বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন দীনী শিক্ষানিকেতন জামিআ আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক, লাখো ধর্মপ্রাণ মানুষের অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে স্মরণকালের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ নামাজে জানাজা শেষে হেফাজতে ইসলামের আমির শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এতে ইমামতি করেছেন তার বড় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ মাদানি।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ শনিবার দুপুর দুইটায় হাটহাজারীতে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা উপস্থিত ছিলেন।
মাদ্রাসার ভেতরে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ভীড়ের কারণে মরদেহ বহনকারী কফিন মাদ্রাসা মাঠ থেকে স্থানীয় ডাকবাংলোতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকেই নামাজে জানাজা পরিচালিত হয়। এর আগে শনিবার সকাল ১০টায় তার মরদেহবাহী গাড়িটি মাদরাসা প্রাঙ্গণে এসে পৌঁছায়। এসময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
আল্লামা শফীর মৃত্যুর খবরে শুক্রবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসেন লাখো ভক্ত অনুসারী। মুকুটহীন এ সম্রাটের মরদেহ পৌঁছানোর আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা প্রাঙ্গণসহ পুরো হাটহাজারী এলাকা। চারদিক থেকে আসা মানুষের সহায়তায় রাস্তায় শুকনো খাবার ও শরবতসহ নানা পানীয় নিয়ে বিতরণ করছেন এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা। পুরো হাটহাজারীর সব প্রবেশ পথে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন। জানাজা শেষে হাটহাজারী মাদ্রাসা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বায়তুল আতিক জামে মসজিদের সামনের কবরস্থানে আল্লামা শফীকে দাফন করা হয়।
এদিকে যে কোনো পরিস্থিতি এড়াতে পুরো এলাকাজুড়ে বাড়ানো হয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা। মোতায়েন করা হয়েছে র্যাব ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের। ১০ প্লাটুন বিজিবি সদস্য আছেন হাটহাজারী, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়িতে। এছাড়া ৪ উপজেলায় দায়িত্ব পালন করছেন ৭ জন ম্যাজিস্ট্রেট। আজকের এই জানাজা সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বৃহত্তম জানাজায় পরিণত হয়েছে।
দেশবরেণ্য আলেমেদ্বীন দেশের হাজার হাজার আলেমের শিক্ষক আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে শেষ বিদায় জানাতে আসা মানুষের ঢলে উত্তর চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। কয়েক বর্গ কিলোমিটার এলাকায় নামাজে জানাজায় শরিক হন লাখ লাখ মানুষ। মরহুমের বড় পুত্র মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ তার বক্তব্যে তিনি তার পরিবারের পক্ষ থেকে পিতা আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জন্য দোয়া চান। এ সময় জানাজায় শরিক লাখো জনতা কান্নায় ভেঙে পড়ে। আল্লামা শফীর অগণিত ছাত্র চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন। জানাজা পূর্ব লাখো মানুষের সমাবেশে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, এদেশে মাদরাসা শিক্ষা তথা কওমি ধারার শিক্ষা বিস্তার ও প্রসারে আল্লামা শাহ আহমদ শফী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তার একান্ত প্রচেষ্টায় এদেশের কওমি মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি পাওয়া গেছে।
নামাজে জানাজা শেষে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অর্ধশত বছরের স্মৃতি বিজড়িত মাদরাসা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বায়তুল আতিক জামে মসজিদের সামনের কবরস্থানে তার কফিন নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। তার ইন্তেকালে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের মাধ্যমে ৯২ ভাগ মুসলমান অধ্যুষিত এ দেশের তৌহিদী জনতার ঈমান, আক্বিদা রক্ষার আন্দোলনে ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
কওমি ধারার ইসলামী শিক্ষা বিস্তারের পথিকৃৎ, বিশ্ববরেণ্য এ আলেম সাদাসিধে জীবনযাপন করেন। রাঙ্গুনিয়ায় তার নিজ বাড়ি হলেও তার ধ্যান-জ্ঞান সবকিছুই ছিল হাটহাজারী মাদরাসাকে ঘিরে। ২০ বছরের শিক্ষকতা এবং ৩০ বছরের মহাপরিচালকের (মুহতামিম) দায়িত্ব পালনকালে হাটহাজারী মাদরাসাতেই তিনি থাকতেন।
শতবর্ষী আল্লামা আহমদ শফী দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। অসুস্থতার কারণে এর আগেও দফায় দফায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছিল।
আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জানাজা সম্পন্ন, লাখো মানুষের ঢল
The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/bd6x
সাবস্ক্রাইব
নিরাপদ নিউজ আইডি দিয়ে লগইন করুন
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন