English

28 C
Dhaka
মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০২৪
- Advertisement -

বগুড়ার বারপুরে আপন বড়ভাইকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা: ছোট ভাই গ্রেফতার

- Advertisements -

বগুড়া সদর উপজেলার নিশিন্দারা ইউনিয়নের বারপুর স্কুলপাড়ায় আপন বড়ভাইকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার একমাত্র আসামী আপেল (২৮) কে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থেকে গ্রেফতার করেছে বগুড়া সদর থানা পুলিশের একটি দল। আসামী আপেল নিহত আসলাম পাইকাড় (৩০) এর আপন ছোট ভাই।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, গত ১৭ই মে সোমবার সকালে বগুড়া সদরের নিশিন্দারা ইউনিয়নের বারপুর স্কুলপাড়ার জনৈক মোহাম্মাদ আলীর দুই ছেলে আসলাম ও আপেল এর মধ্য ড্রেসিং টেবিল এর গ্লাস ভাংগা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এছাড়াও এই দুইভাইয়ের মধ্য পুর্ব থেকেই বিরোধ চলে আসছিলো। ঘটানার দিন সকালে তা প্রকাশ্যে রুপ নেয়। তখনই আসামী আপেল পাইকাড় তারই আপন বড়ভাই আসলামকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। আপেল মাদকাসক্ত থানায় তার কথাকে কেউ কর্নপাত না করে স্বাভাবিকভাবেই সবাই বসবাস করতে থাকে।

এরই প্রেক্ষিতে সবাই প্রতিদিনের মত রাতের খাবার খেয়ে যার যার শয়ন কক্ষে ঘুমাতে যায়।কিন্তু আপেল এর মাথায় তখনও প্রতিশোধ নেওয়ার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিলো। এমতাবস্থায় সে ঘটনার রাতে তার বাড়ি থেকে বেশকিছু দূরে নেংড়ার বাজারের একটি দোকান থেকে ১ লিটার পেট্রোল ক্রয় করে গোপনে বাড়িতে নিয়ে এসে রেখে দেয় এবং সকলের ঘুমের অপেক্ষায় থাকে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত্রি আনুমানিক ২ ঘটিকার সময় বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আপেল সেইসময়টাকেই বেছে নেয়।

তার ঘুমন্ত স্ত্রীকে রেখে সে অতি সাবধানতার সাথে নিজের ঘর থেকে বের হয়ে পাশের আসলাম এর ঘরের সামনে এসে বাহিরে থেকে দরজার ছিটকানী লাগিয়ে দেয়। যাতে তারা বাহিরে বের হয়ে আসতে না পারে। আসলামের সাথে তার স্ত্রী ও দুই কন্যা ও পুত্র সন্তান তখন ঘরের মধ্য গভীর ঘুমে আছন্ন। তখন আপেল দরজার নিচ দিয়ে পেট্রোল ঢেলে দেয় এবং পেট্রোলের সাথে কিছু পরিত্যক্ত কাপড় ব্যবহার করে যাতে আগুন আরো তীব্র হয়। এরপর সে নিজের কাছে থাকা ম্যাচ দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়।

নিহত আসলামের স্ত্রী মলি বেগম জানান, ঘরের মধ্য আগুন জ্বলতে দেখে প্রথমে তার স্বামীই ঘুম থেকে জেগে উঠেন এবং বাক্সের উপরে রাখা কাথা দ্বারা আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে থাকে এবং তাদেরকে ডাকতে থাকেন। স্বামীর চিৎকারে আমি ও আমার সন্তানেরা জেগে উঠি এবং আমরাও “আগুন আগুন” বলে চিৎকার করতে থাকি। এমন সময় আমার স্বামী আমাকে ও আমাদের সন্তানদের বাঁচাতে আগুনের মধ্যেই দরজা খোলার চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু বাহিরে থেকে দরজার ছিটকানী লাগিয়ে দেওয়ার কারণে সে ব্যর্থ হয় এবং আগুনে তার শরীর ঝলছে মেঝেতেই পড়ে যায়।

আসামী আপেল এর পিতা ও ঘটনার প্রতক্ষ্যদর্শী মোহাম্মদ আলী জানান, গভীর রাতে হঠাৎ করেই আমরা আমার সন্তান, বউমা ও নাতী নাতনীদের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে জেগে উঠি। তারপর ঘর থেকে বের হয়েই দেখি আসলামের ঘরের বাহিরে আগুন জ্বলছে। আমি ও আমার স্ত্রী আগুন নিভিয়ে দরজার ছিটকানী যখন খুলে দেই তখন দেখি আসলাম অগ্নিদগ্ধ হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে। তখন আমরা থাকে ঘর থেকে ধরে বাহিরে এনে দেখি তার শরীরের প্রায় ৪৫% আগুনে ঝলসে গেছে। তারপর আমরা তাকে উদ্ধার করে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেই।

আহত আসলাম পাইকাড়কে প্রথমে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাতারাতি ভর্তি করা হয়। পরে সকাল বেলা ডাক্তারদের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি করায় তার পরিবার। ঘটনার পর থেকে আপেল পালিয়ে থাকায় তাকে সন্দেহ করতে থাকে তার পরিবারের সদস্যরা। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২২ মে শনিবার বিকাল ৪ টায় মৃত্যবরণ করে আহত আসলাম। কিন্তু নিহতের পিতা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে গত ২১ শে মে শুক্রবার তার আপন পুত্র সন্তান আপেলকে বিবাদী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন এবং রাতারাতিই মামলা হিসাবে রেকর্ড করেন বগুড়া সদর থানা পুলিশ।

সদর সার্কেল এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ এর নির্দেশে ও বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেলিম রেজা ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ এর তত্বাবধানে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা এস আই আব্দুল মালেক সঙ্গীয় ফোর্স সহ শুক্রবার রাত থেকেই অভিযানে নামে আসামী আপেলকে ধরতে। কিন্তু চতুর আপেল পালিয়ে থাকায় তাকে ধরা সম্ভব হচ্ছিলোনা।

পরে বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তির সাহায্য ও বিশ্বস্ত তথ্যের ভিত্তিতে আসামী আপেল কে ২৩ মে সোমবার সকালে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উল্লেখ্য অগ্নিদগ্ধ আসলাম এর মৃত্যুর মাত্র ১৭ ঘন্টার মধ্যই ঘটনার মুলহোতা আপন সহদোর আপেলকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।

এব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আব্দুল মালেক বলেন, ভিকটিম এর পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথমদিকে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলেছিলো এবং তারা যেহেতু আপন ভাই ছিলো সেহেতু তারা আইনী সহায়তা চাচ্ছিলো না। তবুও ঘটনাটি সদর থানা পুলিশের কানে আসায় ভিক্টিমের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলা হয়। তখন তারা ঘটনার ৪ দিন পর দেরীতে হলেও এজাহার দায়ের করে এবং সাথে সাথে তা মামলা হিসাবে রেকর্ড করে অভিযানে নামে পুলিশ। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এবং বিশ্বস্ত সুত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভিক্টিম ইন্তেকাল করার মাত্র ১৭ ঘন্টার মধ্যেই আমরা আসামীকে ধরতে সক্ষম হয়েছি। আসামী তার দোষ স্বীকার করেছে এবং বিজ্ঞ বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় তার জবানবন্দী প্রদান করেছে। বিজ্ঞ আদালত আসামীর জবানবন্দী রেকর্ড করে আসামীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন