সারা দেশেই নদনদীর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। উজান থেকে আসা পলির পাশাপাশি বর্ষায় ভূমিক্ষয়ের কারণে পলি জমে নদী দ্রুত ভরাট হচ্ছে। তার পাশাপাশি চলছে দখল, ভরাট, স্থাপনা নির্মাণ, বাঁধ দিয়ে প্রবাহ আটকে দেওয়া, রাস্তা নির্মাণ, মাছ চাষের ব্যবস্থা করাসহ আরো কত কী! গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ছোট যমুনা নদীটি এখন মৃতপ্রায়।
স্থানীয় প্রশাসন উপজেলার চক আলম গ্রামে নদীতে বালুমহাল ইজারা দেয়। ইজারাদার নদীর ওপর আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে প্রবাহ আটকে দিয়েছে। এর ফলে বাঁধের এক পাশে উপচে পড়ার মতো পানি থাকলেও অন্য পাশ পুরো শুকিয়ে গেছে। এখন সেখান থেকে খননযন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। এর ফলে এক পাশে বোরো জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মিষ্টি আলুসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। অন্য পাশে পানির অভাবে সেচ বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ প্রশাসন নির্বিকার।
উচ্চ আদালত থেকে নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করা হয়েছে। তার অর্থ নদী মেরে ফেলার যেকোনো অপচেষ্টা ঘোরতর অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। অথচ শুধু বদলগাছী উপজেলা নয়, সারা দেশেরই চিত্র এটি। কোথাও ইজারা নিয়ে, কোথাও ইজারা ছাড়াই চলে এ ধরনের কর্মকাণ্ড। বাঁধ দিয়ে নদী শুকিয়ে ফেলা হলে শুধু মাছ নয়, বহু ধরনের জলজ প্রাণীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
স্থানীয় লোকজন জানায়, নদীর এই অংশে বালু নেই বললেই চলে। তার পরও কেন এভাবে ইজারা দেওয়া হয় তা বোধগম্য নয়। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কিছুটা অবাক হয়েছেন নদীর গতিপথ বন্ধ করার কথা শুনে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে ইউএনওর সঙ্গে কথা বলতে হবে। আর জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, নদীর গতিপথ বন্ধ করা হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রশাসনের কর্মতৎপরতার প্রশংসা না করে পারা যায় কি?
নদী রক্ষায় সরাসরি দায়িত্ব পালন করে মূলত সরকারের তিনটি সংস্থা। এগুলো হলো পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) এবং জেলা প্রশাসন। এর ওপরে দেশের নদীব্যবস্থার ‘অভিভাবক’ হিসেবে কাজ করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।
প্রশ্ন আসে, এত কর্তৃপক্ষ থাকার পরও দেশের নদনদীর এমন করুণ অবস্থা কেন? এর কিছুটা জবাব পাওয়া যায় নওগাঁর ছোট যমুনার অবস্থা দেখে। বাঁধ দিয়ে নদী মেরে ফেলার উপক্রম হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কেউই বিষয়টি অবগত নন।
আমরা আশা করি, দেশের নদনদী রক্ষায় সরকার তথা সংশ্লিষ্টরা আরো সক্রিয় হবে। ছোট যমুনার ওপরে থাকা বাঁধ অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে। পাশাপাশি ইজারার নীতিমালা লঙ্ঘন এবং নদী হত্যার অপচেষ্টার দায়ে সংশ্লিষ্ট ইজারাদারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।