দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগী আনা-নেওয়ার জন্য যত অ্যাম্বুল্যান্স প্রয়োজন তার তুলনায় আছে অনেক কম। এসব অ্যাম্বুল্যান্সের বেশির ভাগই নষ্ট থাকে বা নষ্ট করে রাখা হয়। আর এই সুযোগটি নেয় অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের বাধ্য হয়েই এই সিন্ডিকেটের বাণিজ্যিক সেবা নিতে হয়।
এসব অ্যাম্বুল্যান্সের বেশির ভাগই আবার রাস্তায় চলাচলের উপযোগী নয়। দূরপাল্লার ভাড়ায় গিয়ে অনেক অ্যাম্বুল্যান্স নষ্ট হয়। তখন রোগী ও তার স্বজনদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আবার অদক্ষ চালক দিয়ে চালানো হয় এসব অ্যাম্বুল্যান্স।দুই সপ্তাহ আগে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ফরিদপুর অংশে দুর্ঘটনায় পড়ে একটি অ্যাম্বুল্যান্সে আগুন ধরে যায়। ঘটনাস্থলেই আগুনে পুড়ে পরিবারের ছয় সদস্যের মৃত্যু হয়। রোড সেফটি ফাউন্ডেশন জানাচ্ছে, প্রতিবছর যে পরিমাণ ব্যক্তিগত গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ছে তার চেয়ে বেশি দুর্ঘটনায় পড়ছে অ্যাম্বুল্যান্স। রোগীর জরুরি সেবার কাজে ব্যবহৃত হলেও অ্যাম্বুল্যান্স একটি বাণিজ্যিক পরিবহন।অথচ এই বাণিজ্যিক পরিবহনটির জন্য আলাদা নীতিমালা নেই। সড়ক পরিবহন বিধিমালায় অ্যাম্বুল্যান্সের কোনো সংজ্ঞা নেই। অনেকে মাইক্রোবাসকে অ্যাম্বুল্যান্স বানিয়ে নিচ্ছে। বিআরটিএর প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সারা দেশে নিবন্ধিত অ্যাম্বুল্যান্স আছে আট হাজার ২৮৭টি। বিআরটিএর নিবন্ধন ছাড়া চলছে চার হাজার ২১৩টি অ্যাম্বুল্যান্স।ঢাকা মহানগর অ্যাম্বুল্যান্স মালিক সমবায় সমিতির তথ্য মতে, বিভিন্ন সমিতির আওতায় দেশে প্রায় ১০ হাজার বৈধ অ্যাম্বুল্যান্স চলাচল করছে। এর বাইরে ব্যক্তিমালিকানাধীন আরো প্রায় দুই হাজার ৫০০টি অ্যাম্বুল্যান্স চলাচল করছে।অ্যাম্বুল্যান্সে বিকল্প চালকের সংখ্যা কম। কাজের নির্দিষ্ট কোনো শিডিউল নেই। সময়সীমা ছাড়াই চালকরা অ্যাম্বুল্যান্স চালাতে থাকেন। অ্যাম্বুল্যান্সচালকদের জন্য বিশেষ কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। একজন চালকের পাঁচ ঘণ্টার বেশি টানা গাড়ি চালানো যাবে না, এটা গবেষণায় প্রমাণিত। কিন্তু আমাদের দেশে চালকের কর্মঘণ্টা মানা হচ্ছে না।জীবন রক্ষার বাহন অ্যাম্বুল্যান্স প্রাণ কেড়ে নেওয়ার বাহনে পরিণত হয়েছে। অ্যাম্বুল্যান্স এখন জীবনের জন্য ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায়ই বড় বড় দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে এই বাহন।অ্যাম্বুল্যান্সের দুর্ঘটনা কমাতে হলে নীতিমালার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। অ্যাম্বুল্যান্সের নীতিমালা করা উচিত। অনেক অ্যাম্বুল্যান্সচালকের লাইসেন্সও নেই। আমরা আশা করব, অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য একটি নীতিমালা করা হবে। চালকদের দেওয়া হবে বিশেষ প্রশিক্ষণ।