English

31 C
Dhaka
শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪
- Advertisement -

‘স্বামীর পক্ষে যে কোনো আত্মীয় দেনমোহর দিতে পারবেন’

- Advertisements -

মুসলিম বিবাহ রীতি ও ইসলামি নীতি অনুযায়ী নারীর মোহরানা স্বামীর পক্ষ থেকে শ্বশুর, ভাই বা যে কোনো আত্মীয়-অভিভাবক পরিশোধ করতে পারবেন। স্ত্রীর মোহরানা পরিশোধ সংক্রান্ত এক মামলার রায়ের ওপর এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

জিয়াউল হক নামের এক স্বামীর কাছে দেনমোহর চেয়ে স্ত্রী ফারহানা ফেরদৌসীর করা মামলায় সুনামগঞ্জের বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সিভিল আপিলের শুনানি নিয়ে বুধবার (২৩ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন।

২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া ওই রায়ের ২১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, স্বামীর পাশাপাশি তার পক্ষে তার যে কোনো অভিভাবক মোহরানা পরিশোধ করতে পারবেন। আর মোহরানা হিসেবে জমি দেওয়া হলে তা পাওয়ার জন্য পারিবারিক আদালতের আশ্রয় নিতে পারবেন স্ত্রী। অর্থাৎ পারিবারিক আদালতে মামলা দায়ের করে স্ত্রী সেই জমি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।

আদালতে জিয়াউল হকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী সুরজিৎ ভট্টাচার্য এবং ফারহানা ফেরদৌসের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এম. আলী মুর্তজা।

মামলায় আদালতে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ এবং বাইতুল মোকাররমের মুফতি মো. আব্দুল্লাহ ও ইসলামী ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মো. আবু সালেহ পাটোয়ারী। এ মামলায় তারা লিখিত ও মৌখিকভাবে বক্তব্য পেশ করে আদালতকে সহযোগিতা করেছেন।

এসব বিষয়ে আদালতে অ্যামিকাস কিউরিরা তাদের মতামত তুলে ধরে বলেছেন, মোহরানার ক্ষেত্রে এ ধরনের জমি হস্তান্তর ইসলামী নীতি অনুসারে বৈধ মোহরানা।

অ্যামিকাস কিউরিরা তাদের মতামতে বলেছেন, এটি ঋণ বা দেনা যে কোনো আকারে হতে পারে। এছাড়া মোহরানার পরিশোধ নগদ বা সম্পত্তি বা অন্য কোনো মূল্যবান জিনিসপত্রের আকারেও হতে পারে। এটি স্ত্রীর অধিকার। বিয়ের সময় বা পরে স্ত্রীর অনুকূলে মোহরানা প্রদান বা হস্তান্তর করতে স্বামীর বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

অ্যামিকাস কিউরিদের মতে, এটা আল্লাহর হুকুম এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর নির্দেশ যে, মোহরানা অবশ্যই স্বামীকে পরিশোধ করতে হবে এবং যতক্ষণ না পরিশোধ করা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তা স্বামীর ওপর ঋণ বা দায় হিসেবে বজায় থাকবে।

অ্যামিকাস কিউরিরা সর্বসম্মতভাবে আরও বলেছেন, মোহরানা প্রদানের দায় পিতা, ভাই বা কোনো আত্মীয় বা স্বামীর পক্ষ থেকে অন্য কেউ গ্রহণ করতে পারে এবং তা নগদ, মূল্যবান জিনিসপত্র এবং জমি ইত্যাদির আকারেও পরিশোধ করা যেতে পারে।

অ্যামিকাস কিউরিদের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেছেন, কোনো সম্পত্তি বা মূল্যবান জিনিসপত্র, যা ইসলামে বৈধ, তা মোহরানার রূপ নিতে পারে এবং যে কেউ এ দেনমোহর প্রদান বা হস্তান্তর করার দায়িত্ব নিতে পারে।

পর্যবেক্ষণে আদালত আরও বলেছেন, ইসলামিক পণ্ডিতদের উপরোক্ত মতামত থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে, ভূমি সম্পত্তি, ইসলামের অধীনে একটি বৈধ সম্পত্তি হওয়ায় ইসলামী নীতির অধীনে তা মোহরানা রূপ নিতে পারে এবং স্বামীর পিতাসহ যে কেউ অর্থ প্রদানের দায়িত্ব নিতে পারে।

ইসলামী পণ্ডিতদের মতামত অনুসারে, এ ধরনের জমি হস্তান্তর- ইসলামী নীতি অনুসারে বৈধ মোহরানা হিসেবে বিবেচিত হবে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, মোহরানার বিপরীতে দেওয়া জমি পেতে সুনামগঞ্জের বিচারিক আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত স্ত্রীর পক্ষে রায় দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে হাইকোর্ট স্বামীর আপিল গ্রহণ না করে তা নিষ্পত্তি করে দেন। এরপর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে স্বামীর পক্ষে লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়। ওই মামলা এখন আপিল বিভাগে বিচারাধীন।

মামলার আইনজীবী ও অ্যামিকাস কিউরিরা জানান, ২০০৫ সালের ১১ জুলাই ৫ লাখ ১ টাকা দেনমোহর ধার্য করে সুনামগঞ্জের জিয়াউল হকের সঙ্গে ফারহানা ফেরদৌসীর বিয়ে হয়। এর মধ্যে ২ লাখ টাকার অলংকার এবং আসবাবপত্র বাবদ উসুল (মোহরানা পরিশোধ) দেখানো হয়। আর ২ লাখ বাকি রাখা হয়, যা স্ত্রীর চাহিদা অনুযায়ী পরিশোধ করতে হবে বলে কাবিননামায় উল্লেখ করা হয়। বাকি ১ লাথ টাকার মোহরানার বিপরীতে স্বামী জিয়াউল হকের পিতা ছদরুল হক পুত্রবধূ ফারহানা ফেরদৌসীকে ০.০৯ একর জমি প্রদান করতে একটি বিবৃতি দেন। যা কাবিননামার ১৬ নং ধারায় উল্লেখ করা হয়।

স্বামী জিয়াউল হকের সঙ্গে ফারহানা ফেরদৌসীর দাম্পত্য জীবন চলাকালে এক পর্যায়ে জিয়াউল হক ইংল্যান্ড চলে যান এবং ২০০৮ সালের ফ্রেব্রুয়ারি থেকে ফারহানা ফেরদৌসের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এমন পরিস্থিতিতে ফারহানা তার শ্বশুরের (জিয়াউল হকের বাবা ছদরুল হক) সঙ্গে যোগাযোগ করলে শ্বশুর তাকে জানান, জিয়াউল হক তাকে কখনো ইংল্যান্ড নিয়ে যাবে না।

এরপর ফারহানা কাবিননামায় উল্লিখিত জমিসহ (জমি ০.০৯ একর) দেনমোহরের অবশিষ্ট অংশ (মোহরানার বিপরীতে বাকি থাকা ২ লাখ টাকা) দাবি করেন। কিন্তু তার দাবি প্রত্যাখ্যান করেন শ্বশুর।

একইসঙ্গে ফারহানাকে বিয়ের সময় ০.০৯ একর জমি দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে এবং এ বিষয়ে কোনো কিছু প্রতিশ্রতিও দেওয়া হয়নি বলে জানান। এছাড়া কাবিননামায় কখনো কিছু লেখেননি বলে তাকে জানানো হয়। পাশাপাশি ছদরুল হক ফারহানার বিয়ের কাবিননামা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন।

এমতাবস্থায় ফারহানা ০.০৯ একর জমির সাহাম (জমির প্রদত্ত হিস্যা) চেয়ে বিচারিক আদালতে (ভাটোয়ারা) মামলা দায়ের করেন।

এরপর বাদী-বিবাদী উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালত মামলার বাদী ফারহানার পক্ষে রায় দেন।

এরপর বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৬ জুন হাইকোর্টে সিভিল আপিল দায়ের করেন ছদরুল হক। এরপর দীর্ঘ সময় শুনানি শেষে ২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের রায় বহাল রেখে আরও কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে আপিলটি নিষ্পত্তি করে দেন।

একইসঙ্গে বিচারিক আদালতের বাদী এবং হাইকোর্টে আপিল মামলার বিবাদী ফারহানাকে একই জমির বিষয়ে এ রায়ের অনুলিপি প্রাপ্তির ৪ (চার) মাসের মধ্যে পারিবারিক আদালতে একটি নতুন মামলা দায়ের করার অনুমতি দেন।

তবে জিয়াউল হকের আইনজীবী সুরজিৎ ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, তারা হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করেছেন।

তিনি জানান, মামলা চলাকালেই জিয়াউল হকের সঙ্গে ফারহানা ফেরদৌসের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে। বর্তমানে দুজনই আলাদাভাবে লন্ডনে থাকছেন।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন