English

38 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪
- Advertisement -

ফেসবুকে পরিচয়, প্রেম, বিয়ে; অতঃপর দেহ ব্যবসা, ভারতে পাচার!

- Advertisements -

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টিকটকের মাধ্যমে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বেতাপুর গ্রামের কিবরিয়া মিয়ার ছেলে সোহেল মিয়ার (২৫) সঙ্গে তিন বছর আগে পরিচয় হয় পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার ডেমরা গ্রামের রুকশিপাড়া এলাকার এক যুবতীর (২২)। পরিচয়ের সুবাদে ভালোবাসার গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমিক সোহেল ভালোবাসার দুর্বলতার সুযোগে সাতক্ষীরা জেলার সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতের কলকাতায় নিয়ে যায় প্রেমিকাকে। এ সময় তাঁকে (যুবতীকে) আটকে রেখে দেহ ব্যবসা করতে বাধ্য করে সোহেল।

পরে বিয়ে করে তাঁরা। এবার আবারও সোহেলের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় গত ১২ মে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়ন দিয়ে ভারতে পাচার করা হয় ওই যুবতীকে।

Advertisements

এক সপ্তাহ পর কৌশলে বাংলাদেশে ফিরে আসে ওই যুবতী। এ ঘটনায় তিনি স্বামীকে প্রধান আসামিসহ ও মোট পাঁচজনকে আসামি করে পাটগ্রাম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন/২০০৩) ও মানব পাচার প্রতিরোধ দমন আইন ২০১২-এ গত ২১ মে রাতে মামলা করেন। আসামিদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পাটগ্রাম থানার ওসি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।

থানা পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়, প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্কের একপর্যায়ে ২০২১ সালের মার্চে প্রেমিক সোহেল তাঁকে (ওই যুবতীকে) সাতক্ষীরা সীমান্তপথে অবৈধভাবে ভারতের কলকাতায় নিয়ে যায়। এ সময় আটকে রেখে দেহব্যবসা করতে বাধ্য করে। ৮-৯ মাস পর কলকাতা থেকে পালিয়ে একই পথে দেশে ফিরে আসে পাচারের শিকার যুবতী। কিছুদিন পর প্রেমিক সোহেলও ফিরে আসে। এ ঘটনায় নিজ থানায় মামলা করার চেষ্টার সময় সোহেল ভুল স্বীকার করে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ওই যুবতীকে হবিগঞ্জে কোর্ট ম্যারেজ করে। এর পর থেকে শ্বশুরবাড়িতে সংসার করাকালীন নানা প্রলোভনে সোহেল তাঁর স্ত্রীসহ ভারতে কাজের জন্য যেতে ও সেখানে সংসার করতে আলোচনা করে। প্রথমে স্ত্রী (ওই যুবতী) ও পরে সে নিজে (সোহেল) পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়ন সীমান্ত দিয়ে ভারতে যেতে পাচারকারী চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

Advertisements

ভারতে যেতে দহগ্রামের সীমান্ত পারাপারকারীদের সঙ্গে কথা বলে পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের সরকারপাড়া গ্রামের ওমর আলীর ছেলে আশরাফুল ইসলাম ওরফে ভুটুয়া (৩৫), একই ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া এলাকার ফজলুল হকের ছেলে মোকছেদুল হক (৩২), ফন্দুর বাড়ি এলাকার আব্দুর রহমান ওরফে ঘুঘুমারার ছেলে ফরিদুল ইসলাম ফজলু (৩৩) ও পাটগ্রাম পৌরসভার রসুলগঞ্জ গ্রামের জুম্মাপাড়া এলাকার শফিক হোসেনের স্ত্রী চম্পা বেগমের (৩৫) সঙ্গে যোগাযোগ করে গত ১২ মে ওই যুবতীকে চম্পা বেগমের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় সোহেল। ওই দিন পাটগ্রাম সদর থেকে  প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে মোটরসাইকেলযোগে মোকছেদুল হক তাঁর বাড়িতে নিয়ে যায়। পরদিন ১৩ মে ভুট্টাক্ষেত দিয়ে মোকছেদুল ও আশরাফুল তিনবিঘা করিডরের বিপরীতে ভারতীয় গ্রামের গণেশের বাড়িতে পৌঁছে দেয়। গণেশ পরদিন ১৪ মে প্রাইভেট কারযোগে শিলিগুঁড়ি হয়ে কলকাতার জনৈক সুকুমারের কাছে নিয়ে যায়। এ দিন সুকুমার ওই যুবতীকে একটি হোটেলে নিয়ে বলে, তাঁকে (ওই যুবতীকে) তাঁর স্বামী দেহব্যবসার জন্য তাঁদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। এ ঘটনা জানার পর যুবতী বাংলাদেশের আশরাফুলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে।

তাঁকে (ওই যুবতীকে) ফিরিয়ে আনার জন্য আশরাফুল ২০ হাজার টাকা দাবি করলে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে পরদিন ১৫ মে কৌশলে হোটেল থেকে পালিয়ে কলকাতা শিলিগুঁড়ি হয়ে গণেশের বাড়িতে ফিরে আসে। ১৭ মে ভারতের গণেশ বাংলাদেশের আশরাফুল ও মোকছেদুলের কাছে তাঁকে পৌঁছে দেয়। আশরাফুল ইসলাম ভুটুয়া মোটরসাইকেলযোগে তাঁকে পাটগ্রাম পৌরসভার চম্পার বাড়িতে নিয়ে আসে। এ সময় পাচারের শিকার ওই যুবতী তাঁর স্বামীর সঙ্গে কথা বলে টাকা চাইলে তাঁর স্বামী টাকা দিতে অস্বীকার করে। এ কারণে তাঁকে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। এরপর তিনি কৌশলে চম্পার বাড়ি থেকে পালিয়ে ২০ মে রাতে পাটগ্রাম থানায় আশ্রয় নেন ও পরদিন ২১ মে উল্লিখিতদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, ভারতে নিয়ে যাওয়ার সময় ও দহগ্রাম এবং পাটগ্রাম ফিরিয়ে আনার সময় আশরাফুল ইসলাম ও মোকছেদুল হক একাধিকবার তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁকে ধর্ষণ করেছে। এ ঘটনায় পাটগ্রাম থানা পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে আশরাফুল ইসলাম, মোকছেদুল হক ও চম্পা বেগমকে গ্রেপ্তার করে।

পাটগ্রাম থানার ওসি ওমর ফারুক বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের রবিবার (২২ মে) সকালে আদালতের মাধ্যমে লালমনিরহাট কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের ধরতে জোর প্রচেষ্টা চলছে। ‘

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন