English

30.8 C
Dhaka
রবিবার, জুলাই ১৩, ২০২৫
- Advertisement -

গ্রামাঞ্চলের দিকে নজর দিন: ইন্টারনেট সেবা

- Advertisements -

সরকার মুখে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বললেও সব মানুষের কাছে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে এখনো কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নিতে পারেনি। উন্নত দেশ তো বটেই, প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আমরা পিছিয়ে আছি। প্রতিবেশী দেশগুলোর মানুষ যে দামে ইন্টারনেট সেবা পেয়ে থাকে, বাংলাদেশের মানুষকে তার চেয়ে বেশি মাশুল দিতে হয়।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) পরিচালিত ‘ফার্স্ট অ্যান্ড সেকেন্ড লেভেল অব ডিজিটাল ডিভাইড ইন রুরাল বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণা জরিপে দেখা যায়, গ্রামাঞ্চলের ৬৩ শতাংশ পরিবারের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই। মাত্র ৩৭ শতাংশ পরিবার এ সুযোগ পাচ্ছে। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চলের ৮৭ শতাংশ পরিবারের ইন্টারনেট ব্যবহারের দক্ষতা নেই। ৬০টি জেলার ৬ হাজার ৫০০ পরিবারের মধ্যে জরিপ করে এসব তথ্য পাওয়া যায়।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য তিনটি পূর্বশর্ত পূরণ আবশ্যক। প্রথমত, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (যেমন কম্পিউটার বা মোবাইল) থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা থাকতে হবে। এবং তৃতীয়ত, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট সময় থাকতে হবে। বিআইজিডির জরিপ অনুযায়ী, গ্রামীণ পরিবারগুলো তিনটি ক্ষেত্রেই পিছিয়ে রয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে রংপুর বিভাগ এবং এগিয়ে আছে চট্টগ্রাম।
অন্যদিকে ইন্টারনেট ব্যবহার ও দক্ষতা দুটোতেই পিছিয়ে আছে সিলেট বিভাগ। গ্রামে ইন্টারনেট সেবার প্রায় পুরোটাই এখনো মোবাইল ডেটানির্ভর। ফলে টেলিযোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ছাড়া গ্রামাঞ্চলের সব মানুষকে ইন্টারনেটের আওতায় আনা যাবে না।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও গ্রামাঞ্চলে জনগোষ্ঠীর বড় অংশের ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে বঞ্চিত থাকার কথা স্বীকার করেছেন এবং সমস্যার সমাধানে দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে ডিভাইস বাজারে আনার চেষ্টা আছে বলে জানিয়েছেন। মন্ত্রীর এ বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েও একটি কথা বলা প্রয়োজন যে বাংলাদেশে উদ্যোগ নেওয়া ও বাস্তবায়নের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক থাকে। এ ক্ষেত্রেও যেন তেমনটি না হয়।
বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট মানুষের জীবনযাপনের অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে কোভিড-১৯–এর কারণে মানুষের এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়া ও চলাচল সীমিত হয়ে পড়ায় ইন্টারনেটই হয়ে উঠেছে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। চিকিৎসা, পড়াশোনা, ব্যবসা–বাণিজ্যসহ জীবনযাপনের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যেখানে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নেই। গ্রামাঞ্চলে ‘কৃষকের জানালা’ কিংবা ‘ই-বালাইনাশক প্রেসক্রিপশন’সহ নানা পরামর্শের জন্যও ইন্টারনেট প্রয়োজন। কোভিড-১৯–এর কারণে গত মার্চ থেকে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমও অনলাইননির্ভর হয়ে পড়েছে। বিআইজিডির গবেষণায় দেখা গেছে, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীরা অন্যান্য বয়সের ব্যক্তিদের তুলনায় বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং এ বিষয়ে তাদের দক্ষতাও আছে। গ্রামাঞ্চলে নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ইন্টারনেট সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে থাকার বিষয়টি উৎসাহব্যঞ্জক।
তরুণেরা তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে সবার আগে নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সমাজের বয়স্কদেরও এর আওতায় আনতে হবে। বিশেষ করে ইন্টারনেট ব্যবহার করার দক্ষতা অর্জন করলে কৃষিজীবীরা সহজে তাঁদের চাষাবাদের উপকরণ সংগ্রহ করতে পারবেন এবং উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পাবেন।
সরকার সব খাতকে ডিজিটালাইজেশন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এটি সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় করবে। কিন্তু গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বড় অংশ যদি ইন্টারনেট ব্যবহারের বাইরে থাকে, তাহলে ডিজিটালাইজেশন কীভাবে হবে? গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট সেবার পরিধি ও মান বাড়াতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া ডিজিটালাইজেশনের সুফল পাওয়া যাবে না।

The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/tx6p
Notify of
guest
0 মন্তব্য
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Advertisements
সর্বশেষ
- Advertisements -
এ বিভাগে আরো দেখুন