চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে যুবকদের ‘হানি ট্র্যাপের’ ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া অভিযোগে রাজধানীর মিরপুর থেকে প্রতারণা চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের মিরপুর বিভাগ। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাতে মিরপুরের বিভিন্ন স্থানে একাধিক অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা হলেন— মো. বিপ্লব খান (৩৩), ফারিন তানহা তোফা (২৯), সম্পা আক্তার (২৪), শাহ মোহাম্মদ জোবায়ের অভিক (২৩), মো. আল-মাসুদ (৩২), মোছা. মনিকা আক্তার (১৮) ও মো. আবু সুফিয়ান।
ডিবি মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. সোনাহর আলী শরীফ জানান, এ সময় ভুক্তভোগীদের একটি রেডমি মোবাইল ফোনসহ অপরাধে ব্যবহৃত আরও তিনটি স্মার্টফোন জব্দ করা হয়েছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, চক্রটি ভুয়া চাকরির বিজ্ঞাপন দিত। আগ্রহী চাকরিপ্রার্থীদের মিরপুর বা শেওড়াপাড়ার নির্দিষ্ট বাসায় ডেকে নিয়ে যাওয়া হতো। একইভাবে শরীয়তপুরের মো. রহমান ও বান্দরবানের মো. মনির উদ্দিন একটি বিজ্ঞাপন দেখে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মঙ্গলবার মিরপুর শেওড়াপাড়ার একটি ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে তাদের আটকে রেখে মারধর করা হয়।
পরে কয়েকজন নারীকে তাদের পাশে বসিয়ে ভিডিও ধারণ করা হয় এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। ভীত হয়ে তারা নগদ ১১ হাজার টাকা ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আরও ৫৫ হাজার টাকা দিতে বাধ্য হন। এ ছাড়া তাদের কাছ থেকে একটি নোকিয়া ও একটি রেডমি ফোন ছিনিয়ে নেয় চক্রটি।
ডিবি কর্মকর্তাদের মতে, এ চক্র শুধু চাকরির বিজ্ঞাপনই নয়, ফেসবুক, ইমো ও টেলিগ্রামের মতো অ্যাপে বন্ধুত্ব, সম্পর্ক বা রিয়েল সার্ভিসের প্রলোভন দেখিয়ে যুবকদের ফাঁদে ফেলত। এরপর ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায় করা হতো।
সামাজিক সম্মান হারানোর ভয়ে অধিকাংশ ভুক্তভোগী পুলিশের কাছে অভিযোগ করতেন না। এই সুযোগে প্রতারকেরা একই কৌশল ব্যবহার করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়। কারও কাছ থেকে কয়েক হাজার টাকা, আবার কারও কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে।
তদন্তে জানা গেছে, শুধু মিরপুর নয়, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায়ও এ চক্র সক্রিয় ছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া প্রোফাইল ব্যবহার করে গ্রামীণ যুবকদের টার্গেট করত তারা।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, গ্রেপ্তারকৃত সাতজন ছাড়াও আরও কয়েকজন এ চক্রের সঙ্গে যুক্ত। তাদের শনাক্তে কাজ করছে পুলিশ।
অতিরিক্ত উপকমিশনার সোনাহর আলী শরীফ বলেন, “চক্রটির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে নতুন তথ্য মিলছে। ভুক্তভোগীরা সম্মানহানির ভয়ে অভিযোগ না করায় তারা এত দিন ধরে প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।”