English

28 C
Dhaka
সোমবার, মে ১৯, ২০২৫
- Advertisement -

রাজশাহীতে জমে উঠছে কোরবানির হাট

- Advertisements -

পবিত্র ঈদুল আযহা সামনে রেখে রাজশাহীতে জমে উঠছে কোরবানির হাট। চলতি বছর জেলায় খামার ও গরু-ছাগলের সংখ্যা বেড়েছে। হাটে হাটে গরু-ছাগল নিয়ে ভিড় জমাচ্ছেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। তবে বেচাকেনা এখনও পুরোপুরি জমে উঠেনি পশুর হাটগুলোতে। আগামী দু-একদিনের মধ্যেই হাটে উৎসবের আমেজ বইবে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগে এবার কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৪৩ লাখেরও বেশি পশু। শুধু রাজশাহী জেলাতেই এ বছর কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪৩৭টি। এর বিপরীতে প্রস্তুত রয়েছে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৩টি পশু।

অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় এ বছর ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৬টি পশু বেশি রয়েছে। অতিরিক্ত এসব পশু বিক্রির জন্য নেওয়া হবে দেশের অন্যান্য জেলায়। বর্তমানে এসব পশু মানুষের বাসাবাড়ি ছাড়াও বিভিন্ন খামারে লালনপালন করছেন খামারিরা। তবে এবার গতবারের চেয়ে বাড়তি দাম হাঁকানো হচ্ছে।

খামারিরা বলছেন, গো-খাদ্যের লাগামছাড়া দামের কারণে কোরবানির পশুর বাজারে প্রভাব পড়বে। দাম বেশি না হলে লোকসান হবে। যদিও প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজশাহী বিভাগে এবারও কোরবানির পশুর চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। তাই দাম খুব একটা বাড়বে না। সহনীয় একটা দাম থাকবে, এতে ক্রেতা-বিক্রেতা কারও সমস্যা হবে না।

রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের খামারি সাইফুর রহমানের খামারে ছয়টি গরু আছে। এর মধ্যে চারটি কোরবানির উপযোগী। তিনি বলেন, গরুগুলো চার মাস ধরে লালনপালন করছি। কোরবানির দুই সপ্তাহ আগে থেকে বিক্রি শুরু করব।

খামার থেকেই বিক্রির চেষ্টা করব, না হলে হাটে তুলব। সব খাবারই কিনে খাওয়াতে হয়। গতবারের তুলনায় এবার গো-খাদ্যের দাম অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে ঘাস, ভুট্টা, খৈল ও ভুসির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। দাম বাড়ার এ ধারা রীতিমতো চিন্তার বিষয়।

বাঘা উপজেলার খামারি সাজদুর রহমান বলেন, প্রতিবছরই আমরা অন্তত ২০-২৫টি গরু পালন করি। এবারও ২০টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করছি। গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পশুর লালনপালন খরচও বেড়েছে। তাই প্রত্যাশিত দাম না পাওয়া পর্যন্ত বিক্রি করছি না।

দুর্গাপুর উপজেলার উজ্জ্বল হোসেন বলেন, আমার খামারে দুইটি ষাঁড় আছে। প্রত্যেকটি ওজনে সাত-আট মণের বেশি হবে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দেখতে আসছেন। কিন্তু এখন যে দাম বলছেন, তাতে খরচ উঠবে। ঈদ আসতে আরও বেশ কিছুদিন সময় আছে। এর মধ্যে কিছুটা লাভ পেলেই বিক্রি করে দেব।

নগরীর বুধপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম প্রতিবছর নিজ বাড়িতে দুই থেকে তিনটি ষাঁড় পালন করের ঈদুল আজহায় বিক্রির জন্য। তিনি বলেন, এবার দুটি ষাঁড় পালন করেছি। দুই বছর আগে দেড় লাখ টাকায় গরু দুটি কিনেছিলাম। গত ঈদে বিক্রি করিনি, এবার বিক্রি করার অপেক্ষায় ছিলাম। এগুলোর দাম এখন প্রায় আড়াই লাখ টাকা করে। এখনো হাট জমে না ওঠায় বিক্রির জন্য নেয়া হয়নি।

রাজশাহীতে গবাদিপশুর খাবার বিক্রেতা রেজাউল ইসলাম বলেন, বর্তমানে এক বস্তা গমের ভুসির দাম সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। এছাড়া খইলসহ সব ধরনের গোখাদ্যের দাম ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। আবার বিভিন্ন কোম্পানির দানাদার গোখাদ্যের (সম্পূরক) ২৫ কেজির একেকটি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায়। এছাড়া ভুট্টার আটা, চালের গুঁড়া (খুদ), অ্যাঙ্কর ভুসি, মসুরের ভুসি, সরিষার খৈলসহ সবকিছুর দাম কয়েক গুণ বেড়েছে।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আতোয়ার রহমান জানান, জেলায় এ বছর কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪৩৭টি। এর বিপরীতে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৩টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। অর্থাৎ চাহিদার তুলনায় ১ লাখ ১২ হাজার ৪৫৬টি পশু বেশি রয়েছে। অতিরিক্ত এসব পশু বিক্রির জন্য নেওয়া হবে দেশের অন্যান্য জেলায়।

রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী বলেন, ‘এখন আর ভারতীয় গরু আসে না। পর্যাপ্ত গবাদিপশুর মজুদ আমাদের নিজেদেরই আছে। বাইরের গরু আসে না বলে দাম কিছুটা বাড়তে পারে। আবার চাহিদার তুলনায় মজুদ বেশি থাকায় দাম খুব বেশি বাড়বেও না।

ফলে ধরে নেওয়া যায় যে বাজারে এমন দাম হবে যেটা ক্রেতা-বিক্রেতা সবার জন্যই ভালো হবে। কয়েকদিনের মধ্যেই হাটগুলো জমে উঠবে। বিভাগের সবচেয়ে বড় পশুহাট রাজশাহীর সিটি হাট। এটা ইতোমধ্যেই জমে উঠতে শুরু করেছে।

এদিকে, আসন্ন ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে রাজশাহী বিভাগের আট জেলার ৩০২টি হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনা হবে বলে জানিয়েছে বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর। এসব হাটের মধ্যে ১৬১টি স্থায়ী এবং ১৪১টি অস্থায়ী। বিভাগজুড়ে হাটগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে গঠন করা হয়েছে ২১৩টি ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম।

এসব টিম গাভির গর্ভ পরীক্ষা ও পশুর স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধানে কাজ করছে। এছাড়া হাটে জাল টাকা শনাক্তকরণের ব্যবস্থায় রাখা হয়েছে, আছে ব্যাংকের বুথও। পাশাপাশি হাটের ইজারাদারদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বসানো হচ্ছে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন