দীর্ঘ অবহেলায় বাংলাদেশের নদ-নদীর অবস্থা অত্যন্ত করুণ। বহু নদীর চিহ্নও আজ নেই। অনেক নদী মরা খালের রূপ নিয়ে অস্তিত্ব হারানোর অপেক্ষায় আছে। আর তার পরিণতিও ভোগ করতে হচ্ছে আমাদের।
বর্ষার পানি নদী দিয়ে প্রবাহিত হতে না পেরে বন্যা, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। তার পরও থেমে নেই নদী দখলের প্রতিযোগিতা। নদীর ওপর আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে রাস্তা বানানো হচ্ছে।
মাটির পার তৈরি করে মাছের ঘের বা পুকুর বানানো হচ্ছে। নদী ভরাট করে স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। নদীতে বর্জ্য ফেলে ভরাট ও দূষণ করা হচ্ছে। এমনই আরো কত কি? প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া একসময়ের খরস্রোতা মাথাভাঙ্গা নদী এখন শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে।নদীর ভরাট হওয়া অংশে চাষাবাদ করা হচ্ছে। নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। পানির প্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় পলি জমে নদীর ভরাটপ্রক্রিয়া দ্রুততর হচ্ছে। ব্রিটিশ আমলেও এ দেশে নদী খনন বা সংস্কারের ব্যবস্থা ছিল। পাকিস্তান আমলে তা বন্ধ হয়ে যায়।নদী খনন করার মতো কোনো ড্রেজারও ছিল না। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সরকার পাঁচটি ড্রেজার সংগ্রহ করে। তা দিয়ে ফেরি চলাচল সচল রাখার কাজ করা হতো। এরপর দীর্ঘদিন আর কোনো ড্রেজার আসেনি। পুনরায় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ড্রেজার সংগ্রহ ও নদী খনন শুরু হয়।জানা যায়, মাথাভাঙ্গা নদী দামুড়হুদার কোষাঘাটা, বিষ্ণপুর, কেশবপুর, দামুড়হুদা, রঘুনাথপুর, দর্শনার জয়নগর হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে। একসময় প্রায় সারা বছরই কানায় কানায় পূর্ণ থাকত নদীটি। এখন বর্ষায় মাস তিনেক পানি থাকলেও বাকি ৯ মাস পানি থাকে না বললেই চলে।পানি শুকাতে শুরু করলেই স্থানীয় লোকজন নদীর দুই পাশের ঢাল দখল করে চাষাবাদ করে। শুষ্ক মৌসুমে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কোমর পর্যন্ত পানি থাকে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এই নদীটিরও অস্তিত্ব বিলীন হবে।
আমরা আশা করি, মাথাভাঙ্গা নদীর পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে এমন সব কর্মকাণ্ড অবিলম্বে বন্ধ করা হবে। পাশাপাশি দ্রুত নদীর সীমানা চিহ্নিত করা এবং খননের উদ্যোগ নিতে হবে।