English

24 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
- Advertisement -

ইলিয়াস কাঞ্চনের সিনেমা দেখতে গিয়ে অভিনেতা জিল্লুর রহমানের প্রেম শুরু, এরপর বিয়ে, অত:পর…

- Advertisements -

সিনেমা ও নাটকের গুনী অভিনেতা জিল্লুর রহমান। অভিনেতা হিসেবে ১৯৬৯ সালে ‘বেদের মেয়ে’ নামে সিনেমায় তার অভিষেক হয়। অভিনয় জীবনে পথ চলায়  ৫০ পেরিয়ে ৫১বছরে পা রেখেছেন তিনি। দীর্ঘ এ পথ চলায় পর্দার জীবনের পাশাপাশি বাস্তব জীবনে রয়েছে তাঁর অনেক গল্প। যে গল্প গুলো কর্মব্যস্ততার কারণে হয়তো কখনো বলা হয়নি আর তা অনেকে জানেনও না।

তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আগরতলা বকুলনগর ক্যাম্পে তিনি দীর্ঘ ছয় মাস মুক্তিযোদ্ধাদের ফিজিক্যাল ইনস্ট্র্যাকটর হিসেবে কাজ করেছেন। পরবর্তীতে তিনি কুমিল্লায় আব্দুল কুদ্দুস মাখন ও শেখ ফজলুর হক মনির নির্দেশে বাঞ্চারামপুরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭৭ সালে পরিচালক সুভাষ দত্ত নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ‘বসুন্ধরা’। এ সিনেমায় কাজের মধ্যদিয়ে চলচ্চিত্র জগৎতে পা রাখেন বাংলা চলচ্চিত্রের রাজকুমার কিংবদন্তি চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। গল্পটা এখান থেকেই শুরু।

সেসময় তরুণ জিল্লুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধ করা দুরন্ত যুবক, অনেকে তাঁকে সে সময় মাস্তান বলে মনে করে ভয়ও পেতেন। এলাকায় ছিলো তাঁর অন্যরকম দাপট। ‘বসুন্ধরা’ সিনেমাটি মুক্তি পাবার পর দেখতে যান তিনি। ৩টার শো দেখার জন্য সকাল ১১টা থেকে হলের সামনে দর্শকদের ভির। হলের সামনে ভিরের মাঝে তিনি লক্ষ্য করেন এক তরুণী টিকেট কাউন্টারে সিনেমার টিকেট না পেয়ে ব্লাকে টিকেট খোঁজার চেষ্টা করছেন এবং সেখানেও তরুণী ব্যার্থ হন। বিষয়টি অভিনেতা জিল্লুরের চোখে পড়লে তিনি তরুণীর কাছে এগিয়ে যান। তরুণী জানান, তাঁর এবং পরিবারের জন্য মোট ৩টি টিকেট প্রয়োজন কিন্তু কোনভাবেই টিকেট পাচ্ছেন না বলে ফিরে যেতে হচ্ছে। তখন অভিনেতা জিল্লুর রহমান তরুণীকে আশ্বস্ত করেন টিকেট ম্যানেজ করে দেবার। তারুন্যের দাপটে তিনি তখন হলের ম্যানেজার রহমানের কাছ থেকে টিকেট সংগ্রহ করে তরুনীকে দেন। এবং ইলিয়াস কাঞ্চনের এই সিনেমা দেখার মধ্যদিয়ে সেখানেই দুজনের প্রথম পরিচয় ঘটে। প্রথম পরিচয়েই জিল্লুর রহমান তরুণীর বাসার ফোন নম্বর এবং নিজের ফোন নম্বর দেয়া নেয়ার কাজটাও সম্পন্য করেন।

এরপর ফোনে কথা বলতে বলতে ফোন নম্বরের মতো একে অপরকে মন দেয়া নেয়ার কাজটাও সেরে ফেলেন। এভাবেই চলতে থাকে দুজনার প্রেম ভালোবাসা। একটা সময় এই প্রেম ভালোবাসার কথা পরিবারের কানে যায়। কিন্তু সেসময় অভিনেতা জিল্লুর রহমান একজন অভিনেতা হিসেবে যতটানা পরিচিত ছিলেন তাঁর থেকে বেশী পরিচিত ছিলেন মাস্তান নামে। পড়া লেখার প্রতিও ছিলো কম মনোযোগ। এসব কারণে তরুণীর পরিবার তাঁদের এই সম্পর্কটি মেনে নেননা। অনেক বাধা অনেক বিপত্তি তারপরও প্রেম মানে না জাতি ধর্ম, প্রেম মানে না সমাজ। সকল বাধা অতিক্রম করে জিল্লুর রহমান একটা সময় সেই তরুণীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

বিয়ের পর জিল্লুর রহমানের স্ত্রী মতিয়া কাদেরীর পরিবার বলেছিলেন এই মেয়েটার জীবন শেষ ভবিষৎ ধ্বংস। কিন্তু না সবার সেই কথাগুলোকে মিথ্যে প্রমাণ করে জিল্লুর রহমান তাঁর স্ত্রীকে ডা: বানিয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী, মতিয়া কাদেরী থেকে হয়ে যান ডা. মতিয়া কাদেরী। বিয়ের পড়েই মতিয়া কাদেরী ইন্টার, এম.বি.বিএস, পিএসডি এবং গাইনীতে ডিগ্রী অর্জন করেন।

জিল্লুর রহমানের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় মেয়ে জুলি। বর্তমানে জুলিরও বিয়ে হয়ে গেছে তাঁর স্বামী লে: কর্ণেল শমসের।

সিনেমার ঘটনার মধ্যদিয়ে যেমন জিল্লুর রহমানের প্রেম/বিয়ের ঘটনা শুরু হয় তেমনি সিনেমার মতোই অল্প সময়েই এই গল্পটি শেষ হয়ে যায় গত বছর স্ত্রীর মৃত্যুর মদ্ধদিয়ে। কিডনি জনিত কারণে গত বছর অভিনেতা জিল্লুর রহমানের স্ত্রী মারা গেছেন। স্ত্রী’র মুত্যর শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। গল্পের শুরু এবং শেষ মাঝ খানে এতটা বছর। অন্যদিকে সেই বসুন্ধরা সিনেমার হিরো ইলিয়াস কাঞ্চন এবং জিল্লুর রহমান একই জগৎ এর মানুষ হবার পরও ব্যস্ততা ও সময় সুযোগ এর অভাবে কখনো এই কথাগুলো বলা হয়নি জিল্লুর রহমানের। আজ হঠাৎ এক সাক্ষাতে ইলিয়াস কাঞ্চনকে অভিনেতা জিল্লুর তাঁর জীবনের এই কথা গুলো জানিয়ে দিলেন। জিল্লুরের জীবনের এই গল্পটা শুনে অভিভূত হন ইলিয়াস কাঞ্চন। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আমার অনেক প্রিয় একজন শিল্পি জিল্লুর রহমান।

তিনি আমার এত কাছের একজন মানুষ এরপরও তাঁর জীবনের এই গল্পটা আমার অজানা ছিলো। এতদিন পর জেনে সত্যি অনেক ভালো লাগছে। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, একটি সিনেমা মানুষের জীবন পরিবর্তন করতে পারে। একটি সিনেমা একজন মানুষের জীবনকে অনুপ্রাণিত করে। নৈতিক মূল্যবোধ তৈরি করে এবং জীবনের লক্ষ্য সঠিক পথ বেছে নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

অভিনেতা জিল্লুর রহমানের জীবনের একটি অধ্যায় শুরু হয় আমার সিনেমা দেখতে যাবার মধ্যদিয়ে এটিই আমার কাছে প্রচন্ড রকম ভালো লাগছে। আমার জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র দেখতে গিয়ে একজন মানুষ এর জীবনের একটি গল্পের শুরু এবং এই শুরুটা দুটি জীবনের সফলতায় পরিনত হয়েছে, এটাই একটি চলচ্চিত্র একজন শিল্পির বড় অর্জন। জিল্লুর রহমান তাঁর স্ত্রীকে ডা: বানিয়েছিলেন। অনেক লড়াই করতে হয়েছে পরিবারের মানুষের সাথে পরিশেষে তিনি সফলতার মুখ দেখেছেন। একটি সিনেমার দর্শক বা একজন অভিনেতার ভক্তদের জীবন যখন এমন ভাবে পরিবর্তন হয় তখনই একটি সিনেমা বা একজন অভিনেতার জীবন সার্থক হয়।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন