English

30 C
Dhaka
শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪
- Advertisement -

বাংলাদেশে প্রথম স্মার্ট বোট উদ্বোধনের অপেক্ষায় বরগুনার জেলা প্রশাসক

- Advertisements -

বাংলাদেশে প্রথম স্মার্ট বোট উদ্বোধনের অপেক্ষায় বরগুনার জেলা প্রশাসক। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সাইক্লোন সৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবেলার লক্ষ্যে জেলে জনগোষ্ঠীর জন্য সমুদ্রগামী স্থানীয় পর্যায়ের গতানুগতিক মাছ ধরার ট্রলারকে প্রাথমিক নিরাপত্তা সরঞ্জামাদি প্রদানের মাধ্যমে স্মার্ট বোট এ উন্নীত করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বরগুনা জেলার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ আগামীকাল ৭ ডিসেম্বর জেলার বিষখালী নদীর তীরে অবস্থিত বাইনচুটকী ফেরীঘাটে বেলা ১১:০০ টায় দেশের ইতিহাসে প্রথম জলবায়ু পরিবর্তনকে বিশেষ বিবেচনায় রেখে স্মার্ট বোট স্কীমের শুভ উদ্বোধন করবেন।আয়োজনে লোকাল গভর্নমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-লজিক। সেখানে উপস্থিত থাকবেন উপ-পরিচালক, স্থানীয় সরকার বরগুনা জালাল উদ্দীন মহোদয় এবং পাথরঘাটা উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এছাড়া লজিক প্রকল্পের ইউএনডিপির জেলা কর্মকর্তাসহ পাথরঘাটা উপজেলার প্রকল্পভুক্ত ৪টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উক্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান নিয়ে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, প্রতিবছর ঝড়, জলোচ্ছাসে বরগুনার জেলেরা ক্ষতির সম্মূখীন হয়। জরুরী মূহূর্তে তারা তীরে ভীরতে পারে না, ফলে তাদের জীবন ঝুঁকির মূখে পড়ে। স্মার্ট বোট এর মাধ্যমে যেসকল সরঞ্জামাদি, যেমন- বয়া, লাইফ জ্যাকেট, ওয়াটার ফিল্টার, সোলার ইত্যাদি দেয়া হচ্ছে এগুলো ব্যবহার করে তারা সমুদ্রে জরুরী মুহুর্তে ঠিকে থাকতে পারবে।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব সাবরিনা সুলতানা বলেন, লজিক প্রকল্পের অধীনে এই উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন )কাকচিড়া, রায়হানপুর, উপজে কাজ করলেও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য পুরো বরগুনা জেলা ঝুঁকিপূর্ণ। উপজেলা মধ্যে পাথরঘাটার প্রতিটি ইউনিয়নকে লজিক প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভূক্ত করা সময়ের দাবিমাত্র। স্মার্ট বোট প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা জেলেদের জীবনমানে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবো।
সহকারী পরিচালক, স্থানীয় সরকার, মোঃ মাহফুজুর রহমান বলেন, স্মার্ট বোট এর মাধ্যমে গভীর সমুদ্রের জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে দেশের মানবসম্পদের সুরক্ষার পাশাপাশি ইলিশ উৎপাদন বেড়ে যাবে। ফলে স্মার্ট বোট স্কীমটি জাতীয় অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখবে।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রায়হানপুর- আমরা সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ আমাদের বরগুনা জেলায় এই ধরনের একটি প্রকল্প উপহার দেওয়ার জন্য। কারণ লজিক প্রকল্পের মাধ্যমে জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা সাধারন মানুষের জন্য খুবই উপকার হচ্ছে এবং আমরা জনপ্রতিনিধিরা জনগণের কাছে মূল্যায়িত হচ্ছি। বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই আমাদের ডিসি স্যারকে, যার ঐকান্তিক সহায়তায় ও দিকনির্দেশনায় আমরা স্মার্ট বোট স্কীমটি বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।
লজিক প্রকল্প, ডিস্ট্রিক্ট ক্লাইমেট ফাইন্যান্স কোঅর্ডিনেটর বলেন – স্মার্ট বোট একটি উদ্ভাবনীমূলক স্কীম, যা ইউনিয়ন পরিষদ লজিক প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে
স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন লোকাল গভর্নমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (লজিক) প্রকল্পটি ইউএনডিপি, ইউএনসিডিএফ, সিডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর অর্থায়নে দেশের ৭টি জেলায় জলবায়ু ঝুকিঁ মোকাবেলায় মোট ৭২টি ইউনিয়ন পরিষদে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রমের আওতায় জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক পরিকল্পনা প্রণয়নে ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, জলবায়ু সহনশীল কাজের জন্য দক্ষতাভিত্তিক অনুদান (পিবিসিআরজি) এবং কম্যুনিটি রেজিলিয়েন্স ফান্ড( সিআরএফ)সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম চলমান। স্মার্ট বোট মূলত ইউনিয়ন পরিষদে প্রদেয় পিবিসিআরজি বরাদ্দ দ্বারা বাস্তবায়িত একটি স্কীম। সাধারণত জেলে জনগোষ্ঠীর বিশেষ দাবিগুলোকে বিবেচনায় রেখে লজিক প্রকল্পের আওতাধীন বরগুনা জেলার বরগুনা সদর, তালতলী ও পাথরঘাটা ৩টি উপজেলার বিশেষ ১২ টি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রায় ১০০টি স্মার্ট বোট স্কীম গ্রহন করা হয়।
করোনা প্রটোকল ও উপযুক্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে একটি স্মার্ট বোট উদ্বোধন করা হবে এবং পরবর্তীতে ধাপে ধাপে বাকী স্মার্ট বোট এই মডেলকে অনুসরন করে বাস্তবায়ন করা হবে। বিজয়ের মাসে দেশের মানুষের কথা ভেবে লাল-সবুজকে উজ্জীবিত করতে লজিক প্রকল্পের এই স্মার্ট বোটটিকে আলাদাভাবে চিহ্নিতকরণের সুবিধার্থে লাল এবং সবুজ রং দ্বারা এমনভাবে রাঙানো হয়েছে, যাতে পাখির চোখে এটি একটি শস্য শ্যামলা সবুজ বাংলাদেশের কথা মনে করিয়ে দিবে। এই স্মার্ট বোটে মোট ১০ ধরনের সরঞ্জামাদি প্রদান করা হয়েছে। যেমন-লাইফ জ্যাকেট, বয়া, পানি নিরোধক ডুয়েল ব্যান্ড রেডিও (অগ/ ঋগ), হেভি ডিউটির টর্চ লাইট( রাতের উদ্ধারের জন্য), ছোট আয়না ( দিনের উদ্ধারের জন্য), হেভি ডিউটির স্ট্রব লাইট (পজিশন সিগন্যালের জন্য), ফাস্ট এইড কিট, সমুদ্রের লবণাক্ত পানিকে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য পোর্টেবল মিনি ওয়াটার ফিল্টার, কম্পাস, সোলার প্যানেল। এই স্কীমের টেকসই নিশ্চিতকরণের জন্য মোট প্রকল্প ব্যয়ে উপকারভোগীদেরও অংশদারিত্ব রয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ আরো বলেন ইলিশ উৎপাদনে দেশের ২য় অবস্থানে থাকা জেলা বরগুনায় জেলেদের নিরাপত্তার জন্য জেলা প্রশাসন সবসময় তৎপর রয়েছে। তাই দাবি করা যেতে পারে যে, দেশের জাতীয় আয়ে এই জনগোষ্ঠী অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু সমুদ্র উপকূলবর্তীয় হওয়ায় প্রতিবছর জেলে পরিবারে প্রাণহানী ঘটা একটি সাধারণ ও স্বাভাবিক ব্যাপার। আয়ের উৎস্য কম হওয়া এবং অন্য কোন আয়ের পথ না থাকায় জেলেরা জীবনের চরম ঝুকিঁ নিয়ে এই পেশায় নিয়োজিত রয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার থেকে নির্দেশনা থাকলেও মালিক পক্ষের উদাসীনতার কারণে, সমুদ্রগামী মাছ ধরার গতানুগতিক ট্রলারগুলোতে নূন্যতম প্রাথমিক সতর্কতামূলক উপকরণ নেই। যেমন- সমুদ্রে আহত হলে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকা এবং জেলেরা অতীব দরিদ্র হওয়ায় তাদের উচ্চমাত্রার রেডিও না থাকায় তারা আবহাওয়ার পুর্বাভাস জেনে নিরাপদে বাড়ী ফিরতে পারে না। এছাড়া দিকনির্দেশনা যন্ত্র না থাকায় জেলেরা যখন রাতের বেলা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হয় তখন সমুদ্রের তীরে পৌছাতে পারে না এবং খাবার পানির সংকটে পড়ে অনেক সময় সমুদ্রের নোনা পানি পান করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বর্তমানে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা, প্রচন্ডতা এবং ফ্রিকোয়েন্সি বেড়ে যাওয়ায় এই ঝুকিঁ দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে তাদের মাছ ধরার ট্রলারগুলোতে যদি আবহাওয়ার প্রাথমিক সতর্কতা এবং জরুরি কিছু উপকরণ ব্যবহারের বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকে তাহলে এই মৃত্যুর হার এবং জেলে পরিবারদের উৎকন্ঠার বিষয়টি কিছুটা হলেও হ্রাস পেতে পারে।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন