নাসিম রুমি: আপাতত থমকে আছে সাকিব আল হাসানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার। এক বছরের বেশি সময় ধরে জাতীয় দলের বাইরে তিনি। তবে আবার বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার আশা ছাড়ছেন না এই অলরাউন্ডার। ঘরের মাঠে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির পূর্ণাঙ্গ একটি সিরিজ খেলে অবসরের ইচ্ছা দেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারের। আরেকটি বিষয় স্পষ্ট করে বললেন, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে রাজনীতিও চালিয়ে যেতে চাই।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত সফরের পর আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখা যায়নি সাকিবকে। পরের মাসে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। কিন্তু নিরাপত্তা শঙ্কায় দেশেই ফিরতে পারেননি অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার।
মূলত গত বছরের অগাস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই অনিশ্চয়তা শুরু হয় সাকিবকে নিয়ে। এরপর আর দেশে ফিরতে পারেননি তিনি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ভোট করে মাগুরার এমপি হয়ে সংসদে গিয়েছিলেন সাকিব। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, আন্দোলন দমাতে গুলির ঘটনায় অনেকের বিরুদ্ধেই হত্যা মামলা হয়, এর মধ্যে একটি মামলায় সাকিবও আসামি।
বর্তমানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আইএল টি-টোয়েন্টিতে খেলছেন সাকিব। রোববার প্রকাশিত ‘বিয়ার্ড বিফোর উইকেট’ পডকাস্ট-এ থমকে থাকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। সেখানেই তুলে ধরেন রাজনীতি চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছার কথা।
“আমার মনে হয়, ক্রিকেট ক্যারিয়ারের অংশ প্রায় শেষ করে ফেলেছি আমি। হয়তো রাজনীতির অংশ এখনও বাকি আছে। এটা এমন কিছু যা আমি বাংলাদেশের মানুষ ও মাগুরাবাসীর জন্য করতে চাই। এটা ছিল আমার ইচ্ছা, যা এখনও আছে। দেখা যাক, আল্লাহ আমাকে কোথায় নিয়ে যান।”
গত বছরে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের আগের দিন কানপুরে সাকিব জানিয়ে দেন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে শেষ ম্যাচটি তিনি খেলে ফেলেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে বিদায় জানাতে চান টেস্ট ক্রিকেটকেও। এছাড়া গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পরিকল্পনাও বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তিনি। কোনো ইচ্ছাই তার পূরণ হয়নি।
এখন সাকিব বললেন, তিন সংস্করণেই দেশের মাটিতে একটি সিরিজ খেলে অবসর নেওয়ার ইচ্ছা তার।
“আনুষ্ঠানিকভাবে সব সংস্করণ থেকে অবসর নেইনি আমি। এই প্রথম এটি প্রকাশ করছি। আমার পরিকল্পনা হলো বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে ওয়ানডে, টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির একটি পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলে অবসর নেওয়া।”
“আমি বলতে চাই, একটি সিরিজে সব সংস্করণ থেকে অবসর নিতে পারি। এটি টি-টোয়েন্টি দিয়ে শুরু করে ওয়ানডে ও টেস্ট, অথবা টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি-এভাবে হতে পারে। এর যেভাবেই হোক, আমি খুশি; কিন্তু আমি একটি পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলে অবসর নিতে চাই। এটাই আমি চাই।”
বাংলাদেশে ফেরার প্রশ্নে সাকিব বলেন, “আমি আশাবাদী। এজন্যই আমি (টি-টোয়েন্টি লিগ) খেলছি। আমার মনে হয় এটা হবে।”
বছরের পর বছর ধরে সমর্থনের জন্য ভক্তদেরও ‘কিছু ফিরিয়ে দিতে’ চান ৩৮ বছর বয়সী ক্রিকেটার।
“আমার মনে হয়, যখন একজন খেলোয়াড় কিছু বলে, তার কথায় অটল থাকার চেষ্টা করে। তারা সাধারণত হঠাৎ করে তা পরিবর্তন করে না। আমি ভালো খেলি কি-না, তা বিবেচ্য নয়। এরপর, আমি একটা খারাপ সিরিজও খেলতে পারি।”
“আমার মনে হয় এটাই যথেষ্ট। এটা ভক্তদের বিদায় জানানোর একটা ভালো উপায় যে, তারা সবসময় আমাকে সমর্থন করেছে, ঘরের মাঠে সিরিজ খেলে তাদের কিছু ফিরিয়ে দেওয়া।”
