English

31 C
Dhaka
বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪
- Advertisement -

বীর মুক্তিযোদ্ধা বেগম মুশতারী শফীর ইন্তেকাল

- Advertisements -

একাত্তরের স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শব্দসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, নারীনেত্রী ও সাহিত্যিক এবং উদীচী চট্টগ্রামের সভাপতি বেগম মুশতারী শফী আর নেই।

২০ ডিসেম্বর ২০২১ সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)।

উদীচী চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক শীলা দাশগুপ্তা জানান, শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফী লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁর লাইফ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়।

Advertisements

৮৩ বছর বয়সী বেগম মুশতারী শফী দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন। এ ছাড়া বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগও ছিল। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলে ও চার মেয়েসহ অসংখ্য স্বজন রেখে গেছেন।

বেগম মুশতারী শফীর মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনে।

মুশতারী শফী ১৯৩৮ সালের ১৫ জানুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ফরিদপুর জেলায়। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাঁর স্বামী মোহাম্মদ শফী এবং ছোট ভাই এহসানকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে। তাঁর পরিবার একাত্তরে চট্টগ্রামে স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্র প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুক্তিযুদ্ধের পুরোসময় তিনি ওই বেতারকেন্দ্রের শব্দসৈনিক হিসেবে কাজ করেন।

ষাটের দশক থেকে তিনি নারী আন্দোলনেও যুক্ত ছিলেন। নব্বইয়ের দশকে শহীদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলন জোরদার হলে তিনি নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকা পালন করেন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠনে ভূমিকা পালনের পাশাপাশি তিনি এতে নেতৃত্বও দেন। শহীদজননী জাহানারা ইমামের প্রয়াণের পর দেশজুড়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনের মূল নেতৃত্বেও ছিলেন তিনি।

বেগম মুশতারী শফী দীর্ঘসময় ধরে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ও নাগরিক আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। একযুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি উদীচী চট্টগ্রামের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার বেগম মুশতারী শফী দেশে প্রগতিশীল চেতনার বাতিঘর হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন।

Advertisements

তিনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কয়েকটি অসাধারণ গ্রন্থ লিখেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো : ‘মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের নারী’, ‘চিঠি, জাহানারা ইমামকে’ ও ‘স্বাধীনতা আমার রক্তঝরা দিন’। এছাড়াও তিনি প্রবন্ধ, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনি, কিশোর গল্পগ্রন্থ, স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থও লিখেছেন।

১৯৬০-এর দশকে তিনি চট্টগ্রামে ‘বান্ধবী সংঘ’ নামে নারীদের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। এ সংগঠন থেকে তিনি ‘বান্ধবী’ নামে একটি নিয়মিত পত্রিকা প্রকাশ করেন ও ‘মেয়েদের প্রেস’ নামে একটি ছাপাখানা চালু করেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য ভূমিকা পালনের জন্য বাংলা একাডেমি ২০১৬ সালে তাঁকে ‘ফেলোশিপ’ প্রদান করে। তিনি গত বছর ২০২০ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ‘রোকেয়া পদক’।

বেগম মুশতারী শফীর মৃত্যুতে উদীচী চট্টগ্রামের সহ-সভাপতি ডা. চন্দন দাশ এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা শীলা দাশগুপ্তা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শোকবার্তায় বলা হয়েছে, উদীচীসহ চট্টগ্রামের প্রগতিশীল সংস্কৃতি অঙ্গনের অভিভাবককে হারিয়ে আমরা গভীর শোকাহত। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের প্রগতিশীল সংস্কৃতি অঙ্গনে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে সেটা কখনোই পূরণ হবার নয়।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন