English

26 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪
- Advertisement -

আত্মতৃপ্তি নিয়েই আমি বিদায় নিচ্ছি: সিটি মেয়র নাসির

- Advertisements -

আবেগঘন পরিবেশে কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে শেষ বক্তব্য রেখে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন থেকে বিদায় নিয়েছেন নানা ঘটনায় আলোচিত-সমালোচিত মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তবে তিনি বলেছেন, মেয়র পদ থেকে বিদায় নিতে হলেও তিনি চট্টগ্রামবাসীর ভালোবাসা পাচ্ছেন। এই ভালোবাসায় প্রমাণ করেছে তিনি সফল।
৫ আগস্ট ২০২০ বুধবার দুপুরে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে প্রীতি সম্মিলনের আয়োজন করে চসিক। মেয়র এবং নির্বাচিত পরিষদের বিদায়কে ঘিরে সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। বুধবার তার মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে স্থগিত হওয়া চসিক নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন পেয়েছেন একই কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী। নির্বাচন না হওয়ায় অর্ন্তবর্তীকালীন সময়ের জন্য প্রশাসক নিযুক্ত হয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বিলবোর্ড উচ্ছেদ, আর পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে গতি এনে প্রশংসিত হয়েছিলেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। মোটা দাগে তার সাফল্যের কথা বলতে গেলে এই প্রসঙ্গ আসেই। তবে চসিকের কাজে স্বচ্ছতার অভাব, অদক্ষতা ও নজরদারির অভাবে শহরের রাস্তাঘাটকে ভঙ্গুর করে ফেলা, জলাবদ্ধতা, চসিককে ৮০০ কোটি টাকার দেনাগ্রস্ত করা- এসব নানা অভিযোগের তীরেও বিদ্ধ হতে হয়েছে নাছিরকে। গৃহায়ণের এক প্রকৌশলীকে মারধরের অভিযোগে নাজুক অবস্থায় পড়েছিলেন তিনি। নিজ দলের ভেতরে বিরোধীদের সমালোচনাও মোকাবেলা করতে হয়েছে। সাবেক মেয়র প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনকে একটি রাজনৈতিক সভামঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছিলেন নিজ দলের নেতাকর্মীদের একাংশ।
বিদায়বেলায় নাছির নানা অভিযোগের জবাব দিয়েছেন। পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনকালে কি করেছেন, তার জবাবও দিয়েছেন।
বিদায়ী বক্তব্যে আ জ ম নাছির উদ্দীন চসিককে একটি অভিন্ন ও একান্নবর্তী পরিবারে পরিণত করার দাবি করে বলেন, ’৩১ বছরের পুঞ্জীভূত সমস্যার সমাধান করেছি। চসিকে গতিশীলতা বেড়েছে। যারা নির্বাচিত হন তারা জনপ্রতিনিধি এবং নাগরিক সমাজেরও বিশ্বাসভাজন। তাই কোন গোষ্ঠী বা দলীয় পরিচয় মুখ্য নয়, আসল কর্তব্য হলো নাগরিকদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। আমি মেয়র হিসেবে সেই চেষ্টা নির্বাচিত পরিষদকে নিয়ে যথাসাধ্য করেছি।
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জনবল সাড়ে ৯ হাজারের মতো। কোনো টেকসই অর্গানোগ্রাম ছিল না। গ্রেডেশন তালিকা ছিল না। পদায়ন ও পদোন্নতি ঝুলে থাকত। ২৭-২৮ বছর চাকরি করেও অনেককে চোখের পানি ফেলে শূন্য হাতে ফিরতে হতো। সেই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য আমি অর্গানোগ্রাম তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আগে চসিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ছিল ৯ কোটি টাকা। এখন সেটা ১৯ কোটি টাকা হয়েছে। আগে অবসরে যাওয়াদের দেওয়া হত এক লাখ টাকা করে। আমি দিয়েছি ২ লাখ টাকা করে।
৮০০ কোটি টাকার দায়-দেনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ নিয়েও কথা বলেন নাছির। তিনি বলেন, ‘চসিকের দেনা-পাওনা নিয়ে ফলাও করে প্রকাশিত সংবাদ একপেশে। আমি গণমাধ্যমের ইতিবাচক সমালোচনাকে গুরুত্ব দিই। কিন্তু ৮০০ কোটি টাকা দেনা থাকার কথা সত্য নয়। এমন কিছু প্রকল্প থাকে যা সরকার এবং আমাদের অংশগ্রহণে হয়। তাহলে দেনা কেন হবে ? পরিবেশিত খবরটি যাচাই বাছাই করে করা হয়নি। এতে জনগণের মধ্যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।’
‘সিটি করপোরেশনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করলে নগরবাসীর ক্ষতি হবে। এটা কারো কাম্য নয়। আগের মেয়রদের রেখে যাওয়া ৩০০ কোটি টাকা দেনার মধ্যে ২৫০ কোটি টাকা আমার মেয়াদেই পরিশোধ হয়েছে’- বলেন নাছির।
মানুষের ভালোবাসার জন্য নিজেকে সফল ভাবছেন জানিয়ে নাছির বলেন, ‘মানুষের জন্য কাজ করতে পারা অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার। আমি মেয়রের দায়িত্ব নিয়ে সেটা পালনের চেষ্টা করেছি। নিজের দলের বাইরের কাউন্সিলরদেরও আমি সমান চোখে দেখেছি। আজ কাউন্সিলর থেকে অনেক শীর্ষ কর্মকর্তাই অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েছেন। এই আবেগ, এই চোখের জল আমার প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। মানুষের যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি, তাতে আমি মনে করি আমি সফল। আত্মতৃপ্তি নিয়েই আমি বিদায় নিচ্ছি।
‘আমরা জন প্রতিনিধি। নির্বাচনে হারতেও পারি, জিততেও পারি। একজন রাজনীতিকের কাছে নির্বাচন বা চেয়ার মুখ্য বিষয় নয়। রাজনীতিকের কাছে মুখ্য হচ্ছে- মানুষের পাশে থাকা। মানুষকে আপন করে নেওয়া। আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে মানুষের জন্য কাজ করি আমি। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার কাজই করি আমি’-বলেন নাছির।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহার সভাপতিত্বে ও কর কর্মকর্তা সাহেদা বেগমের উপস্থাপনায় প্রীতি সম্মিলন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, সাইয়্যেদ গোলাম হায়দার মিন্টু, ইসমাইল বালী, ছালেহ আহমদ চৌধুরী, মোহাম্মদ আজম, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিরদের পক্ষে আঞ্জুমান আরা বেগম, চসিকের সচিব আবু সাহেদ চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী লেফটেন্যান্ট কর্নেল সোহেল আহমদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মুফিদুল আলম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ এ কে এম রেজাউল করিম।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ

আল কোরআন ও আল হাদিস

- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন