ঢাকা পৃথিবীর অন্যতম জনবহুল নগরী। যানজট এখানে নিত্যদিনের বিষয়। তার মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে কোনো সড়কে যখন বছরের পর বছর যান চলাচল ব্যাহত হয়, তখন মানুষের ভোগান্তির অন্ত থাকে না। আর সেই প্রকল্প যদি হয় বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) কিংবা তেমন কোনো প্রকল্প তখন তো কথাই নেই।
প্রায় এক দশক ধরে চলা এই প্রকল্পের কারণে উত্তরের জেলাগুলো থেকে ঢাকায় যাতায়াত করা মানুষের ভোগান্তির বহু সচিত্র প্রতিবেদন গণমাধ্যমে এসেছে। প্রশাসন থেকে বহুবার কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য তাগাদা দেওয়া হয়েছে। অথচ কাজ চলছে সেই পুরনো কচ্ছপের গতিতে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অকপটে স্বীকার করেছেন, এই প্রকল্পটি এখন সরকারের ‘গলার কাঁটা’ হয়ে উঠেছে।
দশকের পর দশক ধরে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে চলে আসছিল অসহনীয় যানজট। এটুকু রাস্তা পার হতে কয়েক ঘণ্টাও লেগে যেত। সেই অসহনীয় যানজট ও জনভোগান্তি কমানোর লক্ষ্যেই নেওয়া হয়েছিল বিআরটি প্রকল্প। ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে এর কাজ শুরু হয়। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বিশেষায়িত বাসের পথ তৈরির বিআরটি প্রকল্পের জন্য প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০৩৭.৮৫ কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় একটি চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে। কিন্তু কাজ চলতে থাকে অত্যন্ত ধীরগতিতে। তখন থেকেই সড়কে মানুষের ভোগান্তি আরো বহুগুণ বেড়ে যায়। এরপর দফায় দফায় ব্যয় ও কাজের মেয়াদ বাড়তে থাকে। সর্বশেষ ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪,২৬৮.৩৮ কোটি টাকা। সর্বশেষ কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল চলতি বছরের জুন পর্যন্ত। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ৭৮ শতাংশ। বাকি কাজ কবে শেষ হবে কেউ জানে না।
এর মধ্যে গত ১৫ আগস্ট উত্তরায় ক্রেন থেকে গার্ডার পড়ে গাড়িতে থাকা এক পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। তাতে গঠিত তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার জন্য চীনা প্রতিষ্ঠানটিকেই দায়ী করেছে। সেতুমন্ত্রী বলেছেন, এই চীনা কম্পানিকে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কাজ করতে দেওয়া হবে না।
উন্নয়নকাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ার কারণে মানুষ যেমন কাজটির সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়, তেমনি বছরের পর বছর চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। অন্যদিকে রাষ্ট্রকেও অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হয়। অথচ নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ না হওয়াটাই যেন বাংলাদেশে নিয়মিত বিষয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশকে অবশ্যই এই ক্ষতিকর আবর্ত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা চাই, বিআরটি প্রকল্পের কাজ দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা হোক।
The short URL of the present article is: https://www.nirapadnews.com/48ln