English

29 C
Dhaka
শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
- Advertisement -

নিঃসঙ্গ মহসিন খান যেভাবে সময় কাটাতেন

- Advertisements -
Advertisements
Advertisements

থাকতেন আলিশান ফ্ল্যাটে। ফ্ল্যাটের গ্যারেজে ছিল দুইটি গাড়ি। অর্থ-বিত্তের অভাব ছিল না তার। মানুষ হিসেবে ছিলেন অমায়িক। কিন্তু, ছিলেন নিঃসঙ্গ। স্ত্রী-ছেলে থাকেন বিদেশে। একমাত্র মেয়ে থাকেন শ্বশুরবাড়িতে। একাকিত্ব ও জীবনের নানা যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নিজের লাইসেন্সকৃত অস্ত্র দিয়ে নিজের প্রাণ প্রদীপ নিজেই নিভিয়ে দিলেন ব্যবসায়ী আবু মহসিন খান।

তাও আবার ফেসবুকে লাইভে এসে।

গত বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে রাজধানীর ধানমণ্ডির বাসায় আত্মহত্যা করেন আবু মহসিন খান। তিনি চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর ও এক সময়ের আলোচিত মডেল মুশফিকা তিনার বাবা। তার লাইভ অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেখে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন দেন। পরে পুলিশ ধানমণ্ডি ৭ নম্বর রোডের ২৫ নম্বর বাড়ির পঞ্চমতলা থেকে একটি চেয়ারে বসা অবস্থায় তার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে।

মহসিন আত্মহত্যা করার আগে বলে গেছেন যে, নিঃসঙ্গতা, ব্যবসায় ক্ষতি, পরিবারের সদস্যদের পাশে না পাওয়া ও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার কারণে নানারকম কষ্টে ছিলেন। এই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। একটি ফ্ল্যাটে একাকী থাকতে থাকতে তার মধ্যে এক ধরনের হতাশা সৃষ্টি করেছিল বলে জানা গেছে। কেমন কাটতো তার নিঃসঙ্গ জীবন? তা জানতে গতকাল সকালে তার ধানমণ্ডির বাসার ৭ নম্বর রোডের ২৫ নম্বর বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তার ফ্ল্যাটটি লাগানো। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন আলামত জব্দ করে নিয়ে গেছে।

ওই ব্যবসায়ীর মৃত্যুতে আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মহসিন খানের একাকী জীবন নিয়ে কথা হয় ওই বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী, কেয়ারটেকার ও একাধিক গৃহকর্মীর সঙ্গে। তারা মহসিন খানের ফ্ল্যাটে থাকা ও বাহিরের জীবনের নানারকম কথা জানালেন। নিরাপত্তারক্ষী সাজ্জাদ জানান, স্যার অধিকাংশ সময়ই বাসায় থাকতেন। মাঝে মাঝে তার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবরা আসতো। খাবার অনলাইনে অর্ডার করে নিয়ে আসতেন।

বাড়িটির নিরাপত্তারক্ষী ও আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবু মহসিন খান একজন অমায়িক মানুষ ছিলেন। তার ব্যবহারে সবাই মুগ্ধ ছিলেন। তিনি যে এতবড় হতাশাগ্রস্ত ছিলেন তা কেউ ভাবতেই পারেননি।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বিকালে তিনি বাসার বাইরে যান। এরপর আর বের হননি। অধিকাংশই সময় তার বাসার বিছানা, মেঝে ও টেবিলে কাগজ এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকতো। খাবারের টেবিলে ময়লার স্তূপ থাকতো। কোনো কোনো গৃহকর্মীকে এক ঘণ্টার জন্য চুক্তিভিত্তিক কাজ করিয়ে নিতেন।

সূত্র জানায়, তার বাসায় নিয়মিত কোনো গৃহকর্মী ছিল না। বাজার করার কোনো লোক না থাকার কারণে কোনো গৃহকর্মী ১০ থেকে ১৫ দিনের বেশি তার বাসায় কাজ করতে পারতেন না। যারাই গৃহকর্মী হিসেবে আসতেন তাদেরই তিনি বাজার করতে দিতেন। এ কারণে তার বাসায় বেশিদিন গৃহকর্মী থাকতে পারেননি।

এ ছাড়াও তিনি বাসার কেয়ারটেকারকে বাজার-সদাই করতে দিতেন না। খাবার তিনি নিজ মোবাইল ফোন থেকে অর্ডার করে আনাতেন। এ ছাড়াও ওই এলাকার একাধিক হোটেলের ক্যাটারিং সার্ভিসের খাবার তিনি খেতেন। এ ছাড়াও ব্যক্তিগত ছোটখাটো বাজার-সদাই তিনি সড়কের পাশের দোকান থেকে কিনে নিয়ে আসতেন।

সূত্র জানায়, প্রত্যেকদিন সকালে তিনি হাঁটতে বের হতেন। তবে করোনা বেড়ে যাওয়ার কারণে সম্প্রতি সকালে হাঁটতে বের হননি। অধিকাংশ সময় তিনি বাসাতেই থাকতেন। প্রয়োজন হলে তিনি গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন কাজের সূত্রে বিভিন্ন স্থানে যেতেন। এ ছাড়াও তার একমাত্র মেয়ে তিনা মাঝে মাঝে বাবার কাছে আসতেন।

সূত্র জানায়, তার একমাত্র ছেলে থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। মহসিন খানের স্ত্রীও ছেলের সঙ্গে থাকেন। করোনার আগে তারা একবার দেশে এসেছিলেন। আর আসেননি। এতে করে ওই ফ্ল্যাটে মহসিন খান একাকী জীবন কাটাতেন। এ ছাড়াও কিছুদিন আগে তার ক্যান্সার ধরা পড়ার পর তিনি মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েন।

ওই এলাকার বাসিন্দা শাহজাহান জানান, ধানমণ্ডি লেকে হাঁটতে গিয়ে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। খুবই কম কথা বলতেন। তার ব্যবহার মার্জিত ছিল। ওই ফ্ল্যাটে বসবাসকারী রাজিয়া নামে একজন জানান, তাদের সঙ্গে তেমন কথা বলতেন না মহসিন খান। তার বাসায় মাঝে মাঝে কিছু বয়স্ক লোকজন আসতেন।

এ বিষয়ে ধানমণ্ডি থানার ওসি একরাম আলী মিয়া জানান, ওই ব্যবসায়ী হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি আত্মকেন্দ্রিক মৃত্যু। তিনি জানান, তার পরিবার কোনো অভিযোগ না করাই তার মৃত্যুর ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আসেন চলচ্চিত্র অভিনেতা রিয়াজ। এর আগে ধানমণ্ডির বাসা থেকে গত বুধবার মধ্যরাতে আবু মহসিন খানের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে নেয়া হয়।
ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করতে সেখানে যান রিয়াজ। মর্গ থেকে বেরিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে অভিনেতা রিয়াজ বলেন, মরদেহ নিয়ে প্রথমে তার ধানমণ্ডির বাস ভবনে যাওয়া হবে। ধানমণ্ডি-৭ নম্বর মসজিদে জানাজা শেষে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধের কবরস্থানে দাফন করা হবে।
সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন