English

28 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
- Advertisement -

স্ত্রীর হাতের মেহেদীর রং থাকলেও নেই শুধু স্বামী! হত্যাকান্ডের মধ্যে দিয়ে পরিবারের আশা-ভরসার মৃত্যু

- Advertisements -

স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনে বুক ভরা রঙ্গিন আশা থাকে উভয়েরই চোখে মুখে। ইমরান ও তার স্ত্রী মাসুরার হাতে এখনো রয়ে গেছে মেহেদীর রঙ। এসএসসি পাশ করে ইমরান এক্সকেভেটর মেশিন (খনন যন্ত্র) মেরামতের কাজ করতেন। পাশাপাশি জমি লিজ নিয়ে শুরর করেছিলেন মাছের ঘেরের ব্যবসা।

ছেলে ইমরান যখন সংসারের চাকা সচল ও উন্নতির জন্য রাত দিন কাজ শুরু করেন। ঠিক তখনি সব শেষ হয়ে গেল। পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির হত্যাকান্ডের মধ্যে দিয়ে একটি পরিবারের আশা-ভরসার মৃত্যু হয়েছে। ইমরানের পরিবার দেখার এখন আর কেউ নেই। তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে সবাই দিশেহারা।
মাত্র সাত মাস আগে বিয়ে করেছিলেন ইমরান (২৫)। স্ত্রী মাসুরার হাতে এখনো রয়ে গেছে মেহেদীর রঙ। এসএসসি পাশ করে ইমরান এক্সকেভেটর মেশিন (খনন যন্ত্র) মেরামতের কাজ করতেন। পাশাপাশি জমি লিজ নিয়ে শুররু করেছিলেন মাছের ঘেরের ব্যবসা।

বাবা লুৎফর রহমান মোল্যা প্রান্তিক কৃষক। নিজের সামান্য জমি আর অন্যের জমি বর্গা চাষ করেই কেটেছে তার জীবন। ছেলে ইমরান যখন সংসারের চাকা সচল ও উন্নতির জন্য রাত দিন কাজ শুরু করেন। ঠিক তখনি সব শেষ হয়ে গেল। অজ্ঞাত দুর্বৃত্তের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন ইমরান।
পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির হত্যাকান্ডের মধ্যে দিয়ে একটি পরিবারের আশা-ভরসার মৃত্যু হয়েছে। ইমরানের পরিবার দেখার এখন আর কেউ নেই। তাই ভবিষ্যতের কথা ভেবে সবাই দিশেহারা।

গত শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে মাগুরার জগদল ইউনিয়ন পরিষদের আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য দুই প্রার্থীর লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষে চার জন নিহত হন। তাদের একজন ইমরান। নিহত বাকি তিনজন দুই ভাই ও একজন তাদের চাচাতো ভাই।

এ ঘটনায় সোমবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে তিন জন নিহতের পরিবার মামলা করলেও ইমরানের মৃত্যুর ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।
এলাকার লোকজন ও কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, ইমরান অত্যন্ত ভদ্র ও শান্ত প্রকৃতির ছিলেন। সে কোনও রাজনীতি বা গ্রাম্য দলাদলির সাথে যুক্ত ছিলেন না। ভদ্র এই ছেলেটিকে কি কারণে কে বা কারা হত্যা করল সে কারণ কেউ খুঁজে পাচ্ছেন না।

মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা যায়, মাগুরার জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ইমরানের বাড়ি। বাড়িতে প্রবেশের ভালো পথ নেই। ছোট একটি ঝুপড়ি ঘর। যেখানে বাবা-মা আর স্ত্রী নিয়ে থাকতেন তিনি। এক বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে ইমরান দ্বিতীয়। বোনের বিয়ে হয়েছে। ভাই শিমুল শ্রমিকের কাজ করেন। তার পৃথক সংসার।

ইমরান নিহত হওয়ার পর কাঁদতে কাঁদতে বাবা লুৎফর রহমান ও মা ফরিদা এখন নির্বাক। সাত মাস আগে বিয়ে করা স্ত্রী মাছুরা ঘরের মধ্যে একা বসে থাকেন। কারো সামনে আসেন না। বোন তাসফিয়া শুধু বিলাপ করে যাচ্ছেন। তার আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে চারদিকের পরিবেশ।
প্রতিবেশী মনিরুল ইসলাম বলেন, ইমরান ভদ্র ও ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। তার সাথে কারও বিরোধ ছিল না। সে কোনও রাজনীতি বা গ্রাম্য দলাদলিতে জড়িত ছিলো না। ঘটনার দিন তাকে কেউ সংঘর্ষের এলাকায় দেখেনি। সে কী কারণে খুন হলো কেউ বলতে পারছে না। মিলছে না কোনো হিসাব। ইমরানের ভাই শিমুল জানান, তার ভাই এক্সকেভেটর মেশিন (খনন যন্ত্র) মেরামতের কাজ করত। কিছু জমি লিজ নিয়ে বাড়ির সামনে ঘেরে মাছ চাষ শুরু করেছিল। ঘটনার দিন সে জুমার নামাজ পড়ে বাড়িতে দুপুরের খাবার খেয়ে মাছের ঘেরে যায়। পরে সন্ধ্যায় তার লাশ পাওয়া যায় বাড়ি থেকে ৫০০ গজ দূরে মাঠের রাস্তার পাশে। সংঘর্ষের স্থান ও বাকি তিনটি লাশ উদ্ধার ও তার ভাই ইমরান হত্যাকান্ডের স্থান এক নয়।
ইমরানের বোন তাসফিয়া বলেন, বিকেলে ইমরানের মৃত্যু সংবাদ শুনতে পাই। দৌড়ে মাঠের দিকে গিয়ে দেখি চারজন লোক ইমরানের মৃতদেহ নিয়ে আসছে।

ইমরানের বাবা লুৎফর রহমান কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, সারা জীবন বর্গা জমি চাষ আর দিনমজুরের কাজ করেছি। এই ছেলেটা রাত-দিন পরিশ্রম করে সংসারের হাল ধরেছিল। যখনই একটু উন্নতির দিকে যাচ্ছিল তখনই আমার সব শেষ হয়ে গেল। আমাদের কারো সাথে শত্রুতা ছিলো না। এখন কীভাবে সংসার চলবে। কীভাবে বেঁচে থাকব, কিছুই জানি না।

মামলা কেনো করছেন না, এমন প্রশ্নে লুৎফর রহমান বলেন, আমরা খুব দরিদ্র। আর মামলা কিভাবে করতে হয়, সেটাও আমরা জানি না।

এদিকে জগদল গ্রামে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। স্বাভাবিক হয়নি জীবনযাত্রা। পুরো গ্রাম পুরুষ শূন্য। ফের হামলা-লুট আতঙ্কে গৃহস্থালি সামগ্রী ও গবাদিপশু নিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে চলে গেছেন অধিকাংশ মানুষ। খেত-খামার ব্যবসা বাণিজ্য সব অচল হয়ে পড়ে আছে। বাড়িঘর পাহারা দিচ্ছেন বৃদ্ধা ও আত্মীয়রা। গ্রামে প্রবেশের প্রধান সড়কে পুলিশকে টহল দিতে দেখা গেছে।

মাগুরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনজুরুল ইসলাম বলেন, এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চার জনকে আটক করা হয়েছে। তবে তিনি তাদের পরিচয় বা তারা এখন কোথায় আছেন সে সম্পর্কে কিছু বলতে চাননি।

ওসি আরও বলেন, ইমরান হত্যাকান্ড নিয়ে মামলা না হলেও পুলিশ তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, জগদল ইউপির ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নজরলল ইসলাম ও একই এলাকার মাতবর সবুর মোল্লার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল। শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) জগদল গ্রামে বিরোধ নিষ্পত্তির কথা বলে সমবেত হয়ে সৈয়দ রূপাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাছে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে সবুর মোল্লা, কবির মোল্লা ও রহমান মোল্লা এবং ইমরান হোসেন নিহত হন।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন