English

28 C
Dhaka
শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
- Advertisement -

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে স্বামীর নির্যাতনে নিপার মৃত্যু, দেড় লাখ টাকায় দফা-রফার চেষ্টা

- Advertisements -

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এসএসসি পরীক্ষা দেয়া নিপা দাসকে নির্যাতনের পর গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে বলে মা আন্না রানী দাস অভিযোগ করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে মির্জাপুর উপজেলার আনাইতারা ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামে। ঘটনাটি মীমাংসার জন্য গ্রামের কয়েকজন প্রভবাশালী ব্যক্তি দেড় লাখ টাকায় আপোষ করতে নানা ধরনের চাপ প্রয়োগ করছেন বলেও আন্না রানী দাস অভিযোগ করেছেন।

আজ সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিপার বাবার বাড়িতে সরজমিন গেলে নিপার মাসহ আশপাশের বাড়ির লোকজন এই অভিযাগ করেন।

নিপা এবার এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।

Advertisements

জানা গেছে,  আড়াই বছর আগে মামুদপুর গ্রামের মৃত রতন চন্দ্র দাসের মেয়ে নিপা দাসকে ১৩ বছর বয়সে পাশের বাড়ির পবন দাসের ছেলে মানিক চন্দ্র দাসের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের ৩-৪ মাস পর থেকে নিপার ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে স্বামী মানিক চন্দ্র দাস। দিনের পর দিন নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বিয়ের প্রায় দেড় বছর পর পরিবার নিপাকে দিয়ে মানিককে ডিভোর্স দেয়। এরপর গত সাত মাস আগে গ্রামের লোকজন পুনরায় মানিকের সঙ্গে নিপার বিয়ে দেন। বিয়ের পর ফের নিপার ওপর নির্যাতন শুরু করে স্বামী মানিক।

গত মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে স্বামী মানিক চন্দ্র দাস বাড়ির লোকজনের উপস্থিতে নিপাকে বেদম মারপিট করে। সন্ধার দিকে বাড়ির লোকজনকে মানিক জানায়, গলায় ওড়না পেচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে নিপা। এ বলে নিপার মরদেহ ঘরের বাইরে আনে। খবর পেয়ে মির্জাপুর থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।

এদিকে ঘটনাটি মীমাংসার জন্য গ্রামের কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি উঠেপড়ে লাগে। তারা নিপার মা আন্না দাসকে নানা ধরনের চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। গত শনিবার সন্ধায় (২৬ ফেব্রুয়ারি) আনাইতারা ইউপি কার্যালয়ে ইউপি চেয়ারম্যান, গ্রামের লোকজন ও উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে সাদা কাগজে আন্না দাসের স্বাক্ষর নিয়ে সালিশি বৈঠক করা হয়। এতে দেড় লাখ টাকায় রফা করা হয়। সালিশি বৈঠকে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে ৫০ হাজার টাকা জমাও দেন মানিক।

নিপার পার্শ্ববর্তী বাড়ির রেবেকা বেগম জানান, নিপা ভদ্র ও মেধাবী ছাত্রী ছিল। এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। আইনের মাধ্যমে স্বামী মানিকের শাস্তি চান তিনি।

নিপার খালা কাকন চন্দ্র দাস, মামাতো ভাই দীপংকর বলেন, টাকা দিয়ে জীবন পাওয়া যায় না। হাত পা বেঁধে গলা টিপে নিপাকে হত্যা করা হয়েছে। ঘারও ভাঙা হয়েছে বলে তারা দাবি করেন। নিপার বৃদ্ধা নানী দুলালী চন্দ্র দাস কান্না করতে করতে বলেন, এর আগেও নৌকার মধ্যে নিয়ে আমার নাতনীকে খুন করার চেষ্টা করে মানিক।

Advertisements

নিপার মা আন্না চন্দ্র দাস বলেন, গ্রামের কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মানিকের সাথে ১৩ বছর বয়সে নিপাকে বিয়ে দিতে বাধ্য করেছে। বিয়ের পর নির্যাতন চালানোয় ডিভোর্স দিয়ে নিপাকে বাড়িতে আনি। কয়েক মাস পর আবার তারাই আমার মেয়েকে মন্দিরে বিয়ে দেন। আমরা টাকা চাই না, আইনের মাধ্যমে খুনি মানিক চন্দ্র দাসের শাস্তি চাই। আমরা নিরীহ হওয়ায় কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাই।

মানিক চন্দ্র দাস ও তার বাবা পবন চন্দ্র দাস গা ঢাকা দেওয়ায় তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে মানিকের চাচা গোবিন্দ চন্দ্র দাস ও ফুপা সুনিল চন্দ্র দাস বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব দেড় লাখ টাকায় ঘটনাটি মীমাংসা করে দিয়েছেন।

আনাইতারা ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল ময়নাল জানান, উভয় পক্ষের মধ্যে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়েছে। এজন্য মানিককে সালিশি বৈঠকে দেড় লাখ টাকা ধার্য করে দিতে বলা হয়। মানিক ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা দিতে তিন দিনের সময় নিয়েছেন বলে জানান।

মির্জাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হাবিবুর রহমান উকিলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আইনী পক্রিয়া শেষে মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি ইউডি মামলা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে এটি হত্যা না আত্মহত্যা।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন