English

26.2 C
Dhaka
শনিবার, জুলাই ৫, ২০২৫
- Advertisement -

পরীমনির রিমান্ড: হাইকোর্টে ক্ষমা চাইলেন দুই বিচারক

- Advertisements -

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমনির কয়েক দফা রিমান্ড মঞ্জুরের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দুই বিচারক হাইকোর্টে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। তারা হলেন- ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলাম।
হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তাদের আইনজীবীর মাধ্যমে এ ক্ষমা চাওয়ার আবেদন করেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পরিমনির আইনজীবী জেড আই খান পান্না।
এ বিষয়ে রোববার (৩১ অক্টোবর) নির্ধারিত দিনে ব্যাখ্যা দাখিলে সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ভার্চুয়াল বেঞ্চে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
গত ২৪ অক্টোবর নায়িকা পরীমনির রিমান্ড মঞ্জুরের বিষয়ে ব্যাখ্যা দাখিলের জন্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দুই বিচারক হাইকোর্টে এক সপ্তাহ সময় চেয়েছিলেন। ওই আবেদন শুনানি নিয়ে তাদের ব্যাখ্যা দাখিলে দুই বিচারককে আরও এক সপ্তাহ সময় দেন হাইকোর্ট।
নির্ধারিত দিনে ব্যাখ্যা দাখিলে সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট ভার্চুয়াল বেঞ্চ সময় মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
এদিন ব্যাখ্যা দাখিলে দুই বিচারকের পক্ষে এক সপ্তাহ সময়ের আবেদন করেন তাদের আইনজীবী আবদুল আলীম মিয়া জুয়েল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু ইয়াহিয়া দুলাল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মিজানুর রহমান।
পরীমনির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না এবং তার সঙ্গে ছিলেন সৈয়দা নাসরিন। রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মিজানুর রহমান মিজান আদেশের নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, মাদক আইনের মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমনির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুর বিষয়ে দুই বিচারক ও তদন্ত কর্মকর্তার (কাজী গোলাম মোস্তাফা) ব্যাখ্যা দাখিল নিয়ে শুনানির দিন ধার্য থাকলেও শুনানি হয়নি। দুই বিচারকের আইনজীবীর করা এক সপ্তাহ (নট দিজ উইক) সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তা মঞ্জুর করেছেন।
এ বিষয়ে আবদুল আলীম মিয়া জুয়েল বলেন, দুই বিচারকের লিখিত ব্যাখ্যা দাখিলের জন্য এক সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়। আদালত এক সপ্তাহ সময় মঞ্জুর করেন। এরমধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা আদালতে দাখিল করা হবে।
বিচারক দেবব্রত বিশ্বাস দ্বিতীয় দফায় দুদিন এবং বিচারক আতিকুল ইসলাম তৃতীয় দফায় পরীমনিকে একদিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছিলেন।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের কাজলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়। ওইদিন তদন্ত কর্মকর্তার ব্যাখ্যা ‘সন্তোষজনক নয়’ উল্লেখ করে ২৪ অক্টোবরের মধ্যে তাদের আবারও আদালতে ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
পাশাপাশি এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্যও ২৪ অক্টোবর দিন ধার্য রাখেন আদালত। তবে দুই বিচারকের পক্ষে সময় আবেদন করায় নির্ধারিত দিনে শুনানি না করে আদালত সময় মঞ্জুরের আদেশ দেন।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুই বিচারকের দাখিল করা লিখিত ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন বলে ওই দিনই জানিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
কোন তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে পরীমনির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে- সে বিষয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলামের দেওয়া লিখিত ব্যাখ্যা পেয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বলেন, ‘লার্নেড ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টকে শিক্ষা দিয়েছেন। ব্যাখ্যার এ অংশটুকু পড়ছি। যেখানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। এ মামলার আসামি পরীমনি বিদেশি মদ, এলএসডি, আইসসহ গ্রেফতার হন।’
ওইদিন হাইকোর্ট বলেন, ‘আমরা তাদের (বিচারক) ব্যাখ্যা দিতে বলেছিলাম যে, কেন পরীমনির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে? ব্যাখ্যায় তারা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র এলএসডি গ্রহণের পর একজন ডাব বিক্রেতার কাছ থেকে ছুরি নিয়ে নিজের গলায় পোঁচ মেরেছেন! এখানে তো সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন এবং আমাদের প্রচলিত আইনের বিরুদ্ধে। যে কারণে আমরা তাদের জবাবে সন্তুষ্ট নই।’
আদালত সেদিন আরও বলেন, ‘উনারা (বিচারক) ব্যাখ্যায় বলেছেন উপরোক্ত বিষয় সার্বিক বিবেচনায় দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার আদেশের ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে নিতান্তই ইচ্ছাকৃত নয়, সরল বিশ্বাসে ভুল।’
বিচারকদের এ ব্যাখ্যার প্রসঙ্গে ওইদিন উচ্চ আদালত বলেন, ‘এখানে যে ত্রুটি হয়েছে তা (বিচারক) বিশ্বাস করেন না। এটা বলে তো হাইকোর্টকে আন্ডারমাইন করা হয়েছে।’
সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের মাধ্যমে বিচারকদের লিখিত ব্যাখ্যা আগের দিন গত ১৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে জমা দেওয়া হয়। পরদিন হাইকোর্টে তাদের লিখিত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা হয়। এরপর আদালত আজ পরবর্তী আদেশের দিন ধার্য করেছিলেন।
গত ৪ আগস্ট পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানের পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা হয়। এ মামলায় পরীমনিকে প্রথমে চারদিন, দ্বিতীয় দফায় দুদিন, তৃতীয় দফায় একদিনসহ মোট সাতদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিফল হয়ে জজ আদালতে জামিন চান পরীমনি। তবে জজ আদালত জামিন আবেদনের শুনানির তারিখ দেরিতে নির্ধারণ করায় হাইকোর্টে আবেদন করেন তিনি। হাইকোর্ট রুলও জারি করেন। পরে জজ আদালত পরীমনির জামিন আবেদনের ওপর শুনানির তারিখ এগিয়ে আনেন। ৩১ আগস্ট তাকে জামিন দেওয়া হয়। পরদিন পরীমনি কারামুক্ত হন।
অন্যদিকে হাইকোর্টে পরীমনির আবেদনের শুনানিতে তাকে দফায় দফায় রিমান্ড নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট ওই দুই বিচারককে ব্যাখ্যা দিতে ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোলাম মোস্তাফাকে নিজের অবস্থান ও কারণ ব্যাখ্যা করতে ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় দুই বিচারকের ব্যাখ্যা আদালতে দাখিল করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তাও আদালতে উপস্থিত হন।
দফায় দফায় পরীমনির রিমান্ড মঞ্জুরের কারণ জানানোর পাশাপাশি পৃথক লিখিত ব্যাখ্যায় দুই ম্যাজিস্ট্রেট রিমান্ড মঞ্জুরের আদেশে ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে থাকলে তা ‘অনিচ্ছাকৃত ও সরল বিশ্বাসে’ বলে উল্লেখ করেছেন। অনিচ্ছাকৃত ও সরল বিশ্বাসে করা ভুলত্রুটি মার্জনা করে পৃথক ব্যাখ্যা নিয়ে অধিকতর ব্যাখ্যার দায় থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়ার আরজিও জানান দুই বিচারক।,

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/1j3j
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন