English

37 C
Dhaka
বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪
- Advertisement -

কিডনি দিয়ে স্ত্রী বললেন: ‘বাঁচলেও একসঙ্গে, মরলেও একসঙ্গে’

- Advertisements -

এক বছর চারমাস আগে উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন নেত্রকোনার জহিরুল হক জুনাইদ (৩৯)। পরীক্ষা-নিরীক্ষার একপর্যায়ে ধরা পড়ে তার দুটি কিডনিই বিকল। এখানে-সেখানে খোঁজ করে যখন কিডনি মিলছিল না তখন স্ত্রী সায়মা জাহান পলি (২৭) নিজের একটি কিডনি দিতে এগিয়ে আসেন। তার দেওয়া কিডনিতে এখন সুস্থ হয়ে উঠছেন জহিরুল হক। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

এ দম্পতি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সপ্তম তলায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

জহিরুল হকের বাড়ি জেলার পূর্বধলা উপজেলার হিরণপুর বাজার এলাকায়। তিনি ওই এলাকার মো. মোজাম্মেলন হক ও জয়নব আক্তার দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা জহিরুল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। তার স্ত্রী সায়মা জাহান নেত্রকোনা সরকারি কলেজ থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন।

Advertisements

জহিরুল ও সাইমা দম্পতির জুনাইনা জান্নাত রাইসা নামের পাঁচ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ছয় বছর আগে আটপাড়া উপজেলার পাঁচগজ গ্রামের সায়মা জাহানের সঙ্গে জহিরুল হকের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তারা একসঙ্গে ঢাকায় থাকতেন। গত বছরের ২৭ মে জহিরুল ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসেন। ওই দিন উচ্চ রক্তচাপসহ তার শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ অনুভব হলে স্বজনরা নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান স্বজনরা।

জরুরি বিভাগের চিকিৎসক পরীক্ষা করে দেখেন তার ব্লাড প্রেসার (বিপি) ৩০০ বাই ২৪০। চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার কিডনি রোগ ধরা পড়ে।

ময়মনসিংহ ও ঢাকায় বিভিন্ন স্থানে তিনি চিকিৎসা নেন। এরপর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে তিনি ডায়ালাইসিস করতে থাকেন। কিন্তু শারীরিক পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছিল।

মাসখানেক আগে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক জানান, তার দুটি কিডনি অচল হয়ে গেছে। রোগীকে বাঁচাতে হলে কমপক্ষে একটি কিডনির প্রয়োজন। এরপর বিভিন্ন কিডনি ব্যাংকে যোগাযোগ করেও কিডনি সংগ্রহ করতে পারেননি। এতে পরিবারের লোকজন হতাশ হয়ে পড়েন।

পরীক্ষায় জহিরুলের সঙ্গে স্ত্রী সায়মার কিডনি মিলে যায়। এ অবস্থায় স্বামীকে বাঁচাতে সায়মা জাহান নিজের একটি কিডনি দেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার করা হয়।

Advertisements

বর্তমানে হাসপাতালের সপ্তম তলায় নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে কেটে (আইসিসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন জহিরুল। আর সায়মা জাহানকে গত শনিবার হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি রামপুরা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় কোয়ারেন্টাইনে আছেন।

জহিরুল ইসলামের ছোট ভাই মো. আশিকুল হক জানান, ভাবি এখন কিছুটা সুস্থ। চিকিৎসকের পরামর্শে শনিবার হাসপাতাল থেকে তিনি বাসায় ফিরেছেন। আর ভাইয়ের অবস্থাও ভালোর দিকে। আমরা ভাই হয়ে যা পারিনি ভাবি তা করে দেখিয়েছেন।

সাইয়মা জাহান বলেন, স্বামীকে নিজের একটি কিডনি দিতে পেরে আমি গর্বিত। তিনি (স্বামী) কখনো বলেননি। আমি নিজের ইচ্ছায় কিডনি দিয়েছি। তিনি সুস্থতার দিকে যাচ্ছেন এটা দেখে খুবই ভালো লাগছে। এখন বাঁচলে দুজন একসঙ্গে বাঁচব, মরলেও একসঙ্গে মরবো।

এ ব্যাপারে নারানদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস বেপারি বলেন, সায়মা তার নিজের একটি কিডনি স্বামীকে দিয়ে এলাকায় প্রশংসায় ভাসছেন। এটি সত্যিই একটি অনন্য উদাহরণ। প্রার্থনা করি তারা উভয়েই দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক।

সাবস্ক্রাইব
Notify of
guest
0 মন্তব্য
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন