English

37 C
Dhaka
শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
- Advertisement -

রাঙ্গুনিয়া ঐতিহ্যবাহী চাকমা রাজার রাজপ্রাসাদের সমীক্ষা করছে প্রত্নসম্পদ বিশেষজ্ঞ টিম

- Advertisements -
Advertisements
Advertisements

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগরে চাকমা রাজত্বের রাজধানী ছিল। সতেরো শতকে তৈরি সেখানকার ঐতিহ্যবাহী চাকমা রাজার বাড়িটি এখন ঝোপঝাড়ে ঢাকা পড়ে আছে। চট্টগ্রাম শহর থেকে খুব বেশি দূরে নয়, তারপরও এ জায়গাটা কেমন অজপাড়া গাঁ। শহর থেকে দুটি সড়কে রাজবাড়িতে আসা যায়। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কপথে ৩৫ কিলোমিটার এবং চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়ক পথে ৪৫ কিলোমিটার পেরোলেই রাজবাড়ি। রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের নাম রাজানগর, রাজাভুবন, মোগলের হাট, রাজার হাট, রাণীর হাট, শুকবিলাস, কালিন্দিরাণী সড়ক ইত্যাদি থেকেই বোঝা যায় এখানে এককালে ছিল রাজ-রাজড়াদের বাস। আর রাঙ্গুনিয়ার উত্তরে রাজানগরে রয়েছে রাজবাড়ি।
১৭৩৭ সালে চাকমা রাজা সেরমুস্ত খাঁ এখানে রাজত্ব করেন। বান্দরবানের আলী কদমে ছিল তাঁর রাজধানী। তাঁর রাজ্যসীমা ছিল উত্তরে ফেনী, দক্ষিণে শঙ্খ নদী, পূর্বে লুসাই পাহাড় এবং পশ্চিমে নিজামপুর রাস্তা। সেই সময় আরাকানিদের অত্যাচারে তিনি মোগল নবাবের সঙ্গে মিত্রতা করেন। তখন চট্টগ্রামের নবাব ছিলেন জুলকদর খাঁ। তিনি সেরমুস্ত খাঁকে রাঙ্গুনিয়ার পাহাড়ি অঞ্চলে বসতি স্থাপনের অনুমতি দেন। ১৭৫৭ সালে সেরমুস্ত খাঁ মৃত্যুর পর রাজা হন শুকদেব রায়। তিনি ছিলেন সেরমুস্ত খাঁর পোষ্যপুত্র। রাজা শুকদেব রায় আলীকদম ছেড়ে চাকমা অধ্যুষিত রাঙ্গুনিয়ার পদুয়ায় শিলক নদীর তীরে প্রাসাদ তৈরি করেন। নাম দেন শুকবিলাস। সেখানেই প্রতিষ্ঠা করেন রাজধানী। তাঁর রানির নাম ছিল ছেলেমা। রানির নামানুসারে রাজপ্রাসাদের পশ্চিম দিকে একটি পুকুরের নামকরণ করা হয় ছেলেমা পুকুর। রাজা শুকদেব রায়ের সন্তান ছিল না। ১৭৭৬ সালে রাজার মৃত্যুর পর তাঁদের বংশধর শের দৌলত খাঁ রাজ্যভার নিয়ে রাঙামাটির রাজবাড়িতে রাজত্ব স্থানান্তর করেন। সেই থেকে দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের রাজাভুবন গ্রামের রাজপ্রাসাদ, সৈন্যশালা ও বন্দিশালা পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।
রাজবাড়িটি অযত্ন-অবহেলায় ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হতে থাকে। বাড়িটি এখন লতা আচ্ছাদিত। ইট-সুরকি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল এই লোহাবিহীন অট্টালিকা। এটি বায়ান্ন একর জায়গাজুড়ে। দেয়ালগুলো প্রস্থে দুই হাতেরও বেশি। দেয়ালগুলোতে এখন নানা রকম আগাছা ও লতা জন্মেছে। খসে পড়ছে ছাদ। রোদ-বৃষ্টিতে প্রাসাদটির একেবারে নড়বড়ে অবস্থা। এরই মধ্যে প্রায় হারিয়ে গেছে প্রাসাদটির রাজদরবার, হাতিঘোড়ার পিলখানা, বিখ্যাত সাগরদিঘি, পুরাকীর্তি, বৌদ্ধ-বিহারসহ গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।

২০০৮ সালের মাঝামাঝিতে রাজা দেবাশীষ রায় সরকারিভাবে রাজবাড়ি এলাকা পরিদর্শনের সময় সংরক্ষণের কথা বলেছিলেন। কিন্তু এখনো কোনো সংস্কার করা হয়নি। চট্টগ্রাম থেকে খুব বেশি দূরে নয় বলে এটিকে সংস্কার করে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়, বললেন রাঙ্গুনীয়া বাসীরা।
খাগড়াছড়ি নৃতাত্ত্বিক সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট-এর অর্থায়নে রাঙ্গুনিয়া চাকমা রাজার রাজপ্রাসাদ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সমীক্ষা, মাপজোখ, অনুসন্ধান ও উৎখনন শুরু হয়েছে বলে জানিয়ে পাক্ষিক রূপালী রাঙ্গুনিয়া পত্রিকার সম্পাদক ও ইতিহাস গবেষক এনায়েতুর রহিম বলেন, বিলুপ্ত রাঙ্গুনিয়া চাকমা রাষ্ট্রের রাজধানী রাজানগরের রাজপ্রাসাদের সমীক্ষা শেষ হলে গড়ে উঠবে রয়েল চাকমা জাদুঘর, আদিবাসি ভিলেজ ও পর্যটন। সংস্কার ও সংরক্ষণ হবে ইতিহাসের সপ্তদশ শতাব্দীর চাকমা রাজত্বের হারানো গৌরব।
১৯৯৭ সালে প্রথম কখনো গাড়ি করে, কখনো পদব্রজে চাকমা রাজত্বের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা শুরু করি। এখনো গবেষণার শেষ সুড়ঙ্গের আলোতে পৌঁছতে পারেনি। দিনরাত কখনো সুযোগ পেলে গবেষণার কাজ করি। কেননা ইতিহাসের দায়বদ্ধতা আছে। ভবিষ্যত নতুন প্রজম্মের কাছে ইতিহাসের গুরুত্ব ও মূল্যবোধ তুলে ধরতে বিলুপ্ত চাকমা রাষ্টের শিকড়ের অনুসন্ধান করে রাঙ্গুনিয়ার গৌরবান্বিত পথ চলতে একটি ইতিহাস রচনা করতে চাই। দীর্ঘদিন পর আমার গবেষণা সফলতার দ্বারপ্রান্তে আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে।
রাজানগরের রাজপ্রাসাদের সমীক্ষা করছেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রত্বতত্ত্ববিভাগের প্রফেসর মোকাম্মেল হোসেন ভূঁইয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ড. আনন্দ বিকাশ চাকমা, স্থপতি আশিষ চাকমাসহ প্রত্নসম্পদ বিশেষজ্ঞ টিম। সাথে আছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি টিম। সহযোগিতা করছে স্থানীয় সমাজকর্মী আব্দুল মান্নান তালুকদার, হেলাল তালুকদার, রাজবংশের সদস্য রুমেল দেওয়ান।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন