English

25 C
Dhaka
বুধবার, মে ৭, ২০২৫
- Advertisement -

সিলেটের ‘নাগা মরিচ’: ঝালের জন্য বিশ্বখ্যাত

- Advertisements -

ঘ্রাণ এবং ঝালের জন্য সমাদৃত নাগা মরিচ। নাগা সিলেটের সীমান্তবর্তী পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যের নাগা নামের পার্বত্য এলাকায় এই মরিচের আদি জন্ম। তাই এর নামকরণ হয়েছে নাগা মরিচ- এমনটাই মনে করেন ভারতের আসাম ও বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের মানুষ। ভারতের আসাম, নাগাল্যান্ড, মণিপুর এবং বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে এই মরিচ বেশি চাষ হয়।

সিলেট বিভাগের মধ্যে শ্রীমঙ্গল ও জৈন্তাপুরের হরিপুরে এই মরিচের বাণিজ্যিক চাষাবাদ হয়ে থাকে। তবে জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত, নিজপাট ফতেপুর, জৈন্তাপুর ও চারিকাটা ইউনিয়নসহ অন্যান্য এলাকার নাগা মরিচের চাষ বেশি হয়।

সিলেটের প্রায় প্রতিটি বাসা-বাড়িতে এই মরিচের গাছ দেখতে পাওয়া যায়। ঘরের পাশে বা টবের মধ্যে নাগা মরিচ লাগাতে দেখা যায়।

নাগা মরিচের পাকা দশার চেয়ে কাঁচা অবস্থায়ই খাওয়া হয়। কাঁচা অবস্থায় থাকা অনন্য ঘ্রাণ পাকলে পাওয়া যায় না এবং ঝালের পরিমাণ অসহ্য হয়ে ওঠে। নাগা মরিচ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। মুখে ঘা হওয়া প্রতিরোধ করে থাকে এ মরিচ। আকারে ছোট হলেও দেখতে অনেকটা কামরাঙার মতো। যে কারণে কেউ কেউ এই মরিচকে কামরাঙা মরিচও বলে থাকেন। বোম্বে মরিচ নামেও চিনেন কেউ কেউ। তবে সিলেটে এই মরিচ নাগা মরিচ হিসেবেই সমধিক পরিচিত। ঝালের জন্য গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখানো সিলেটের এই মরিচের সুখ্যাতি রয়েছে বিশ্বজুড়ে।

ঝালের তীব্রতার কারণে নাগা মরিচ আন্তর্জাতিকভাবে সম্মাননা অর্জন করেছে। ২০০৭ সালে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ সাধারণ মরিচের চেয়ে বহুগুণ বেশি ঝাল প্রমাণিত হওয়ায় নাগা মরিচকে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল মরিচ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ঝাল পরিমাপের মানদণ্ড স্কোভিল অনুযায়ী নাগা মরিচের ঝাল মান ১০ প্লাস প্লাস প্লাস (১০+++)। যা টাবাসকো সস থেকে ৪০১ দশমিক ৫ গুণ বেশি ঝাল।

নাগামরিচ অন্যান্য ফসলের সাথে সাথী ফসল হিসেবে চাষ করে লাভবান হওয়া যায়। বেশ কিছু এলাকায় লেবু গাছের ফাঁকে ফাঁকে এ মরিচের চারা রোপন করে একসাথে চাষ করা হয়। শীত কিংবা গ্রীষ্ম উভয় মৌসুমেই নাগা মরিচের চাষ করা যায়। সঠিক পরিচর্যা পেলে একেকটি নাগা মরিচ গাছ থেকে পুরো মৌসুমে দুই শতাধিক পর্যন্ত মরিচ পাওয়া যায়।

বীজ থেকে গাছে ফলন আসতে আড়াই থেকে তিন মাস সময় প্রয়োজন হয় এ গাছের। বীজ বপনও সহজ। ১০-১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে নরম ছায়াযুক্ত মাটিতে ফেললেই এর চারা গজিয়ে ওঠে। গাছে ফুল আসার ১৫ দিন পরেই মরিচ আহরণ করা যায় গাছ থেকে। গাছে বেশিদিন রাখলে ঝাল বেড়ে যায়। চাষের জন্য দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। মাটিতে পিএইচ এর মান ৫.৫-৭০ পর্যন্ত থাকা উচিত। তবে মরিচ গাছের জন্য ভাল সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক।

সিলেটের এই নাগা মরিচ এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সবজির সাথে নাগা মরিচও রফতানি হয়ে থাকে। ফলে সিলেটের শ্রীমঙ্গল ও জৈন্তাপুরে অনেক কৃষক বাণিজ্যিকভাবে নাগা মরিচ চাষ করে থাকেন। নাগা মরিচ চাষে তারা ব্যাপক সফলও হচ্ছেন। নাগা মরিচ সারাবছরই উৎপাদন হয়। তবে শীতকালে এর ফলন বেশি হয়। ওই সময় প্রতি হালি নাগা মরিচ আকারভেদে ১০ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়। আবার বাজারে যখন নাগা মরিচের সরবরাহ কম থাকে তখন এই মরিচের হালি বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ থেকে একশ’ টাকা পর্যন্ত। সিলেট নগরীর বন্দরবাজারে পাইকারি দামে নাগা মরিচ বিক্রি হয়।

জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের উন্নতমানের নাগা মরিচ পাওয়া যায় এখানে। এছাড়া সিলেটের ছোট-বড় সকল সবজি বাজারেই মিলে এই মরিচ।

চাহিদা বেশি থাকায় বেচাকেনাও বেশি বলে জানান বিক্রেতারা, তাই এই নাগা মরিচের উৎপাদনে আরো জোর দিতে বললেন তারা।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন