পেশাতগত দায়িত্ব পালনে দিনরাত মাঠে ময়দানে বিরামহীনভাবেই কাজ করতে হয় সাংবাদিকদের। সেই সাথে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনেরও কাজের ব্যস্ততার কমতি নেয়। কাজের ক্ষেত্রে সাংবাদিক ও প্রশাসনের স্বাভাবিক যোগাযোগ থাকলেও প্রাণ খুলে মনের কথা গুলো বলা বা জানার সুযোগ হয়না কখনো। আন্তরিকতার অভাবে সাংবাদিকতার এই ক্লান্তিকালে সিনিয়র ও জুনিয়রের মধ্যে তৈরি হচ্ছে ফারাক। ফলে, বস্তুনিষ্ট সাংবাদিকতা করতে গিয়েও প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের দ্বারা হয়রানির হচ্ছে অনেকে।
আর এসব সমস্যার থেকে রেহাই পেতে সাংবাদিকদের ঐক্য কতটা জরুরি তা অনুভব করেন ভৈরবের সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা। সাংবাদিকদের এই ফারাক দূর করতেই সাংবাদিক নেতাদের পাশাপাশি উদ্যোগ নেন সাংবাদিক বান্ধব ভৈরব উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী অফিসার লুবনা ফারজানা। আর এ উদ্যোগকে বাস্তবে রূপ দিতে গতকাল ৪ সেপ্টেম্বর, শনিবার উপজেলা প্রশাসনের দিনব্যাপী আয়োজনে ভৈরবের পাঁচটি সাংবাদিক সংগঠনের অর্ধশত সাংবাদিকের উপস্থিতিতে তৈরি হয় এক অনন্য মিলন মেলা।
শত ব্যস্ততার ফাঁকে এই দিনটি ছিলো সাংবাদিক ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সেতুবন্ধন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকতার মান উন্নয়নে মতবিনিময় সভা, ফটোসেশন, সেলফি, প্রীতিভোজ, শুভেচ্ছা উপহার সহ ছিলো নানা আয়োজন। মতবিনিময় সভায় এমন একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা, সাংবাদিকতার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক উপদেশ ও স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করেন সাংবাদিকরা।
ভৈরবের ১২ জন প্রয়াত সাংবাদিকের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে বেলা ১১টায় উপজেলা বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠানের প্রথমপর্বে সাংবাদিকতার মান উন্নয়ন শীর্ষক আলোচনা সভায় শুরু হয়। আলোচনা সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) জুলহাস হোসেন সৌরভ, ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ মো: শাহিন।
এছাড়াও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভৈরব প্রেসক্লাব সভাপতি অধ্যপক শামসুজ্জামান বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক এস এম বাকি বিল্লাহ, ভৈরব রির্পোটার্স ক্লাব ও ইউনিটির সভাপতি ও ভৈরব উপজেলা প্রেসক্লাব এর সাধারণ সম্পাদক, তাজুল ইসলাম তাজ ভৈররী,ভৈরব সাংবাদিক সমিতি ও টেলিভিশন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন সভাপতি মো: আসাদুজ্জামান ফারুক, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজ আমিন, সাপ্তাহিক সময়ের দৃশ্যপট পত্রিকার সম্পাদক জাকির হোসেন কাজল , রিপোর্টার্স ক্লাব ও ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক পূর্বকন্ঠ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক মোঃ আলাল উদ্দিন প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভৈরব সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক মো: সুমন মোল্লা। প্রীতিভোজ শেষে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়পর্বে উন্মুক্ত মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সকল সাংবাদিকরাই বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পান।
সাংবাদিক নেতারা বলেন, আজকের এ আয়োজন ছিলো ভালোবাসার বাতিঘর। সিনিয়র ও জুনিয়র সবাইকেই সম্মান দিতে হবে। ভালো আচরণই একজন সাংবাদিককে মহান করে তুলতে পারে। আমরা একটি পরিবার, দেশ গঠনে এক সঙ্গে লড়বো। দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে সুন্দর কিছু করতে চাই। আমরা কেউ রাজনীতি করতে আসিনি। ভালো সাংবাদিকতা চায়। সাংবাদিকতার নামে কোনভাবেই অপসাংবাদিকতায় যুক্ত হওয়া যাবেনা। তারা বলেন, প্রশাসনসহ সকলের সাথে সাংবাদিকদের আন্তরিকতা থাকবে, তবে পেশাগত নীতি আদর্শ থেকে কখনো পিছিয়ে পড়া চলবেনা। অনুষ্ঠান শেষে সকল গণমাধ্যম কর্মী ও নেতৃবৃন্দের মাঝে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও প্রশিক্ষক রফিকুল ইসলাম খন্দকার সম্পাদিত খবর , লেখা ও সম্পাদনার উপর একটি বই, মগ ও চটের ব্যাগ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে ভৈরব প্রেসক্লাব, রিপোর্টার্স ক্লাব ও ইউনিটি ভৈরব সাংবাদিক সমিতি, টেলিভিশন জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশন ও উপজেলা প্রেসক্লাব এর নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন প্রিন্ট , ইলেকট্রনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল এর ৪৫ জন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন ।