বাংলাদেশে বেকার সমস্যা প্রবল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বহু তরুণ বিদেশে পাড়ি জমায়। আর তা করতে গিয়ে অনেককেই সাগরে ডুবে মরতে হয়, মরুভূমিতে না খেয়ে মরতে হয়, মানবপাচারকারীদের কবলে পড়ে ক্রীতদাস হতে হয়। এমনকি অতীতে থাইল্য্যান্ডের জঙ্গলে বাংলাদেশিদের অনেক গণকবরও পাওয়া গেছে।
দেশে কর্মসংস্থানের এমন সংকটের মধ্যেও কয়েক লাখ বিদেশি বাংলাদেশে কাজ করছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। আর তাদের একটি বড় অংশই এখানে থাকছে এবং কাজ করছে অবৈধভাবে।
প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার অবৈধভাবে বসবাসকারীদের বৈধ হওয়ার জন্য একাধিকবার সুযোগ দিয়েছিল। কিছু বৈধ হয়েছে।
কিছু জরিমানা দিয়ে নিজ দেশে ফিরে গেছে। কিন্তু অনেকে এখনো বৈধ হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, তাদের খুঁজে বের করতে তিনটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন।
অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করতে সরকার একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে।
মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (নিরাপত্তা ও বহিরাগমন) আহ্বায়ক করে গঠিত ১১ সদস্যের টাস্কফোর্সে সদস্যসচিব হিসেবে কাজ করছেন সুরক্ষা সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব (বহিরাগমন-২ অধিশাখা)। টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে রয়েছেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের পরিচালকরা। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আইন অমান্যকারী বিদেশিদের চিহ্নিত করে একটি তালিকা তৈরি করছে। টাস্কফোর্সের পরবর্তী বৈঠকে এই তালিকা নিয়ে আলোচনা হবে। ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এই অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার।
বিদেশিদের বৈধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে গত বছরের ৮ ও ২৬ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দুই দফায় বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদর্শন করে বৈধতা অর্জনের জন্য ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত দেশে অবৈধ বিদেশি নাগরিক ছিল ৪৯ হাজার ২৬৬ জন। এর মধ্যে গত ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৫ হাজার ৬১৮ জন বৈধ হয়েছে এবং ১০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। তখনো ৩৩ হাজার ৬৪৮ জন বাকি ছিল। পরবর্তী ১৭ দিনে আরো কয়েক হাজার বৈধ হয়েছে। জানা যায়, এখনো বেশ কয়েক হাজার অবৈধভাবে অবস্থান করছে।
অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকরা নানা রকম কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। অনেকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডেও জড়িত। উপার্জিত অর্থও তারা অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করছে। এর আগে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায়ও উঠে এসেছে, অবৈধভাবে কাজ করা বিদেশি কর্মীরা বছরে ২৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে শক্ত অবস্থান নিতেই হবে।