প্রকাশিত হয়।
এই এলবামের আমি তো মরে যাবো, যৌতুক প্রথা, হঠাতে নিও না কেউ সিদ্ধান্ত এবং কি হইলো ঘোরকলির কালে গানগুলো ভীষণ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সাত্তার মোহন্ত ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত গীতিকার নির্বাচিত হোন।

ভবমায়ার জেলখানাতে
আমি এক দাগী আসামী
পরবাসের হাজতবাসে
বন্দী হইয়াছি আমি!!

২০১২ সালের বইমেলায় তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ “আমি তো মরেই যাব” প্রকাশিত। প্রখ্যাত কথাশিল্পী ইমদাদুল হক মিলন বইটির মোড়ক উন্মোচিত করেন।

২০২১ সালের বইমেলায় তার কাব্যগ্রন্থ “আমি তো মরেই যাব” ২য় খন্ড প্রকাশিত হয়। তাঁর লেখা বহু জনপ্রিয় গান মানুষের মুখেমুখে। তিনি মনেপ্রাণে একজন শিল্পী ছিলেন। গান গেয়েছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায়। শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন কন্ঠের যাদুতে। জীবন থেকে গানকে কখনো আলাদা করেন নি। গান গেয়ে মানুষকে কাঁদাবার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তার। তিনি মানুষকে যেমন ভালবাসতেন তেমনি, মানুষের ভালবাসায় শিক্ত হয়েছিলেন তিনি। সারাটি জীবন গান আর গানের মানুষদের উপকার করেছেন। বাউল শিল্পীদের প্রতি তিনি ছিলেন অন্তঃপ্রাণ।

সবাই তো হেসেছে তোমার জন্ম আনন্দে
এমন এক জীবন গড়ো,
মৃত্যুতে সবাই যেন কাঁদে!!

এই মহান শিল্পী ২০১৩ সালের ৩১শে মার্চ সবাইকে কাঁদিয়ে ইহলোক ত্যাগ করেন। তাঁর প্রয়ানদিবসে আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

লেখকঃ ঢালী মনিরুজ্জামান
সাংবাদিক ও কলামিস্ট

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন