English

16 C
Dhaka
বুধবার, ডিসেম্বর ১১, ২০২৪
- Advertisement -

আনোয়ারা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন চৌধুরীর যাদুর চেরাগ কাফকো

- Advertisements -

জসিম উদ্দিন চৌধুরী। আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কাফকো সিবিএর সভাপতি। এক সময়ে জাতীয় পার্টি করা জসিমের আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরু হয় প্রাক্তন মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের হাত ধরে। কাফকোতে শ্রমিকের চাকরি করা জসিম আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েই বুঝে নেন, মন্ত্রী জাবেদ সাহেবের এপিএস সায়েমের আস্হাভাজন হওয়া ছাড়া আনোয়ারার আওয়ামী রাজনীতিতে আগানো যাবে না।

ঢুকে যান সায়েম সিন্ডিকেটে।অতি ধুরন্ধর জসিম এপিএস সায়েমের আশির্বাদে জাতীয় শ্রমিক লীগ, আনোয়ারা উপজেলার সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে সভাপতি হন।শ্রমিক লীগের সভাপতি হয়েই আর পিছু ফিরে তাকাতে হয় নি। সায়েমের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে বেড়ি বাধের কাজে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।কেপিজেডে ও একটি কেন্টিন সহ ঝুটের ব্যবসা বাগিয়ে নেন।

২০১৮ সালে সায়েমের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় কাফকো সিবিএর সভাপতি নির্বাচিত হন। সিবিএর সভাপতি হওয়ার পর কাফকোতে নিজের একচ্ছত্র সাম্রাজ্য গড়ে তুলেন। ফরমালডিহাইড কেরিং এর কাজে নিয়োজিত লোককে বের করে দিয়ে নিজের লোককে দেন। সার লোডিং ও ব্যাগ সাপ্লাই থেকে মাসিক কয়েক লক্ষ টাকা করে মাসোহারা নিতেন। কাফকো থেকে একটা গাড়ি নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক কাজে এখনো ব্যবহার করছেন। শুধু তাই নয়, কাফকোতে কর্মরত অফিসার শ্রমিকদের জন্য অফিস ড্রেস, জ্যাকেট, জুতা, বেল্ট সরবরাহের জন্য টেন্ডারের তোয়াক্কা না করে নিজের লোক দিয়ে নিম্নমানের জিনিস সরবরাহ করে ৭০/৮০ লক্ষ টাকা তসরুফ করেন।

যা কাফকোর ইতিহাসে আগে কখনো ঘটেনি।এসব কারণে শ্রমিক/কর্মচারীদের কাছে অজনপ্রিয় হয়ে পড়ায় গত ২০২২ সালের জুন মাসে এপিএস সায়েমের সহযোগিতায় সিবিএ নির্বাচনে কাউকে ফরম কিনতে না দিয়ে সম্পুর্ণ অবৈধভাবে ২য় বারের মত উনার আজ্ঞাবহ লোকদের নিয়ে কাফকো সভাপতির পদ দখল করেন। বিগত ৫ বছরে সিবিএ পরিচালনায় করেছেন নানা রকম দূর্নীতি ও টেন্ডারবাজি, দীর্ঘ দিনের ডেলি লেবার সাপ্লাইকারি শাহজাহান এন্টার প্রাইজ ও বৈধ হাউজিং মেন্টেইনেন্স কন্ট্রাক্টর থেকে জোরপূর্বক কাজ কেড়ে নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা ও মাসিক মাসোহারার শর্তে আর এ এন্টারপ্রাইজকে টেন্ডার পাইয়ে দেয়। এছাড়া ও হাউজিং এ নতুন টাইলস লাগানোর কোটি টাকার কাজ কোন টেন্ডার ছাড়া নিজের লোক বটতলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফকে দিয়ে নিম্ন মানের টাইলস সামগ্রী ব্যবহার করে হাতিয়ে নেন লক্ষ লক্ষ টাকা।

আর এইসব দূর্নীতি ও লুটপাট এ তার বিশ্বস্ত সহযোগী ছিল সিবিএর সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মহসিন। এইসবের বিনিময়ে মহসিন পেয়েছে হাউজিং এ অবৈধ বাসা, বিনা সার্কুলার ও ইন্টারভিউতে বোনের চাকরি, ডেলি লেবার এ নিজের ভাগিনাসহ আত্মীয় স্বজনদের নিয়োগ। ২০২২ সালে ডিসেম্বর মাসে বিপুল পরিমাণ অবৈধ টাকা খরচ করে কাফকো সভাপতি জসিম বিনা কাউন্সিলে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। যা আনোয়ারায় তখন আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কিন্তু তৎকালীন মন্ত্রী জাবেদ ও উনার এপিএস সায়েমের ভয়ে সবাই এই কমিটিকে মেনে নিতে বাধ্য হয়। আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর জসিম আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন। সিবিএ অফিস ছিল অঘোষিত আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস ও টর্চার সেল।

কোথাও কেউ কোন বিরুদ্ধ আচরণ করলে তাকে সেখানে ডেকে নিয়ে গিয়ে মানসিক ও শারীরিকভাবে হেনস্তা করতেন।

আনোয়ারায় সার কেরিং সিন্ডিকেট সাউথ ট্রেডিং ও কেইপিজেড কন্ট্রাক্টর, সয়ার কাজে জড়িত সিন্ডিকেট, বসুন্ধরা প্রজেক্ট সহ ছোটবড় সকল প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক চাঁদা আদায় করত এই জসিম। শুধু তাই না, জসিম কাফকোতে বিভিন্ন শাখায় স্হায়ী চাকুরি দেয়ার কথা বলে প্রায় ১৫/২০ জনের কাছ থেকে জন প্রতি ১৪/১৫ লক্ষ টাকা করে নেয়।কিন্তু গত দুই বছরেও কাফকো ম্যানেজমেন্টকে এসব লোককে চাকরিতে ঢুকানোর জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করেও রাজি করাতে পারেন নি। এর ভিতরে গত জুলাইয়ের ছাত্রগন বিপ্লবে আওয়ামী লীগের পতন হয়। জসিম আত্মগোপনে চলে যায়।

ভয়ে নিজের ফেসবুক একাউন্ট থেকেও সমস্ত ছবি প্রমাণ মুছে দেন। চাকরির কথা বলে যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল,তারা কাফকো গেটে এসে সিবিএ সভাপতি জসিম থেকে টাকা ফেরত নেয়ার জন্য খোজাখুজি করায় ফাস হয়ে যায় লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ নেয়ার ঘটনা।

ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সিবিএ সভাপতি জসিম রাতারাতি ভোল পালটিয়ে ফেলে তার আপন বড় ভাই দক্ষিণ জেলা ও থানা বিএনপি নেতা মঞ্জুর উদ্দিন চৌধুরীর নাম ব্যবহার করে মামলা ও নিরীহ পাওনাদারদের হুমকি দেয়া শুরু করে। ২০১৪ সাল থেকে কাফকোতে একদিনও অফিস না করা(যা কাফকোর বায়োমেট্রিক এটেনডেন্স মেশিন চেক করলে ধরা পড়বে) সভাপতি জসিম, সিবিএর মেয়াদ শেষ হওয়া সত্বেও অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে। সাধারণ শ্রমিক কর্মচারীরা ইতিমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সিবিএ নির্বাচনের জন্য শ্রম অধিদপ্তরে আবেদন করেছে।ইতিমধ্যে ৪/৫ পাওনাদাররাও(যাদের কাছ থেকে কাফকোতে চাকরি দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়া হয়েছে) জসিমের বিরুদ্ধে থানায় মামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

একসময়ের সাধারণ শ্রমিকের চাকরি করা আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিবিএ সভাপতি জসিম এখন শহরে কয়েক কোটি টাকার জায়গা, কোটি টাকার ফ্লাট ও আনোয়ারায় বিঘা বিঘা জমির মালিক। কোন যাদুর বলে জসিম এত কোটি টাকার মালিক বনে গেল, তা নিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে যাবে বলে আনোয়ারার সচেতন মহল মনে করছেন।

Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন