English

28 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
- Advertisement -

কুকুর-বিড়ালের সেবায় সুমির নেতৃত্বে ৩২ তরুণ-তরুণীর অ্যানিম্যাল কেয়ার অব চট্টগ্রাম

- Advertisements -

চট্টগ্রাম শহরের যেখানেই গরম পানিতে ঝলসানো কিংবা দুর্ঘটনায় পা ভেঙে যাওয়া কুকুর-বিড়ালের খবর পান, সেখানেই গিয়ে হাজির হন। ক্ষতবিক্ষত হয়ে কাতরানো কুকুর-বিড়ালকে পরম মমতায় তুলে নিয়ে যান নিজের শেল্টার হোমে। মানুষ কিংবা যানবাহন দ্বারা যখনই বিপন্ন হয় কুকুর-বিড়াল, তাদের ত্রাণকর্তা হয়ে পাশে গিয়ে দাঁড়ান সুমি বিশ্বাস। এভাবেই অর্ধযুগ নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন পশুপ্রেমিক সুমি। এখন শুধু সুমি একা নন; তার পাশে দাঁড়িয়েছেন একদল তরুণ-তরুণী। এক সুমিতে ৩২ তরুণ-তরুণীর মনে জেগে উঠেছে পশুপ্রেম। চট্টগ্রাম শহরে এখন পশু ও প্রাণীর ওপর আঘাত এলেই রুখে দাঁড়াচ্ছেন তারা।

পশুপ্রেমিক সুমি বিশ্বাস বলেন, আমরা শহরের বিপন্ন কুকুর-বিড়ালের নিরাপদ ও সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে কাজ করছি। রাস্তায় কুকুরের পা ভাঙা, চামড়া ঝলসানো, মাথা ফাটা, এমনকি চোখ উপড়ানো অবস্থায় ড্রেনে ফেলে দেওয়া- এসব দেখার পর সহ্য করতে না পেরেই ওদের জন্য কাজ শুরু করি। এখন আমি একা নই, আমার সঙ্গে ৩০-৩২ তরুণ-তরুণী শহরে বিপন্ন প্রাণীদের নিরাপদ ও সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে কাজ করছেন।

সুমি আরও জানান, বাবার দেওয়া জায়গায় শেল্টার হোম তৈরি করে অসুস্থ প্রাণীদের প্রতিদিন ড্রেসিং, ইনজেকশন এবং খাবার দিয়ে যাচ্ছি। পা হারানো কুকুরদের এখানেই রাখছি আমরা। ভবিষ্যতে একটি বড় শেল্টার হোম এবং একটি হাসপাতাল করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ওরা একদল স্বপ্নবাজ তরুণ। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, কেউ কলেজে স্নাতকে পড়াশোনা করছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি এরা শহরে পশু ও প্রাণীর ওপর বর্বরতা ও নির্মমতার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। সুমির নেতৃত্বে দুর্ঘটনায় আহত কুকুর-বিড়ালদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলছেন। সেই সঙ্গে প্রাণী বেচাকেনার বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াচ্ছেন। এ দলটির দেওয়া তথ্য নিয়ে শহরে হঠাৎ হঠাৎ অভিযানও চালাচ্ছে সরকারের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ। সুমি যেসব তরুণ-তরুণীর মনে পশুপ্রেম জাগিয়ে তুলেছেন, তারা হলেন- সাদমান ইতেয়াদ, জোবায়েদ আজিম, অনিন্দিতা সরকার উৎষা, আদিল রাফসি, এহতাসুমল হক আবরার, প্রিন্স মজুমদার, ফাইরুজ মালিহা, ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আকরাম, ফয়সাল শিকদার, তানজিম ফাতেমা, উৎপল বড়ূয়া, পৃথিবী সাহা অভি, সনেট বাপ্পা, সৌরভ রিপন, শ্রেষ্ঠ বসু, সাদিয়া আবেদীন, সামায়রা আফনি, অর্পি বিশ্বাস, নিশাত তাসনিম প্রাপ্তি, ফারদিন মুশফিরাত জাইমা, কামরুল হুদা চৌধুরী, মোহাম্মদ জামিল, সাইদা ওয়ার্সি, তাফরিহা নেহা, নিলয় ঘোষ, সাফায়েত আহাদ, রাকেশ পাল, ম. ফারহান দাওয়াদ, পারমিতা, সুদীপ মহাজন ও আরফাতুর রহমান। তারা শুধু পশুদের জন্য কাজই নয়, বিপন্ন পশুদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে সচল রাখতে প্রতি মাসে সংগঠনের তহবিলে নিজ পকেট থেকে অর্থ সহযোগিতাও দিয়ে যাচ্ছেন।

চট্টগ্রাম শহরে কুকুর-বিড়ালের ওপর নির্মমতায় কষ্ট পেতেন সুমি। ছোট থেকেই বাড়িতে মা-বাবার কুকুর-বিড়াল লালন-পালন দেখেছেন। সেই থেকে অবলা প্রাণীর মায়ায় জড়িয়ে যান তিনি। স্কুল পেরিয়ে কলেজে পড়াশোনা করার সময়ই সিদ্ধান্ত নিলেন এবার কিছু একটা করার সময় এসেছে। ২০১৫ সালে ‘অ্যানিম্যাল কেয়ার অব চট্টগ্রাম’ প্রতিষ্ঠা করেন। যাত্রা শুরুর পর ২০১৬ সাল থেকে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পুরোদমে শুরু করেন মানবিক কাজ। চলতি বছর পর্যন্ত প্রায় সাত বছরে মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকা, গরম পানিতে ঝলসানো ও দুর্ঘটনায় পা ভেঙে যাওয়া ১৫১ কুকুর-বিড়ালকে উদ্ধার করে অপারেশন ও চিকিৎসাসেবা দিয়ে সুস্থ করে নবজীবন ফিরিয়ে দিয়েছেন সুমি। একই সঙ্গে প্রায় দুই হাজারের বেশি প্রাণীকে দিয়েছেন স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও খাদ্যসেবা। করোনাকালে গত দেড় বছর ধরে তিনি রাত-বিরাত শহরের রেলস্টেশন, সিআরবি, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ, হালিশহর থেকে শুরু করে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতেও অভুক্ত শত শত কুকুর-বিড়ালের মুখে তুলে দিয়েছেন ভাত-খিচুড়ি।

পশু-পাখির প্রতি ভালোবাসা ও মমত্ববোধ দেখে মেয়ে সুমিকে ‘অ্যানিম্যাল কেয়ার শেল্টার হোমে’র জন্য নগরীর হালিশহরের আনন্দবাজারে বিশাল একটি জায়গা দেন তার বাবা। বাবার দেওয়া জায়গায় টিনশেডের একটি শেল্টার হোম তৈরি করে সেখানে মৃত্যুপথযাত্রী পশুদের রেখে চিকিৎসা ও সেবা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার শেল্টারে ৪৬টি কুকুর-বিড়াল ও বেশ কিছু পাখি পালন করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত ১১ জুন নগরীর দেওয়ানহাটে টমটম গাড়ির সঙ্গে দুর্ঘটনায় একটি কুকুরের পেছনের পা ক্ষতবিক্ষত হয়। বাঁ চোখের মনিতে আঘাত পায়। বাচ্চা কুকুরটিকে সুমি শেল্টার হোমে নিয়ে যান। সিভাসুতে নিয়ে দেড় হাজার টাকা খরচ করে ইনজেকশন ও অপারেশন করে সুস্থ করে তোলেন। একইভাবে ছয় মাস বয়সী একটি কুকুরকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চাপা দিয়ে একটি পা ভেঙে ফেলে। সেটিকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন তিনি। সুমি তার শেল্টার হোমে আহত পশুদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে সুস্থ করার পাশাপাশি প্রাণীদের নতুন নতুন নামকরণ করেন। তিন হাজার বর্গফুট আয়তনের শেল্টার হোমটি এখন বিপন্ন প্রাণীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল।

সুমির অন্যতম সহযোগী সাদমান ইতেহাদ বলেন, আমাদের সংগঠনের নিজেদের অর্থায়নে পশুদের চিকিৎসা ও খাদ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছি। অনেক সময় অর্থের অভাব হলে আমরা ফান্ড পেতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিই। অনেক প্রাণীপ্রেমী পোস্ট দেখে আমাদের সাহায্য করেন। সংগঠনটির একটি ফেসবুক পেজ ও গ্রুপ রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন