English

28 C
Dhaka
শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
- Advertisement -

ঢোল-তবলা বাজিয়ে নেচে-গেয়ে কিশোরের মরদেহ দাফন: ভণ্ডপীর শামীম কারাগারে

- Advertisements -

ঢোল-তবলা বাজিয়ে নেচে-গেয়ে কিশোরের মরদেহ দাফন করার ঘটনায় কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের আলোচিত সেই ভণ্ডপীর আব্দুর রহমান ওরফে শামীমকে (৬৫) কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।

শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে নিজ আস্তানা থেকে তাকে গ্রেফতার করে দৌলতপুর থানা পুলিশ।

কথিত ভণ্ডপীর শামীমকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে এ নিয়ে দৌলতপুরে তোলপাড় শুরু হয়। খবর প্রকাশের পর কথিত ভণ্ডপীর শামীমকে গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এলাকাবাসী জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড় আইলচারা গ্রামের মৃত হেলাল উদ্দিনের ছেলে হাক্কানী দরবার শরিফের পক্ষ থেকে খালিদ হাসান সিপাই ধর্ম অবমাননাসহ আরও কয়েকটি অভিযোগ এনে কথিত ভণ্ডপীর শামীমের বিরুদ্ধে গত ২৯ জুন কুষ্টিয়া চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

আদালতের নির্দেশে বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে অভিযোগটি নিয়মিত মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে দৌলতপুর থানা। মামলার একদিন পর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তাকে নিজ আস্তানা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

মামলার বাদী খালিদ হাসান সিপাই জানান, প্রত্যেকের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো ধর্ম পালনের স্বাধীনতা রয়েছে। তাই বলে ধর্মকে বিকৃত করে সমাজের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির করার অধিকার কারও নেই। ধর্মকে বিকৃত করার জন্য একজন মুসলমান হিসেবে নিজ উদ্যোগে তিনি মামলাটি দায়ের করেছেন।

Advertisements

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দৌলতপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম জানান, শামীমের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানা ছাড়াও মানুষকে জিম্মি করে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও চাঁদাবাজিসহ মামলার এজাহারে আটটি অভিযোগ আনা হয়েছে। শুক্রবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের পশ্চিম-দক্ষিণ ফিলিপনগর গ্রামের মহসিন আলীর ছেলে আঁখি (১৭) ক্যান্সারে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। মহাসিন আলী ওই গ্রামের কথিত ভণ্ডপীর শামীমের অনুসারী হওয়ায় ছেলের মরদেহ তার হাতে তুলে দেন।

ওইদিন রাতে শামীম তার অনুসারীদের নিয়ে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নেচে-গেয়ে আঁখির মরদেহ দাফন  করেন। স্থানীয় মুসল্লিরা এর তীব্র বিরোধিতা করলেও শামীম ও তার অনুসারীরা কর্ণপাত না করেই তাদের রীতি মেনে মরদেহ দাফন করেন। নেচে-গেয়ে মরদেহ দাফনের ওই ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দিলে তা ভাইরাল হয়।

ভণ্ডপীর আব্দুর রহমান শামীম। যেখানে তার অন্তত দুই শতাধিক ভক্ত-অনুসারী উপস্থিত ছিলেন। এ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে জেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

কে এ ভণ্ডপীর শামীম?
শামীমের পুরো নাম মো. শামীম রেজা। তার বাবা মৃত জেসের মাস্টার, ছিলেন স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। তার বড় ভাই শান্টুও স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ছিলেন।

শামীম পশ্চিম-দক্ষিণ ফিলিপনগর গ্রামের ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। ১৯৮৪ সালে ফিলিপনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। কুমারখালী ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ভেড়ামারা কলেজ থেকে বি কম পাস করে পরবর্তীতে ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এম.কম পাস করেন।

পড়ালেখা শেষ করে ঢাকার জিনজিরা এলাকায় একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন শামীম রেজা। পরবর্তীতে ওই চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জের গোলাম-এ-বাবা কালান্দার জাহাঙ্গীর সুরেশ্বরীর মুরিদ হন এবং খাদেম হিসেবে সেখানে বসবাস শুরু করেন।

কথিত পীর গোলাম-এ-বাবা কালান্দার জাহাঙ্গীর সুরেশ্বরীর মুরিদ হওয়ার পর থেকে শামীম পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরিবারের সদস্যরা অনেক খোঁজাখুজি করেও শামীমের সন্ধান লাভে ব্যর্থ হন।

Advertisements

২০০৭ সালে শামীম বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু সে বিয়ে দুই-তিন মাসের বেশি টেকেনি। প্রায় বছর দুয়েক আগেই হঠাৎ করেই শামীম নিজ গ্রাম ইসলামপুর ফিরে আসেন এবং তার বাড়িতেই আস্তানা গড়ে তোলেন। যে শামীম এক সময় জিন্সের প্যান্ট-গেঞ্জি পরে ঘুরে বেড়াতেন, এলাকায় ফিরে আসার পর দেখা যায় শামীমের মুখে লম্বা দাঁড়ি। গেরুয়া-পাঞ্জাবি পরা। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া প্রায় দুই বিঘা জায়গা নিয়ে শামীম বসবাস শুরু করেন। সেখানেই তার আস্তানা।

স্থানীয়রা জানান, শামীম এবং তার অনুসারীরা পুরোপুরি নাস্তিক। তারা ইসলাম ধর্ম, আল্লাহ, নবী-রসুল কোনো কিছুকেই বিশ্বাস করে না।

শামীমের আস্তানায় সব সময় কমবেশি লোকজন আসা যাওয়া করতে দেখা যায়। ফকির-সাধু ভেবে এলাকাবাসী এতোদিন তাকে গুরুত্ব দিতেন না। কিন্তু দিনে দিনে শামীমের আস্তানায় তরুণ-তরুণী, নারী-পুরুষ, শিশু থেকে সব বয়সী মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে।

প্রায় রাতেই আস্তানায় ঢোল-ঢগর বাজিয়ে অশ্লীল নাচ-গানের আসর বসতে দেখা যায়। গান-বাজনার পাশাপাশি চলে গাঁজা-ইয়াবা সেবনের আসর।

বছরে দুই একবার শামীমের আস্তানায় ওরস বসে। তার শত শত ভক্ত-অনুসারীরা এখানে ভিড় জমান। অনেকটা হিন্দুরীতিতে নেচে-গেয়ে তারা শামীমের নাম যপ করতে থাকেন।

এলাকাবাসী জানান, শামীমের ভক্ত-অনুসারীদের বেশিরভাগই অল্প বয়সী তরুণ-তরুণী। শামীম নিজে এবং তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন অনুসারী অশিক্ষিত এবং অল্প শিক্ষিত মানুষজনকে মগজ ধোলাই করে শিষ্যত্ব লাভে বাধ্য করেন। প্রায় দুই বছর ধরে তার আস্তানায় নাচ-গানসহ অশ্লীল এবং ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড চললেও মূলত গত ১৬ মার্চ আাঁখি নামের এক কিশোরের মরদেহ ঢোল-তবলা বাজিয়ে নেচে-গেয়ে দাফন করার পর থেকে শামীম সবার আলোচনায় চলে আসেন।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন