চট্টগ্রামের রাউজানে ভাত খাওয়ার সময় দুর্বৃত্তের গুলিতে আব্দুল্লাহ মানিক (৪৫) নামের এক যুবদল কর্মী খুন হয়েছে।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গরীবুল্লাহ পাড়ার ভান্ডারী কলোনির ভাড়াটিয়া নোয়াখালী জেলা নিবাসী মো. হানিফ ভাড়া বাসায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহত যুবদল কর্মী মো. আব্দুল্লাহ মানিক একই ইউনিয়নের গরীবুল্লাহ পাড়া এলাকার মৃত আব্দুল মোতালেবের ছেলে। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ও সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
জানা যায়, নিহত মানিক ভান্ডারী কলোনির মো. হানিফের ভাড়া বাসায় রাতের খাবার (ভাত) খেতে বসেন। এ সময় ৮-১০ জনের অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারী ঘরে প্রবেশ করে মানিকে মুখের ভিতর ও পায়ে গুলি করে, কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
ভাড়াটিয়া মো. হানিফের স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, মানিকের পরিবার বাড়িতে থাকে না। তাই তিনি টাকা দিয়ে আমার এখানে ভাত খেতেন। গত শনিবার রাতেও মানিক ও তার এক সহযোগী ভাত খেতে আসেন। সামনের রুমে তাদেরকে ভাত খেতে দিয়ে আমি টয়লেটে যাই। এমন সময় কয়েকটা গুলির আওয়াজ শুনি। এসে দেখি মানিক নিচে পড়ে আছে। আর কাউকে দেখিনি।
ঘটনার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী নিহতের চাচাতো বোন খুশি বলেন, আমার স্বামীকে দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে মানিক ভাত খেতে যায়। অস্ত্রসহ ৮-১০ জন লোক এসে ঘরে ঢুকে গুলি করে রাস্তা দিয়ে হেটে দূরে রাখা সিএনজি ও মোটরসাইকেলে করে চলে যায়। আমি মনে করেছিল আমার ভাই আর স্বামীকে মেরে ফেলেছে। গিয়ে দেখি মানিকের লাশ নিচে পড়ে আছে। অনেক চিৎকার করি। কেউ আসে নি। আমি গরীবুল্লাহ পাড়া বাপের বাড়ি গিয়ে আমার বাবাকে বললে তারা পুলিশকে ফোন দেয়। পুলিশ এসে লাশ নিয়ে যায়।
নিহতের বোন নাছিমা আক্তার বলেন, আমার মানিক বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। আওয়ামী লীগের আমলে আমার ভাইকে আনোয়ার মেম্বাররা বিএনপি করার কারণে মারধর করে জেলে দিলেও মেরে ফেলে নি। এখন বিএনপি এখনও ক্ষমতায় আসে নি আমার ভাইকে ভাত খাওয়ার সময় মুখে অস্ত্র ঢুকিয়ে গুলি করে মেরে ফেলেছে। কার কাছে বিচার চাইব?
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে নির্যাতনের কারণে আরব আমিরাতে পাঠিয়ে দেই। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ১২ দিন পর বিদেশের সবকিছু ছেড়ে দেশে চলে আসেন। দেশে এসে সন্ত্রাসী মামুনের কারণে এলাকায় থাকতে পারেনি। মামুন গ্রেপ্তার হলে এলাকায় ইট-বালির ব্যবসা করত। তারা আমার বাঘের মত ভাইকে বাঁচতে দেয় নি। মেরে ফেলেছে। আজ হতে ১৫ বছর আগে আমার আরেক ভাই রাশেদুল আলমকে বিএনপি করার কারণে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা খুন করেছিল। এবার আমার আরেক ভাইকে বিএনপির নামধারী সন্ত্রাসীরা খুন করেছে।
নিহতের মা পাখিজা বেগম বলেন, আমার ছেলে সন্ত্রাসী মামুনের কারণে এলাকায় আসতে পারে নি। আমরাও বাড়ি-ঘরে থাকতে পারি নি। আমরা শহরে ভাড়া বাসায় থাকি। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বউ বাপের বাড়িতে থাকে। মামুন জেলে থাকায় আমার ছেলে মাঝে মাঝে বাড়িতে আসে। নোয়াখালীর ঐ মহিলার সেখানে ভাত খায়। গতরাতে ভাত খেতে এসেছিল। কারা তাকে মেরে ফেলেছে। এখন আমরা কি নিয়ে বাঁচব, তার ছোট ছোট দুই ছেলে-মেয়ে কাকে বাবা ডাকবে? আমি এই হত্যার বিচার চাই।
উত্তর জেলা বিএনপির নেতা হাজী জসীম উদ্দিন বলেন, মানিক আমাদের যুবদলের কর্মী ছিল। আমরা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর কর্মী হিসেবে কাজ করি। ফজল হক গ্রুপ, মামুন গ্রুপ, ফরিদ গ্রুপের সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করেছে। আগেও তাকে কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করেছিল।
এই বিষয়ে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, সে আগে মামুনের সহযোগী ছিল। পরবর্তীতে তার থেকে আলাদা হয়ে অন্যগ্রুপে যোগ দেয়। এই কারণে তার শত্রুতা বেড়ে যায়। এছাড়াও আরও কারণ থাকতে পারে। তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত জানা যাবে। তার মুখে, ডান উরুতে ও বাম হাটুতে গুলি লেগেছে। এখন কোনো মামলা হয়নি এবং জড়িত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, নিহত মানিকের সাথে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী যুবদল নেতা আরফাত মামুনের সঙ্গে বেশ কয়েকবার হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। গত ৫ মার্চ আরফাত মামুনকে ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম হত্যাকান্ড মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে মামুন কারাগারে আছেন।
জানা যায়, মামুন গ্রেপ্তারের সময় মানিকের সহযোগিতা ছিল। তবে ৫ আগস্টের পর হতে এই এলাকায় তথা দক্ষিণ রাউজানের নোয়াপাড়া, উরকিরচর ও বাগোয়ান ইউনিয়নে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী ও গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারীদের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।