চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার মদুনাঘাট সেতু এলাকায় রাউজানের ব্যবসায়ী ও বিএনপির কর্মী আবদুল হাকিম হত্যা (৬৫) মামলায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় হত্যার কাজে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু এসব তথ্য জানান।
বালুমহালের নিয়ন্ত্রণ ও স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে এবং ঘটনায় জড়িত মূল পরিকল্পনাকারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- আব্দুল্লাহ খোকন ওরফে ল্যাংড়া খোকন, মো. মারুফ, সাকলাইন হোসেন ও জিয়াউর রহমান। এদের মধ্যে সাকলাইন হোসেনকে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গত ৭ অক্টোবর সকালে ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম নিজ প্রাইভেটকারযোগে রাউজানের নিজ এলাকা বাগোয়ানের ‘হামিম এগ্রো ফার্মে’ যান। বিকেলে চট্টগ্রাম শহরে ফেরার পথে মদুনাঘাট ব্রিজের পশ্চিম পাশে পৌঁছালে মোটরসাইকেলযোগে আসা অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা তার গাড়ির সামনে এসে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাকিম গুরুতর আহত হন এবং পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ঘটনার পরপরই চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা শাখা ও হাটহাজারী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করে এবং গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে।
তদন্তের ধারাবাহিকতায় গত ৩১ অক্টোবর রাউজান থানাধীন বাগোয়ান ইউনিয়নের গরীব উল্লাহ পাড়া এলাকা থেকে মো. আব্দুল্লাহ খোকনকে গ্রেপ্তার হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হাকিম হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করে এবং পরবর্তীতে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
খোকনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২ নভেম্বর রাউজান থানার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরীহাট এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত মারুফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে মারুফ হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রের অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়, যা তার সহযোগী মো. সাকলাইন হোসেনের হেফাজতে ছিল বলে জানায়।
এরপর ৪ নভেম্বর রাতে হাটহাজারী থানার একটি বিশেষ টিম নোয়াপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. সাকলাইন হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। তার হেফাজত থেকে হত্যায় ব্যবহৃত দেশীয় তৈরি একনলা বন্দুক, একটি এলজি ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। অভিযানের ধারাবাহিকতায় বাগোয়ানের পাঁচখাইন এলাকার নিহত আব্দুল হাকিম চৌধুরীর প্রতিবেশী জিয়াউর রহমান নামের আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট চারজনকে আটক করা হয়েছে।
এছাড়া পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে আরও ১০ থেকে ১২ জনের নাম শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, হাকিম হত্যার সঙ্গে জড়িতদের আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম জেলার নোয়াপাড়া, চৌধুরীহাট ও আশপাশের এলাকায় ইতোমধ্যে চেকপোস্ট স্থাপন, টহল জোরদার, বিশেষ অভিযান ও রাত্রীকালীন সাঁড়াশি তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমন ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশের সমন্বিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
নিহত আব্দুল হাকিম চৌধুরী রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচ খাইন এলাকার মৃত আলী মদন চৌধুরীর ছেলে এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী পরিচিত ছিলেন। তার কোন দলীয় পদ-পদবী না থাকলেও তিনি স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
