English

26.8 C
Dhaka
বুধবার, জুলাই ১৬, ২০২৫
- Advertisement -

সংবাদ সম্মেলনে ৬৩ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ, প্রাণনাশের হুমকি দিল প্রতারক

- Advertisements -

রাজধানীর মঙ্গল গ্লোবাল সার্ভিসেস লি. এর স্বত্বাধীকারী সুলতান ইমাম মেহেদি ওরফে এস আই মেহেদি প্রতারণা করে তার ৬৩ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে উল্টো হত্যার হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রাজধানীর নয়া পল্টনের ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম (পারভেজ)। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় প্রতারকের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি ও মালয়েশিয়াতে একটি মামলা করা হয়েছে।

বুধবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ক্র্যাব) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, ২০২৪ সালের ৭ নভেম্বর আমি আমার ও আমার বন্ধুর ছেলের পড়াশোনার বিষয়ে খোঁজ নিতে মালয়েশিয়াতে যাই। পরদিন মালয়েশিয়াতে আমার সাথে দেখা হয় মঙ্গল গ্লোবাল সার্ভিসেস লি.এর স্বত্বাধীকারী এস আই মেহেদির সঙ্গে। এসময় কথার ছলে তিনি মালয়েশিয়াতে তার নানা রকম ব্যবসা এবং বড় বড় কর্তব্যাক্তির সাথে সখ্যতা রয়েছে বলে জাহির করতে থাকেন। তখন তিনি আমাকে জানান, সেখানে তিনি নিজেও স্টুডেন্টদের নিয়ে কাজ করেন এবং এ ব্যাপারে তিনি আমাকে সাহায্য করতে পারবেন। এসময় তিনি আমার এবং আমার বন্ধুর ছেলেরে জন্য ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা লাগবে বলে জানান। এরপর আমি নভেম্বরের ১২ তারিখে দেশে ফেরার পর তিনি আমাকে ফোন দেন এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দিয়ে একটি অফার লেটার ও কিছু ডকুমেন্ট পাঠান। খুব জরুরী ভিত্তিতে ৬ লক্ষ টাকা দাবি করেন। এরপর আমি জানুয়ারির ১৭ তারিখে তাকে আল আরাফা ব্যাংকের মাধ্যমে ছয় লক্ষ টাকা প্রদান করি। তিনি ২১ তারিখে একটি ভিডিও কল দিয়ে বলেন আপনার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ন একটা কথা আছে। ১০ মিনিট পর তিনি আবার আমাকে ভিডিও কল দেন। কলে তিনি আমাকে বলেন, আপনার তো নোয়াখালিতে টুকটাক ব্যবসা আছে, আমারও এখানে কিছু ব্যবসা আছে। আপনি আমার সঙ্গে আমার ব্যবসায় শরিক হতে পারেন। তিনি আমাকে মালয়েশিয়াতে ল্যাণ্ড ও মুরগির ব্যবসার কথা জানান এবং জানান ব্যবসাটা করতে হলে মালয়েশিয়াতে একটি এগ্রিমেন্ট করতে হবে। ওখানকার জমির মালিককে টাকা দিতে হবে। এ বাবদ তিনি আমার কাছে ৫০ হাজার রিঙ্গিত দাবি করেন। আমি তা দিতে অস্বীকৃতি জানাই এবং বালি আপনি বাংলাদেশে আসেন কথা বলি। তারপরও তিনি আমাকে নানাভাবে অনুরোধ করতে থাকেন টাকাটা পাঠানোর জন্য। টাকাটা না পাঠালে প্রজেক্টটা হাতছাড়া হয়ে যাবে। এক পর্যায়ে নভেম্বরের ২৪ তারিখ এবং ২৭ তারিখ আমি তাকে দুই দফায় ৮ লক্ষ টাকা দেই। আট লক্ষ টাকা দেয়ার পর সে দেশে আশে। দেশে এসে আমার কাছ থেকে বিনিয়োগ বাবদ আরো টাকা নেয়ার জন্য ঘুরতে থাকে। আমি তাকে বলি আমার কাছে এখন কোনো টাকা নাই। তারপর আমার একটি জায়গা বিক্রি করি করে টাকা দিতে রাজি হই এবং তাকে একটি এগ্রিমেন্ট করতে বলি। এরপর রাজধানীর উত্তরায় বসে আমরা একটি এগ্রিমেন্ট করি। এসময় সে আমাকে তার বাংলাদেশের ব্যবসার পার্টনার করতে চায়। আমি বিনয়ের সাথে তাকে না করি এবং বলি তুমি বাংলাদেশে আদম ব্যবসা করো এগুলোর সঙ্গে আমি জড়াতে চাই না। এরপর তিনি শুধু মালয়েশিয়ার ব্যবসার জন্য আমার সঙ্গে ১ কোটি ৭১ লক্ষ টাকার চুক্তি করেন।

তিনি আরো বলেন, তাকে আরো ২২ লক্ষ টাকার একটা চেক দেই। চেক দেয়ার পর আমি তাকে বললাম চেকে তো অনেক সমস্যা হয়, সেক্ষেত্রে আমি ব্যাংক থেকে ট্রান্সফার করে দেই। এর পরদিন আমি তাকে মাইজদির আল আরাফা ব্যাংক থেকে ২০ লক্ষ টাকা পাঠাই এবং পরদিন আরো ২ লক্ষ টাকা পাঠাই। এর আগে তিনি মালয়েশিয়া থাকতে আরো ৮ লক্ষ টাকা পাঠাই। এভাবে তাকে ৩০ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। এর পরপর আমি মালয়েশিয়া গিয়ে তার নানারকম অনিয়ম দেখতে পাই। তারপরও তিনি বিনোয়োগের জন্য নানা অজুহাতে বিভিন্ন অংকের টাকা দাবি করেন এবং আমি তাকে দিতে থাকি। এক পর্যালে দক্ষিণখানের ব্রাংক ব্যাংক শাখার মাধ্যমে ২০২৫ সালের ২৭ ফেব্রায়ারী ১৫ লক্ষ টাকা প্রদান করি। এরপর আরো কয়েক দফায় ব্যাংেকের মাধ্যমে তার কোম্পানী ও ব্যক্তিগত একাউন্টের মাধ্যমে আরো ১৮ লক্ষ টাকা পাঠাই। সর্বমোট তাকে দেয়া টাকার পরিমাণ দাড়ায় ৬৩ লক্ষ। ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, গত ১ মার্চ আবার মালয়েশিয়ায় যাই এবং হঠাৎ তাদের আচারণে পরিবর্তন দেখি। নানা কৌশলে তারা আমার সাথে প্রতারণা করতে থাকেন। কেউ কেউ আমাকে বলে, আপনি ভাল মানুষ। জীবনের মূল্য আছে। আপনার ব্যবসার দরকার নাই, দেশে চলে যান।

যখন আমি তার প্রতারণা বুঝতে পারি তখন দেশে ফিরে আসি। আসার পরও তার সঙ্গে আমার ফোনে কথা হতো। সে আমাকে বিনোয়োগের মুরগি বিক্রির জন্য আবার মালয়েশিয়া যেতে বলে। আমি না জানিয়ে হঠাৎ আবার ৯ তারিখে মালয়েশিয়া চলে যাই। এ যাত্রায় আমার সঙ্গী ছিলেন তাজুল ইসলাম। আমি যাওয়ার আগেই বেশিরভাগ মুরগি বিক্রি করে ফেলে। আর আমি পৌছালে আমার সামনেই কিছু মরগি করে। কিন্তু আমাকে বিনিয়োগের কোনো মুনাফা দেয়া হয় না। এরপরিদন আবারো তিনি মুরগি বিক্রি করেন এবং তখন আমি তার কাছে কিছু টাকা দাবি করি। কিন্তু তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং আমার সঙ্গে অত্যন্ত অশোভন আচরণ করেন। আমাকে মুরগির ফার্মে অপেক্ষা করার কথা বলে সেখান থেকে তিনি সটকে পড়েন। আমি গভীর রাত রাত পর্যন্ত তার জন্য অপেক্ষ করলেও তিনি আর ফিরে আসেন নি এবং অনেক রাত হওয়ার কারণে আমি ওখান থেকে চলে যেতে চাই। পথিমধ্যে তিনি গাড়ি দিয়ে আমার উপর হামলার চেষ্টা করেন। এসময় আমি মালয়েশিয়ায় অবস্থান করা এক বন্ধুকে অবগত করি এবং স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা আমাকে উদ্ধার করে। এরপদিন ওখানে আমাকে থানার যাওয়ার পরামর্শ দেন এবং আমি সেখানে যাই। থানা কর্তৃপক্ষ এস আই মেহেদির নামে মামলা দায়ের করেন। এবং এক পর্যায়ে মালয়েশিয়ার পুলিশ প্রতারক এস আই মেহেদিকে গ্রেপ্তার করে। এসময় তার সন্তান সম্ভাবনা স্ত্রী এসে আমার কাছে কান্নাকাটি করে এবং জানায় তাদের বড় অন্যায় হয়ে গেছে।

তাদের জায়গা জমি বিক্রি করে আমার সকল পাওনা পরিশোধ করে দেবে। তার স্ত্রী আরো জানায় এস আই মেহেদি একটা অমানুষ। মেহেদির সাথে সংসার করে তার লাইফটা নষ্ট হয়ে গেছে। আমাকে বড় ভাই ডেকে তার স্বামীকে ক্ষমা করে দিতে বলেন। এরপর আমি মেহেদির সাথে দেখা করি। মেহেদি আমার কাছে তার অপরাধ স্বীকার করে মামলা তুলে নিয়ে ক্ষমা করে দিতে বলেন। এবং আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমার বিনিয়োগের টাকা বাবদ মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশের একটি গাড়ি ও প্রকল্প বুঝিয়ে দিতে সাদা কাগজে তার সঙ্গে একটি লিখিত চুক্তি হয়। যার মোট মূল্য প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। এবং বাকি টাকা প্রতি মাসে ২ লক্ষ করে পরিশোধ করার শর্তে সে জামিনে মুক্তি পায়। এরপর আমি বাংলাদেশে চলে আসি। আসার পর গত দুই মাস যাবত আমাকে কোনো টাকা দেয়নি এবং কোনো ধরণের যোগযোগও করেনি। একদিন আমি তাকে প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা দেয়ার কথাটা ফোনে জানাই। এসম তিনি কান্নাকাটি করে আ্েরা কিছুদিন সময় নেন। হঠাৎ করে গত ১১ জুলাই আমাকে ফোন দেন। কিন্তু আমি ফোনটা ধরতে না পারায় সে আমাকে এসএমএস করে। আগামীকাল বোরখা পড়ে বের হবি এবং তোর নামে মামলা করবো। আমার সকল প্রপার্টি আমাকে ফেরত দিবি। এরপর সে আবারো ফোন দেয়। তখন আমি আমাকে দেয়া এসএমএসের কারণ জানতেই চাই। এর পর থেকে তিনি আমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এত কিছুর পরও সে আমার সন্তানের লেখাড়া নিয়েও নানা রকম প্রতারণার আশ্রয় নেয়। মামলা থেকে জামিনে মুক্ত পাওয়ার পর সাদা কাগজে লিখিত দেয় যে সে প্রতি মাসে আমাকে দুই লাখ টাকা দেবে।

কিন্তু তা আর আমাকে দেয়নি। টাকা না দিয়ে নানা রকম প্রতারণার আশ্রয় নিতে থাকে। মো. জাহিদুল ইসলাম দাবি করেন, বহুমুখি প্রতারক এস আই মেহেদি শুধু আমার সঙ্গেই প্রতারণা করেননি। তার পরিবারসহ শত শত মানুষে সঙ্গেও নানা প্রতারণা করেন এবং তার আপন ছোট ভাই আবদুল কাদের মাছুম তার বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে তার প্রতারণার বিষয়টি প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে প্রতারক এস আই মেহেদি তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের দায়ের করেন। যার নম্বও ৩৭/২৫। তিনি অভিযোগ করেন, সর্বশেষ আমি টাকার জন্য চাপ দিলে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতারক এস আই মেহেদি তার ফোন নম্বর থেকে প্রতিনিয়ত আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমার মা সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ কথা বলে যাচ্ছে। সর্বশেষ গত ১১ জুলাই আমাকে তার নম্বর থেকে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে এবং হত্যার অব্যাহত হুমকি দিতে থাকে। এসব দেখে এবং প্রাণনাশের হুমকি পেয়ে গত ১২ জুলাই রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। সাধারণ ডায়েরি করার পর প্রতারক এস আই মেহেদির হুমকি ধমকি আরো বেড়ে গেছে। আমি সহ জিডির দায়িত্বে থাকা পল্টন থানার এস আই মোখলেসকেও নানা হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন যাচেছন প্রতারক মেহেদি। সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনের কাছে ব্যবসায়ী এস আই মেহেদির কঠিন বিচার দাবি করেন তিনি।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/0b1z
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন