গ্রামের বাড়ি থেকে সাভারে কর্মস্থলে ফিরছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের শিমুলতলায় বাস থেকে নেমে সিআরপি সড়ক ধরে একটু সামনের দিকে যেতেই কয়েকজন যুবক তাকে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে। সাথে থাকা সামগ্রী ও টাকা-পয়সা বাঁচাতে দৌঁড় দেন মোস্তাফিজ। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি। ধাওয়া করে ওই যুবকরা ধরে ফেলে তাকে এবং তার সাথে থাকা ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে মোস্তাফিজকে আঘাত করে ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায় ওই যুবক ছিনতাইকারী চক্র। শনিবার ভোরে পুরো ঘটনাটি ধরা পড়ে ঘটনাস্থলের পাশের একটি বাড়ির ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায়।
স্থানীয়রা জানায়, ক্যামেরায় ধরা পড়ার ঘটনা জানাজানির আগে ঘটনাটি নিছক একটি সড়ক দুর্ঘটনা বলে ধারণা করছিল সবাই।
নিহত মোস্তাফিজের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর নওয়াপাড়া গ্রামে। কাজ করতেন সভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর এলাকায় গ্লোরিয়াস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগ থেকে ২০১৯ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করে মোস্তাফিজ বছর খানেক আগে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন।
গ্রামের বাড়ি থেকে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে আসতে বাড়ি গিয়েছিলেন তিনি। তবে হয়তো কোনো কারণে তারা আসেননি। ফলে সাভারে তিনি ফেরেন একাই। মোস্তাফিজের সহকর্মী সৌখিন আজিজ এ তথ্য জানান।
স্থানীয়রা বলছে, রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশের জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দেয়। পুলিশ গিয়ে ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করে। লাশের অনতিদূরে পাওয়া যায় সবজি ভর্তি একটি বস্তা, ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের একটি পরিচয় পত্র।
এ বিষয়ে সাভারের গ্লোরিয়াস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ জুবায়ের হাসান জানান, মোস্তাফিজুর গত এক বছর আগে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি তিনি জেনেছেন। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন। মোস্তাফিজুর সাভারের ডগরমোড়া এলাকায় বসবাস করতেন।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ জানান, শনিবার ভোরে ৯৯৯-এ সিআরপি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনার খবর জানায় একজন। ঘটনাস্থলে গিয়ে সড়কের ধারে যুবকের মরদেহ দেখতে পায় পুলিশ। মরদেহের পাশে থাকা পরিচয়পত্র দেখে পুলিশ তার পরিচয় নিশ্চিত হয়।
তিনি আরো জানান, মোস্তাফিজের বুকের বাম পাশে বড় একটি ক্ষত আছে। ওই ক্ষত থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী না পেয়ে পুলিশ পাশের একটি বাড়িতে সিসি ক্যামেরা দেখতে পায়। পরে পুলিশ সেখানে গিয়ে ক্যামেরায় পুরো ঘটনাটিই রেকর্ড হয়েছে জানতে পারে।
ফুটেজে দেখা যায়, মোস্তাফিজকে ছুরিকাঘাত করে তার কাছে থাকা কালো রঙের ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায় তিন যুবক। ফুটেজ পর্যালোচনা করে খুনিদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। মোস্তাফিজের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/xpa3
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন