রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবরোধকারী ‘জুলাই যোদ্ধা’দের ওপর হামলা করেছে ‘প্রকৃত জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করা আরেকটি পক্ষ। এতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে উভয়পক্ষকে সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। পরে শাহবাগ মোড় দিয়ে আবার যান চলাচল শুরু হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন নিজেদের ‘জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করা একটি পক্ষ। তখন থেকেই শাহবাগে সব ধরনের যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
রাত পেরিয়ে শুক্রবার সকালেও সড়কের মাঝে ত্রিপল বিছিয়ে অবস্থান করেন তারা। আর অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন। সড়কের চারদিকে ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে রাখেন। বিকেলে জুলাই যোদ্ধাদের দুপক্ষের মাঝে হাতাহাতি মারামারি শুরু হয়।
একপক্ষের অভিযোগ, আন্দোলনকারীরা সুবিধাভোগী ষড়যন্ত্রকারী। আরেকপক্ষের অভিযোগ, আন্দোলন ভেস্তে দিতে হামলা করেছে আওয়ামী দোসররা। দুপক্ষ মারামারিতে জড়ালে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। একপর্যায়ে শাহবাগের মূল সড়ক ছাড়েন আন্দোলনকারীরা। ফলে যানচলাচল শুরু হয়।
রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, ‘জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করে একদল লোক বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রেখেছিল। তাঁদের বারবার অনুরোধ করেও সরানো যায়নি। শুক্রবার সন্ধ্যায় একই দাবি নিয়ে আরেকটি দল সেখানে আসে। দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। তখন বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিলে পুলিশ উভয় পক্ষকে সরিয়ে দেয়। পরে শাহবাগ মোড় পুরোপুরি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার থেকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে একটি পক্ষ শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখে। শুক্রবার বিকেলে ‘জুলাই যোদ্ধা’দের আরেকটি পক্ষ অবরোধের বিরোধিতা করলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। পরে সংঘাত এড়াতে পুলিশ উভয়পক্ষকে শাহবাগ মোড় থেকে সরিয়ে দেয়।
অবরোধের বিরোধিতাকারী ‘জুলাই যোদ্ধা’রা সাংবাদিকদের বলেন, প্রকৃত ‘জুলাই যোদ্ধা’রা সড়ক অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে পারেন না। কিন্তু ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে কিছু মানুষ শাহবাগ মোড় অবরোধ করে সাধারণ মানুষদের হেনস্তা করছেন। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।
শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় যানচলাচল বেশ কম ছিল, তবে শাহবাগ অবরোধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় মানুষজনকে। শাহবাগ মোড়কে কেন্দ্র করে চারপাশের সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেওয়া হয়। তবে শুক্রবার বিকেলে পাশের রাস্তাগুলো খুলে দেওয়া হয়। অর্থাৎ কাটাবন থেকে আসা যানবাহন বামদিকের পিজি হাসপাতালের সামনের রাস্তা হয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টালের দিকে যেতে পারছিল এবং ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে থেকে শাহবাগ হয়ে মৎস্যভবনের দিকে যাওয়ার রাস্তাটি খুলে দেওয়া হয়।
অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের আজীবন সম্মান, চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা দেওয়া; শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহত ব্যক্তিদের সব চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের ওপর সংঘটিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।
গত ২২ জুন জুলাই সনদ ঘোষণার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকায় জুলাই যোদ্ধা সংসদ সংবাদ সম্মেলন করে উদ্বেগ জানায়।
তারা সরকারের প্রতি প্রতিশ্রুতি পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার প্রতিশ্রুতি পালন না করলে সাধারণ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবেন তারা। রাজধানীর শাহবাগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের গেটের সামনে সংবাদ সম্মেলনে নেতারা এসব বলেন।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জুলাই যোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আরমান হোসেন শাফিন। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের মুখপাত্র মুশফিকুর রহমান আশিকসহ অন্যান্য নেতারা।