রাজধানীর মগবাজারের একটি আবাসিক হোটেলে এক দম্পতি ও তাদের সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় লাশ তিনটির ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সম্পন্ন হয়েছে।
লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনে পুলিশ উল্লেখ করেছিল, তিনজনের মৃত্যু খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে হয়ে থাকতে পারে।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরাও প্রাথমিকভাবে একই ধারণা প্রকাশ করেছেন।
সোমবার (৩০ জুন) দুপুর ২টার দিকে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. জাকিয়া তাসনিম এই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন।
ডা. জাকিয়া তাসনিম বলেন, তিনটি মরদেহের লক্ষণ দেখে প্রাথমিকভাবে আমাদেরও মনে হয়েছে এটি খাদ্যে বিষক্রিয়াজনিত মৃত্যু। তবে নিশ্চিতভাবে জানতে লাশ থেকে সংগৃহীত রক্ত ও ভিসেরা নমুনা মহাখালীর পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে।
এর আগে রমনা থানার উপ-পরিদর্শক মো. জালাল উদ্দিন লাশ তিনটির সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন। তিনি বলেন, তিনটি লাশের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে খাদ্যে বিষক্রিয়াই মৃত্যুর কারণ। তবে ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
গত রোববার (২৯ জুন) সকালে মগবাজারে ওই হোটেলে সেই দম্পতি ও তাদের ১৭ বছরের ছেলের নিথর দেহ পাওয়া যায়। তারা হলেন লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার মনির হোসেন, তার স্ত্রী স্বপ্না ও তাদের ছেলে আরাফাত হোসেন নাঈম।
আগের দিন শনিবার (২৮ জুন) তারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলে নাঈমের চিকিৎসার জন্য হোটেল সুইট স্লিপ-এ ওঠেন। সকালে এক আত্মীয় এসে দেখেন, স্বপ্না অসুস্থ হয়ে বমি করছেন। পরে স্বপ্না ও নাঈমকে হাসপাতালে নেওয়া হলে তাদের মৃত ঘোষণা করা হয়। কিছুক্ষণ পর মনিরও অসুস্থ হয়ে মারা যান।
পুলিশ ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মনির হোসেনের ঢাকার পোস্তগোলা এলাকায় একটি পাঁচতলা বাড়ি রয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি বাসও রয়েছে তার মালিকানায়। এসব দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন রফিকুল ইসলাম একজন। রফিকুলকে সঙ্গে নিয়েই হোটেলে ওঠেন মনির। রাতে পাশের একটি হোটেল থেকে খাবার এনে খাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন মনির, তার স্ত্রী ও ছেলে।
ঘটনাটির পর রফিকুল ইসলামসহ হোটেল সংশ্লিষ্ট কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম জানান, কেয়ারটেকার রফিকুল প্রাথমিকভাবে দাবি করেছেন, তিনি মনিরকে সঙ্গে নিয়ে খাবার কিনেছিলেন। কিন্তু সিসিটিভিতে দেখা যায়, রফিকুল একাই খাবার নিয়ে হোটেলে ঢুকছেন। সব বিষয় মিলিয়ে তদন্ত চলছে।
পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে জানিয়ে বলছে, সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে বিষক্রিয়া বা ইচ্ছাকৃতভাবে বিষ খাওয়ানোর সম্ভাবনা নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ।